নিয়োগ মামলার তদন্তে জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আরও জমি বাজেয়াপ্ত করল ইডি। ইডি সূত্রে খবর, কলকাতার পাটুলি, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুর, বীরভূমের বোলপুর সহ বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে তাঁর জমি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সম্পত্তি তারা বাজেয়াপ্ত করেছে, তা সরাসরি পার্থের নামে নয়। তবে এগুলি পার্থের বলেই তদন্তে জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বোলপুরেই অন্তত পাঁচটি সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। যার বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। জমি ছাড়াও একাধিক সংস্থার কাছ থেকে নগদ টাকা উদ্ধার করেছে ইডি। যা পার্থের বলে মনে করা হচ্ছে। নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র সঙ্গে এই জমি, সম্পত্তি এবং টাকার যোগ আছে বলেই ধারণা ইডির।
নিয়োগ মামলার তদন্তের শুরুর দিকেই পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে বীরভূমের বোলপুরে একটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছিল ইডি। সেই বাড়ির নাম ‘অপা’। সূত্রের খবর, কোনও সম্পত্তিই সরাসরি নিজের নামে রাখেননি পার্থ। সব নথিতেই তাঁর কোনও না কোনও ঘনিষ্ঠের নাম রয়েছে।
নিয়োগ মামলার তদন্তে নেমে ২০২২ সালে পার্থকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। সেই থেকে তিনি বন্দি। সে সময়ে পার্থের ‘বান্ধবী’ হিসাবে পরিচিত অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাট থেকে ২২ কোটির বেশি এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে ২৭ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার হয়। দুই ফ্ল্যাট থেকে বিদেশি মুদ্রা এবং সোনাও উদ্ধার করে ইডি। এই সমস্ত সম্পত্তি এবং সোনাদানা, ফ্ল্যাট-বাড়ি মিলিয়ে কম করে ৬০ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। যা আদতে অর্পিতার নামে থাকা পার্থের সম্পত্তি বলেই দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার।
সম্প্রতি পাটুলি, বোলপুর এবং বিষ্ণুপুর থেকে যে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হল, তাতে ৬০ কোটির অঙ্ক আরও বেড়ে গেল। এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় মোট ১৩৫ কোটি টাকার নগদ এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। রাজ্যে প্রাথমিক এবং নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র মামলায় বাজেয়াপ্ত হয়েছে মোট ৩৬৫.৬০ কোটির সম্পত্তি।
আঠারোতম লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে অনেক আগেই তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষনা করেছে। তবে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় এবার যথেষ্ট চমক রয়েছে। এবারে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে এমন সব প্রার্থী নির্বাচিত করেছে যারা শুধু রাজনীতির সাথেই যুক্ত নয় বরং সমাজের অন্যান্য বিভাগেও তাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এই জন্য সমাজের সাধারন স্তরের মানুষের কাছে বিজেপির গ্রহনযোগ্যতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য বঙ্গ বিজেপি এমনই একজন প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে যার নাম ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়। নতুন দিল্লিতে অবস্থিত ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা এসপিএমআরএফের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টি পদে রয়েছেন ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়।
এই এসপিএমআরএফ ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির সাথে যুক্ত। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী সংস্থার সদস্য এবং বঙ্গ বিজেপিরও গুরুত্বপূর্ন সদস্য তিনি। ২০১৯ সালে ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রচারাভিযানে তিনি মোদির জন্য বাংলা – বাংলার জন্য মোদি স্লোগান প্রচার করেন। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে তিনি আরও বেশী সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি লক্ষ্য সোনার বাংলা স্লোগান প্রচার করেন। ২০২১ সালে তিনি বোলপুর শান্তিনিকেতন কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হন। যে বোলপুরে একটা সময় বিজেপির মোট ছিল মাত্র ১৯০০০ সেখানেই তিনি ২০২১ সালে ৯৪,০০০ ভোট পান। অল্পসময়ে জনকল্যানকর কাজের জন্য তিনি বোলপুর বাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। যার জন্য ২০২৪ সালের আঠারোতম লোকসভা নির্বাচনেও বঙ্গ বিজেপি তার উপর ভরসা রেখেছে এবং যাদবপুরের মতো গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে মোনোনীত করেছে। তবে রাজনৈতিক কাজকর্ম ছাড়াও ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়ের অন্য আরকটি পরিচয় আছে যেটি সম্পর্কে অনেকেই জানেননা।
Dr. Anirban Gangopadhyay
ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায় একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। ভারতের রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবি মহলে একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম হয়েছে এমন একটি বিখ্যাত পরিবারে যেখানে রীতিমতো সাহিত্য চর্চা ও দেশাত্মবোধক কাজকর্ম হত। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রপিতামহ উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন বিপ্লবী এবং শ্রী অরবিন্দের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, অবিনাশ ভট্টাচার্য, হেমচন্দ্র কানুনগো সহ অন্যান্য বিখ্যাত বাঙালি বিপ্লবীদের সাথে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরোধীতা করেছিলেন। আলিপুর বোম্বা মামলায় অভিযুক্ত করে উপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়কে সেলুলার জেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশরা। বিপ্লবী কাজকর্মের পাশাপাশি ১৯২০-১৯৪০ এর দশকে বাংলার সাহিত্যেও একটি জনপ্রিয় নাম ছিল তার। উপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা নির্বাসিতের আত্মকথা বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ। পরবর্তীকালে তিনি হিন্দু মহাসভায় যোগদান করেন এবং ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠেন। এই জন্যই ডঃ গঙ্গোপাধ্যায়কে শিক্ষার জন্য পন্ডিচেরীতে শ্রী অরবিন্দ আশ্রমে পাঠানো হয়। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায়ের পিতামহ ছিলেন কবি দীনেশ গঙ্গোপাধ্যায় যিনি নিজের সময়ের একজন প্রখ্যাত বাঙালি কবি ছিলেন। সেসময় কবি দীনেশ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে কাজী নজরুল ইসলাম এবং বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়ের মতোন বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যার জন্য ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় এরকম ঐতিহ্যপূর্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়েছেন যার প্রভাব তার পরবর্তী জীবনেও পড়েছে। প্রথম জীবনে ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় পন্ডিচেরির শ্রী অরবিন্দ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অফ এডুকেশন থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন, যেখানে তিনি ভাষা, দর্শন, ইতিহাস এবং সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। ইংরেজি, ফরাসি, সংস্কৃত, বাংলা, তামিল, উড়িয়ার মতো একাধিক ভাষায় পারদর্শী ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর মাস্টার ডিগ্রি করেন। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতার উপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেন। পরবর্তীকালে তিনি শিক্ষায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পিএইচডিতে তার বিষয় ছিল জাতীয় শিক্ষার উপর শ্রী অরবিন্দের দর্শন। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায়ের কর্মজীবন শিক্ষা বৃত্তির সাথে রাজনৈতিক সক্রিয়তার মিশ্রন। তিনি বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন বা ভিআইএফে সভ্যতা, শাসন ও রাজনীতি সম্পর্কে গবেষনা করেছেন। এর জন্য তিনি উত্তরপূর্ব ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক কাজ করেন। কলেজ জীবনেই তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক বা আরএসএসে যুক্ত হন যা তার পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় বরাবরই ভারতের ইতিহাস, রাজনীতি ও সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। সভ্যতা ও ইতিহাস সম্পর্কে তার অসামান্য জ্ঞান রয়েছে বিশেষ করে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং প্রথমদিকের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তিনি বিশেষ চর্চা করেছেন। শিক্ষা এবং রাজনীতিতে তার ভূমিকা ছাড়াও, ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় বিভিন্ন সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনে সেন্ট্রাল অ্যাডভাইজরি বোর্ড অফ এডুকেশন (সিএবিই) এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিশন ফর কোঅপারেশন উইথ ইউনেস্কো (আইএনসিসিইউ) এর সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি অরোভিল ফাউন্ডেশন এবং বিশ্বভারতী সংসদের মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনাতেও যুক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি নেহেরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও লাইব্রেরি, ভারত সরকারের সংস্কৃত মন্ত্রকের একজন সদস্য। ২০১৩ সালে ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ফাউন্ডেশনের পরিচালক নিযুক্ত হন। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায়ের দক্ষ নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের প্রথমসারির একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। রাজনীতিবিদের পাশাপাশি ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় একজন বিশিষ্ট লেখক এবং পণ্ডিত। তিনি রাজনীতি, শিক্ষা থেকে পররাষ্ট্রনীতি পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের উপর বেশ কিছু বই লিখেছেন, সম্পাদনা করেছেন বা সহ-সম্পাদনা করেছেন। মোদী ২.০ : এ রিসলভ টু সিকিউর ইন্ডিয়া, অমিত শাহ এন্ড দি মার্চ অফ বিজেপি, মোদী ডক্ট্রিন, স্বামী বিবেকানন্দ, বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম, বিতর্ক সংস্কৃতি, শিক্ষা: দর্শন ও অনুশীলনের মতোন উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন তিনি। এই সমস্ত বই যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে এবং নিজ নিজ বিভাগে বেস্টসেলারও হয়েছে। এছাড়াও তিনি সভ্যতার সমস্যা, রাজনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে অনেক কাগজ, অধ্যায় লিখেছেন। এসপিএমআরএফের এর পরিচালক হিসাবে ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই সংস্থাটি রাজনৈতিক দলের সহাকারী সংস্থা হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ চল্লিশটি সংস্থার মধ্যে এসেছে। বছরের পর বছর ধরে তার যোগ্য নেতৃত্বে ফাউন্ডেশনটি তার কার্যক্রম প্রসারিত করেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিপুল সংখ্যক শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা সক্রিয় ভাবে সংস্থাটিতে অংশগ্রহন করেছে। আদর্শগত ও রাজনৈতিক সমস্যা থেকে শুরু করে জননীতি, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নদী পর্যন্ত এসপিএমআরএফ একাধিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। ডঃ গঙ্গোপাধ্যায় ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর কৃতিত্বকে ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায় রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, জাপান, মঙ্গোলিয়া, চীন, তাইওয়ান, স্পেন সহ বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন বৈঠকে ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি বিজেপির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
দক্ষিন কলকাতার অতি গুরুত্বপূর্ন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে এবার ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে বিজেপি, তৃনমূল ও সিপিআইএমের মধ্যে। বরাবরই বামেদের শক্ত ঘাঁটি এই যাদবপুর। ১৯৭৭ সালে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র তৈরি হওয়ার পর সিপিএমের সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় যাদবপুরের প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে সোমানাথ চট্টোপাধ্যায়কে নির্বাচনে পরাজিত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তারপরেও যাদবপুরে সিপিএমের একটা বড় অংশের ভোটার রয়েছে। গত চারদশকে যাদবপুর কেন্দ্রে সিপিআইএম, তৃনমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের সাংসদ রয়েছে যার জন্য যাদবপুরকে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন লোকসভা কেন্দ্রগুলোর একটি বলা হয়।
সোনারপুর দক্ষিন, সোনারপুর উত্তর, বারুইপুর পূর্ব, বারুইপুর পশ্চিম, ভাঙড়, যাদবপুর এবং টালিগঞ্জ এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রের ছয়টি বিধানসভাতেই তৃনমূল কংগ্রেস জয়লাভ করে কিন্ত ভাঙড়ে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ জয়লাভ করে। এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত তিনটিতে মুসলিম ভোটের প্রাধান্য রয়েছে। বিজেপি প্রার্থী ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এবার যাদবপুর কেন্দ্রে তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী সায়নী ঘোষ। ২০১৯ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে জয়লাভ করেছিল তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী যদিও এবার তাকে প্রার্থী করা হয়নি। তবে এবার যাদবপুরে নির্বাচনে জেতার সম্ভবনা রয়েছে ডঃ অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়ের। যার প্রধান কারন অতীতে সায়নী ঘোষের হিন্দু আরাধ্য দেবতা ভগবান শিবকে নিয়ে অশালীন মন্তব্যের কারনে হিন্দু ভোটের একটি বড় অংশ হারাবে সায়নী ঘোষ এমনটাই মত ওয়াকিবহল মহলের। যাদবপুর কেন্দ্রে বাম ভোটের একটি বড় অংশ বিজেপিতে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাছাড়া আইএসএফও যাদবপুর কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ায় ভাঙড় সহ তিনটি কেন্দ্রের তৃনমূলের মুসলিম ভোটের একটি বড় অংশ আইএসএফ পেয়ে যাবে। যার জন্য ভোট কাটাকাটির এই খেলায় বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে মত একাধিক বিশেষজ্ঞদের।
বাংলাহান্ট ডেস্কঃ প্রকৃতি এতটা রহস্যময় যে মানুষের সাধ্য নেই তাকে সম্পূর্ন বোঝার। প্রতিনিয়ত কত যে রহস্যময় ঘটনা ঘটে চলেছে তার কারন অনুসন্ধান করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। প্রকৃতি যেমন মানুষকে জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপকরন দেয় ঠিক এখানে পদে পদে মৃত্যুও অপেক্ষা করে রয়েছে। কত রকমের বিষাক্ত জীব, হিংস্র পশু থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিনিয়তই কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। হয়ত প্রকৃতির রহস্য কোনওদিনও সম্পূর্ন ভাবে ব্যাখা করতে পারবে না মানুষ। যেমন রাশিয়ার একদল পর্বতারোহীর সাথে যা হয়েছে তা আজও ব্যাখা করা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনা ডিয়াটলোভ পাস রহস্য নামে পরিচিত। রাশিয়ার তীব্র ঠান্ডায় জঙ্গলে এই পর্বতারোহী দলের সাথে ঠিক কী হয়েছিল তা আজও রহস্যময়।
আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে সেখানে ঠিক কী হয়েছিল তা আজও অধরা।
সালটা ১৯৫৯, রাশিয়ার উরাল পলিটেকনিক কলেজের দশজন বিদ্যার্থী ঠিক করে কোথাও ভ্রমনে যাবে। তারা ওরাল পর্বতে অভিযান করবে ঠিক করে। ২৫০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত ওরাল পর্বত এশিয়াকে ইউরোপ থেকে আলাদা করে। এই পুরো দলের নেতা ছিল ইগর ডিয়াটলোভ নামে ২৩ বছর বয়সী যুবক যে নিজেকে পর্বতারোহনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ বলে দাবি করতো। রাশিয়ার ভয়ানক ঠান্ডায় সে এর আগেও বহুবার পর্বতারোহন করেছিল যার কারনে সবাই তাকে ভরসা করতো। দলের বাকী সদস্যরাও পর্বতারোহনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ছিল তারা গ্রেড ২ বিভাগের ছিল। এই অভিযান সম্পন্ন হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার তাদের গ্রেড ৩ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করতো যা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে সবচেয়ে অভিজ্ঞ শ্রেনীর সম্মান বলা হত। ৩০০ কিলোমিটার পর্বতারোহন করলে তাকে গ্রেড ৩ শ্রেনীর সম্মান দেওয়া হত।
প্রথমে দশজন সদস্যের একটি দল অভিযানে যাবে ঠিক করেছিল যাতে আটজন পুরুষ ও দুই জন মহিলা ছিল কিন্ত শারীরিক সমস্যার কারনে পরে একজন না যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৫৯ সালের ৮ জানুয়ারি সেভারডলোভস্ক শহরের কর্তৃপক্ষ এই দলকে উরাল পর্বত অভিযানের ছাড়পত্র দেয়। এই দলের লক্ষ্য ছিল উত্তর উরাল পর্বতের অন্তর্গত ওটোরটেন পর্বতে অভিযান করা। পুরো তিন সপ্তাহ লাগবে এই পুরো অভিযান সম্পন্ন হতে, এরকমই ঠিক ছিল। ২৫ জানুয়ারি সেই দলটি ট্রেনে করে ইভদিলে এসে পৌঁছায়। এখান থেকে গাড়িতে করে ভিজহাই যায় তারা। ওটোরটেন পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ভিজহাই শেষ জনপদ। ভিজহাই এর পরবর্তী এলাকাকে রাশিয়াতে মৃত্যু উপত্যকা বলা হত কারন এরপরে আর কোন জনবসতি নেই৷ মাঝে মাঝে কিছু যাযাবর মানুষ থাকে এখানে, যাদের সাথে সভ্য সমাজের কোন সম্পর্ক ছিলনা। ২৭ জানুয়ারি সকালে তারা অভিযান শুরু করে কিন্তু ২৮ জানুয়ারি ইওরি ইওডিন নামে একজন সদস্য শারীরিক সমস্যার কারনে ভিজহাইএ ফিরে যায়। ৩১ জানুয়ারি দলটি ওটোরটেন পর্বতের একদম নীচে একটি জঙ্গলে এসে উপস্থিত হয়, এখান থেকেই পর্বতে ওঠার অভিযান শুরু হয়। পরের দিন তারা অভিযান শুরু করে কিন্তু তীব্র তুষার ঝড় ও খারাপ আবহওয়ার কারনে তারা পথ হারিয়ে ফেলে এবং পর্বতের অন্যপ্রান্ত খোলাত শাখহালের দিকে চলে যায় খানিকটা। রাশিয়ান ভাষায় খোলাত শখহালের অর্থ মৃত পর্বত। যখন তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে ততক্ষনে তারা অন্তত দেড় কিলোমিটার এগিয়ে চলে এসেছিল। সেখানেই রাত্রিবাস করবে ঠিক করে। ইগর ডিয়াটলোভ কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এসেছিল পুরো তিন সপ্তাহের মধ্যেই মিশন শেষ হবে এবং তারা পর্বত থেকে ভিজহাই এ ফিরে এসে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে টেলিগ্রাম করবে। কিন্ত তিন সপ্তাহের বেশী অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরও কোন টেলিগ্রাম আসেনি। বাধ্য হয়ে সমস্ত সদস্যর বাড়ির লোকজন ২০ ফেব্রুয়ারী পুলিশকে জানায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে উদ্ধারকার্য শুরু করে। ২৬ ফেব্রুয়ারী একটি হেলিকপ্টার খোলাত শাখায়েলে সেই দলটির তাঁবু খুজে পায়। তাঁবুটি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত ছিল এবং বরফে প্রায় ঢেকেছিল। তাঁবুটা ভিতর থেকে কেউ যেন কেটে দিয়েছিল। তাঁবুতে নয় জোড়া জুতো এবং সেই দলটির ব্যাবহারযোগ্য সব জিনিস রাখা ছিল। অনুসন্ধান কারী দল এটা দেখে অবাক হয়ে যায় যে এই তীব্র ঠান্ডায় জুতো গুলো রাখা কেন? যার অর্থ সেই দলের সদস্যরা খালি পড়ে অথবা মোজা পড়ে অভিযানে গেছে যা এই তীব্র ঠান্ডায় অসম্ভব। আরও অদ্ভুত ব্যাপার দেখা যায় যে সেই দলটির পায়ের ছাপ ক্রমশ নীচের দিকে জঙ্গলের দিকে গেছে অর্থাৎ তারা পর্বতারোহন না করে কোনও অজানা কারনে যেন জঙ্গলের দিকে গেছে। মোটামুটি পাঁচশো মিটার পর তাদের পায়ের ছাপ বরফে ঢাকা পড়ে গেছে। উরাল পর্বতে মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কোন সুস্থ মানুষ খালি পায়ে যাবেনা, এর অর্থ একটাই যে এমন কিছু হয়েছিল যে সেই দলটি তাঁবু ছেড়ে জুতো পড়বারও সময় পায়নি দৌড়ে নীচে নেমে গেছে। উদ্ধারকারী দল যখন পায়ের ছাপ অনুসরন করে জঙ্গলের কাছে পৌঁছায় তারা দেখে দুটো প্রায় নগ্ন মৃতদেহ পড়ে আছে। এই দুজন ওই পর্বতারোহী দলেরই সদস্য ছিল। ওই দুই ব্যাক্তির পা এবং হাত জ্বলে গিয়েছিল এবং একজনের মুখে তারই একটি কাটা আঙুল ছিল। তাদের শরীরে পোষাক গেল কোথায় এটাও অবাক করার মত বিষয়। এরপর তিনমাস ধরে অনুসন্ধান চালানোর পর বাকী সদস্যদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রথম পাঁচজনের মৃতদেহ পাবার পর উদ্ধারকারী দলের মনে হয়েছিল এরা বোধহয় হাইোথার্মিয়ার কারনে মারা গেছে কারন অতিরিক্ত ঠান্ডায় হাইপোথার্মিয়া হয় মানুষের। কিন্তু শেষ চারজনের মৃতদেহ পাবার পর এই ধারনা বদলাতে বাধ্য হয় সবাই কারন শেষ চারজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মাথার খুলি ভেঙে গিয়েছিল, শরীরের ভিতর হাড় ভেঙে গিয়েছিল। কারও দুটি চোখই ছিলনা, কারও জিভ, ভ্রু, ঠোঁটের অংশ কিছুই ছিলনা। তাদের শীরর এমনভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল দেখে মনে হচ্ছিল কোন বড় গাড়ি দুর্ঘটনা হয়োছে। তাদের পোষাক পর্যন্ত অদ্ভুত রকমের হয়ে গিয়েছিল। যদি ঠান্ডার কারনেই তারা মারা গিয়ে থাকে তাহলে তাদের অনেকের শরীরে পোষাক নেই কেন, শরীরে এত আঘাত কেন!! এসবই ভাবছিল উদ্ধারকারী দল। সোভিয়েত ইউনিয়ন পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রথমে সন্দেহ করা হয় স্থানীয় মানসি উপজাতির যাযাবর মানুষেররা বোধ হয় তাদের হত্যা করেছে কিন্তু মানসিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা নির্দোষ প্রমানিত হয়। মে মাসে এই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় বলা হয় প্রাকৃতিক কারনে তাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের তদন্ত ফাইল গোপন জায়গায় রাখা হয়।
রহস্যময় ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু গুজব সবসময় ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও তাই হয়। একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে ওটোরটেন পর্বতে থাকা বিগ ফুট বা ইয়েতি এদের হত্যা করেছে। কিন্তু এই সম্ভবনা বাতিল করে দেওয়া হয় কারন যদি ইয়েতিই এই কাজ করত তাহলে তার পায়ের ছাপ পাওয়া যেত কিন্তু এখানে শুধুমাত্র ওই নয়জনেরই পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। আরও একটি খবর প্রচলিত হয়যে এদের এলিয়েন হত্যা করেছে কারন সেসময় আকাশে উজ্জ্বল আলো দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এই সম্ভবনাও বাতিল হয়ে যায় কারন আকাশে যে উজ্জ্বল আলোর কথা বলা হচ্ছিল তা আসে মেরুজ্যোতি বা আরোরা যা উত্তর মেরু সহ এই অঞ্চলে দেখা যায়।
সেসময় আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল, দুই দেশই অনেক গোপন প্রজেক্টে কাজ করছিল। এখানে নয় ব্যাক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নেরই কোন গোপন প্রজেক্টের শিকার হয়েছে বলেও কথা ওঠে। কেউ কেউ দাবি করে এই নয় ব্যাক্তি তেজস্ক্রিয়তা ও প্যারাসুট মাইনের শিকার হয়েছে। কিন্তু এই সব তথ্যও বাতিল হয়ে যায় কারন তেজস্ক্রিয়তায় গোটা শরীর জ্বলে যাওয়ার কথা। সেসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন প্যারাসুটের করে বোম্ব ফেলে পরীক্ষা করছিল। কিন্তু যদি মাইন ফেটে থাকে তাহলে মৃতদেহ টুকরো টুকরো হয়ে যাবার কথা। কিন্তু মৃতদেহ গুলো মোটামুটি অক্ষতই ছিল, শুধু শরীরে পোষাক ছিলনা তেমন। তাদের শরীরে বাইরে থেকে আঘাতের কোন চিহ্ন ছিলনা বরং শরীরের ভিতর অনেক হাড় ভেঙে গিয়েছিল।
২০১৯ সালে এই ঘটনার বন্ধ হয়ে যাওয়া ফাইল পুনরায় খোলা হয় এবং আবার তদন্ত শুরু হয়। তাদের শরীরে পোষাক না থাকার কারন হিসাবে বলা হয় অতিরিক্ত ঠান্ডার কারনে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় এর কারন প্যারাডক্সিয়াল আনড্রেসিং রোগ। যার কারনে কোন মানুষ তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও প্রচুর গরম অনুভব করে এবং সে তার পোষাক খুলে ফেলে দেয়।
২০২০ সালে রাশিয়ার সরকার জানায় ডিয়াটলোভ পাসের ঘটনা ঘটে তুষার ধসের কারনে। কিন্তু রাশিয়ান সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনেক দেশই বাতিল করে দিয়েছে কারন তুষার ধ্বসে কারও মৃত্যু হলে সে পোষাক খোলবার সময় পাবে না এবং তুষার ধ্বস হলে মৃতদেহ গুলো বরফের তলায় থাকতো এবং তাদের তাঁবুও বরফে ঢাকা থাকত। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে উদ্ধারকারী দল তাঁবু ও মৃতদেহ খুজে পেয়েছিল সেখানে হালকা বরফ ছিল শুধুমাত্র। তুষারধ্বসে আসা বরফ দুই সপ্তাহে গলে যাবে না!! সবথেকে বড় কথা ১৯৫৯ সালের আগে থেকে এখনও অবধি ওই অঞ্চলে তুষারধ্বসের কোনও প্রমান পাওয়া যায় নি। ডিয়াটলোভ পাসে আসলে কী ঘটেছিল তা হয়ত রহস্যময় ঘটনা হিসাবেই থেকে যাবে।
বর্তমান সময়ে পাব এই শব্দটির সাথে সুপরিচিত শহরতলীর মানুষজনেরা। ‘পাবলিক হাউস’ যাকে সংক্ষেপে বলা হয় পাব। তবে এই পাব শব্দটির উৎপত্তি থেকে শুরু করে বর্তমান দিনের পাব কালচারের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, কারন উৎপত্তির সময় এর সংজ্ঞা অন্যরকম ছিল এবং বর্তমান দিনে এর অর্থ অন্য।
শব্দটি প্রথম ১৭ শতকের শেষের দিকে আবির্ভূত হয়েছিল। যার প্রাঙ্গনে মদ্যপানের জন্য মদ্যপ পানীয় পরিবেশনের লাইসেন্স দেওয়া হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় ভারতেরও দিকে দিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই পাবের সংখ্যা।
আনুমানিক ৮০০ এর বেশি অ্যালকোহল পরিবেশনকারী পাব এবং ক্লাব রয়েছে ভারতে। ভারতে এটি শুরু হয়েছিল মুম্বাইয়ের পাতিয়ালা পেগ থেকে।
এটির সবচেয়ে সুপরিচিত স্থাপনা গুলির মধ্যে একটি, যেখানে প্রাচীনতম পাব থাকার পাশাপাশি এই স্থানটির আরেকটি বিশেষত্ব রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানেই ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজনের বিষয়ে গান্ধী, নেহেরু, জিন্নাহ এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন একমত হয়েছিলেন (যদিও এই পাবটির স্থান নিয়ে দ্বিমত রয়েছে)।
শুধু মুম্বাই নয় আরও অনেক ভারতেবর্ষের অনেক শহরে রয়েছে এই পাব সংস্কৃতি, বর্তমান দিনে উপার্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এই পাব কালচার। একটা সময় পাবে মানুষ সন্ধ্যবেলা শান্তির কারনে যেতেন হাল্কা পানীয়ের সাথে মন ভালো করতে, তবে বর্তমান দিনে এর সংজ্ঞা অনেকটাই বদলেছে। এখন শুধু পানীয় নয় সাথে মিউজিক এবং নাচের ব্যাপারটিও লক্ষ্য করা যায়।
ব্রিটেনে প্রদর্শিত প্রথম পাব গুলি ছিল আসলে রোমান সরাইখানা, যেখানে পরিবেশন করা হয়েছিল অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং খাওয়ার। পরবর্তীকালে, এই সমস্ত সরাইখানা গুলিকে লাইসেন্স দেওয়া হয় এবং তাদের কক্ষে ভ্রমণকারী অতিথিদের রাখার বিষয়ে সেই সময় সরাই হিসাবে এই গুলি পরিচিত ছিল। গ্রামাঞ্চলে বা মহাসড়কের পাশে হোটেল গুলি অবস্থিত হওয়ার প্রবণতা ছিল, যেখানে সরাইখানা গুলি সাধারণত গ্রাম এবং শহর কেন্দ্রীক হয়ে ওঠে।
আলেহাউসের এই ধারণাটি নিয়ে এসেছিল অ্যাংলো-স্যাক্সনরা, যারা ইংল্যান্ডে পঞ্চম শতাব্দীর পর থেকে বসবাস করেছিল। এই গুলি ছিল সরাইখানার তুলনায় কিছুটা কম পরিশীলিত, তবে এখানে একই রকম পানীয়ের সুবিধা প্রদান করা হত।
প্রথম দিকের আলিহাউসগুলি থেকে অনেক আলাদা হতে পারে আধুনিক পাব কালচার। এই পাব কালচার মূলত শিল্প বিপ্লবের আগমনের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা ১৯ শতকের মধ্যে বিয়ারের উৎপাদন সম্ভাবনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করাকে সাহায্য করে, এবং সময়ের সাথে বিয়ার-প্রেমী জনসংখ্যাও একই হারে বৃদ্ধি পায়।
এটি ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শত শত উদ্দেশ্য-নির্মিত পাবের জন্ম দেয়। সেই সময় থেকে শুরু করে বর্তমান দিনে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাব। আর সেই তালিকা থেকে বাদ নেই ভারতের নামও। ভারতবর্ষেরও বিভিন্ন জায়গা বৃদ্ধি পেয়েছে পাবের সংখ্যা। সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতার নামও। কলকাতায় সূরা প্রেমী মানুষদের কাছে পাব একটি ভালবাসার জায়গা। বিশেষ করে সপ্তাহের শেষে মন ভালো করতে আজকাল পাবে ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন বয়েসের মানুষেরা। সুদূর ব্রিটেনে এই পাব বিষয়টি শুরু হলেও বর্তমান দিনে ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে এই সংস্কৃতি মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। ভারতবর্ষের মেট্রোপলিটান শহর গুলিতে পাবে ভিড় জমাচ্ছে প্রচুর মানুষ। বিভিন্ন শহরে আবার সেখানকার সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে বর্তমান দিনের পাব গুলি। যেমন কলকাতা শহরে বাঙালিদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে DESTINATION 16। পাবের কর্ণধার বিশ্বজিৎ ঘোষ এর কথায় “ আমরা বাঙালি এবং আমাদের সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া বিশেষভাবে দরকার, সুদূর ব্রিটেনে এই পাব সংস্কৃতি শুরু হলেও আজকাল পৃথিবীর প্রচুর দেশে এই সংস্কৃতি দেখা যায়, আর সেই কারনেই কলকাতার মানুষের অর্থাৎ বাঙ্গালীদের কথা মাথায় রেখে আমাদের পাবে বাঙালি সংস্কৃতির উপর নজর রেখে কিছু ইন্টেরিয়ার ডেকোরেশান করা হয়েছে”। বিশেষ করে বাঙালি যেহেতু আনন্দ করতে ভালোবাসে তাই উল্লাস বলে আলাদা করে একটি জায়গা রাখার পাশাপাশি কলকাতার বনেদি আনার ছাপ ফুটিয়ে তুলেছে এই পাবটির দেওয়ালে আঁকা হাতে টানা রিক্সা এবং হলুদ ট্যাক্সির ছবি।
মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরব পক্ষের দিকে তাকিয়ে অর্জুনের মন ব্যাথিত হয়ে পড়ে কারন সেখানে তার আত্মীয়স্বজনরা ছিল যার কারনে অর্জুন যুদ্ধ করবেনা মনস্থিরন করেন, তখনই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মানব জীবন এবং নীতি সম্পর্কে উপদেশ দেন যা ভগবত গীতা নামে প্রসিদ্ধ।
সম্প্রতি ক্রিস্টোফার নোলানের বিখ্যাত সিনেমা ওপেনহাইমারে ভগবত গীতার এগারো অধ্যায়ের বত্রিশতম শ্লোক ” কালোহস্মি লোকক্ষয়কৃত প্রবৃদ্ধো ” বলা হয়েছে যার অর্থ এখন আমি কাল হয়ে উঠছি যে সংহার করবে। অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বুঝিয়েছেন জগৎ-এ যখনই অধর্ম, পাপ বৃদ্ধি পায় তখনই তিনি কালের রূপ ধারন করে অধর্মীদের বিনাশ করেন। এর মাধ্যমে তিনি অর্জুনকে মনের দুঃখ ভুলে অধর্মীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উজ্জীবিত করেছেন। .
আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডঃ ওপেনহাইমার ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই ট্রিনিটি টেস্টের সময় বিশ্বের প্রথম পারমানবিক পরীক্ষার সময় এই শ্লোকেরই উচারন করেছিলেন।
বিখ্যাত পদার্থবিদ ও পারমানবিক বোম্বের জনক ডঃ রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবনে ভগবত গীতার উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল। একজন ইহুদি হয়েও ডঃ ওপেনহাইমারের ভারতীয় দর্শন ও ভগবত গীতার প্রতি আগ্রহ ছিল যার কারনে তিনি আর্থার রাইডারের কাছে সংস্কৃত শিখেছিলেন যাতে ভগবত গীতা সংস্কৃততে পড়তে পারেন। তিনি গীতার উপর এতটাই বিশ্বাস করতেন যে তিনি তাঁর সাথে সবসময় একটি গীতা রাখতেন এবং তার বন্ধুদেরও গীতা পড়ার কথা বলতেন। আমেরিকার ৩২ তম রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের অন্তেষ্টিক্রিয়ার সময়েও তিনি ভগবত গীতার সতেরো অধ্যায়ের তিন নম্বর শ্লোক পড়েছিলেন। ” সত্ত্বানুরূপা সর্বস্য শ্রদ্ধা ভবতি ভারত, শ্রদ্ধাময়োহয়ং পুরুষো যো যচ্ছ্রদ্ধঃ স এব সঃ ” — যার অর্থ হে ভারত! সবার শ্রদ্ধা নিজ নিজ মনের অনুরূপ হয়। যে যেরকম গুনের অধিকারী সে সেই রকম শ্রদ্ধাবান।
শুধু ডঃ রবার্ট ওপেনহাইমারই নয় ভগবত গীতা এমন অনেক পশ্চিমা মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে যাদের মধ্যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন থেকে শুরু করে হেনরি ডেভিড থোরেউ, লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস, অ্যানি বেসান্তের মতো বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব রয়েছে। ভগবত গীতা কোটি কোটি মানুষের জীবন দর্শন বদলে দিয়েছে।
হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে মহান গ্রন্থ বলা হয় সাতশো শ্লোক বিশিষ্ট ভগবত গীতাকে। চার বেদ, উপনিষদ সহ সমস্ত হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থের সার বলা হয় গীতাকে। তবে ভগবত গীতা শুধু ধর্ম গ্রন্থ নয় বরং এটি মানব জীবনে কী করে পরিপূর্ন করা যায় তা নির্দেশ করে। যার কারনে কোটি কোটি মানুষ ভগবত গীতা পড়েন। কুরুক্ষেত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া এই জ্ঞান আজ ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এখনও অবধি আশির বেশী ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে ভগবত গীতাকে যার মধ্যে ৬৫ টি বিদেশী ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। বিদেশীরা নিজ থেকেই গীতার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে কারন গীতার মধ্যে মানব জীবন যথার্থ ভাবে পালন করার উপদেশ দেওয়া রয়েছে। যার কারনে এই মহান গ্রন্থ আজ সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ হয়েছে। বলা হয় গীতার উপদেশে বিশ্বের সমস্ত সমস্যার সমাধান রয়েছে। যোগের মতোন গীতার জ্ঞান মানুষের জীবনকে সত্য ও জ্ঞানের প্রকাশে আলোকিত করে।
পশ্চিমা বিশ্বে গীতার প্রসার শুরু হয়েছিল ইন্ডোলজির জনক স্যার উইলিয়াম জোনসের এশিয়াটিক সোসাইটির মাধ্যমে। ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা করেন স্যার উইলিয়াম জোনস। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল এশিয়ার সাহিত্যের প্রসার ঘটানো। এই সোসাইটি প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যকে জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে সংযুক্ত করেছিলো।
স্যার উইলিয়াম জোনস এশিয়াটিক রিসার্চারস নামে একটি জার্নালের মাধ্যমে এশিয়ার সাহিত্য ও দর্শন পশ্চিমে প্রকাশ করতেন। এই ভাবেই পশ্চিমে ভারতীয় সংস্কৃত ভাষার প্রসার ঘটে। এশিয়াটিক সোসাইটির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল ভগবত গীতাকে পশ্চিমা দেশ গুলোতে প্রকাশ করা। স্যার চার্লস উইলকিন্স প্রথম ব্যক্তি যিনি ভগবত গীতার প্রথম ইংরেজি অনুকরন প্রকাশ করেন। স্যার চার্লসকে সংস্কৃত শেখবার জন্য বেনারসে পাঠিয়েছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটির তরফে ওয়ারেন হেস্টিংস। বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন এই ওয়ারেন হেস্টিংস। তিনি বিশ্বাস করতেন যদি ভগবত গীতার উদ্দেশ্যকে যদি সঠিকভাবে পালন করা যায় তাহলে মানব সমাজে সুখ ও সমৃদ্ধি বজায় থাকবে।
১৭৮৫ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস এর অনুরোধে ভগবত গীতা ইংরেজিতে প্রকাশ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেসময় ভগবত গীতার ভূূমিকা ওয়ারেন হেস্টিংস নিজে লিখেছিলেন। ১৭৮৭ সালে জেপি পরোড নামে এক ফরাসী সাহিত্যিক ভগবত গীতাকে ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন এবং পরে জার্মান, স্প্যানিশ, রাশিয়ান সহ অনেক ভাষায় প্রকাশ করা হয়। ভগবত গীতা বিশ্বের মহান বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, কবি, বুদ্ধিজীবিদের শুধু প্রভাবিতই করেনি তাদের জীবনও বদলে দেয়।
পদার্থবিদ্যার কথা এলেই প্রথমেই মাথায় আসে স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যাঁর সমতুল্য বৈজ্ঞানিক বিশ্বে কেউ নেই। ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ জার্মানিতে জন্ম হওয়া স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বিখ্যাত পদার্থবিদ্যায় অসামান্য অবদানের কারনে বিশেষ করে তার আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বের জন্য। আইনস্টাইন ইশ্বররের অস্তিত্বে তেমন বিশ্বাস করতেননা কিন্তু ভারতীয় হিন্দু দর্শন তিনি পড়তেন৷ বলা হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তাঁর চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল। ১৯৩০ সালে স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যে সাক্ষাৎ হয় এবং উভয়ে আইনস্টাইনের বার্লিনের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এই সাক্ষাৎকার সেসময় আমেরিকার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশ করা হয়েছিলো। বলা হয় এই সাক্ষাৎকারের পরেই ভারতীয় হিন্দু দর্শনশাস্ত্রের উপর আইনস্টাইন আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং তিনি ভগবত গীতা পড়েন।
আমেরিকার বিখ্যাত কবি ও দার্শনিক হলেন হেনরি ডেভিড থোরিউ। ওয়ালডেন নামক বইয়ের জন্য তিনি পরিচিতি নামে যাতে তিনি প্রকৃতির মধ্যে সাধারন জীবনযাপন সম্পর্কে লিখেছিলেন। তাঁর লেখায় প্রভাবিত ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি, রাশিয়ার বিখ্যাত লেখক লিও টলস্টয়ের মতোন বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ। থরিও ভারতীয় দর্শন ও ভগবত গীতায় এতই প্রভাবিত ছিলেন যে তাঁর বই ওয়ালডনে গীতার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। রালফ ওয়ালডো এমারসন একজন বিখ্যাত আমেরিকান সাহিত্যিক ছিলেন। যিনি ১৮২০-৩০ এর দিকে আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ড প্রদেশে তাঁর কাজকর্মের জন্য বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর জীবনে ভগবত গীতার বড় প্রভাব ছিল। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক থমাস কার্লসওয়েল রালফ এমারসনকে ভগবত গীতা উপহার দিয়েছিলেন। আজও বোস্টনে এমারসনের সেই গীতা সংরক্ষন করে রাখা আছে।
উনিশ শতকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ছিলেন নিকোলা টেসলা যিনি প্রথম এসি মোটর ডিজাইন করেন। নিকোলা টেসলা স্বামী বিবেকানন্দের উপর খুবই প্রভাবিত ছিলেন। ১৮৯৬ সালে ফ্রানসের অভিনয় শিল্পী সারা বার্নহার্ডটের মধ্যস্ততায় উভয়ের মধ্যে দীর্ঘক্ষন আলোচনা হয় এবং সেখানে নিকোলা টেসলা স্বামী বিবেকানন্দের কাছে বৈদিক জ্ঞান শুনে খুবই অনুপ্রানিত হয়েছিলেন। নিকোলা টেসলা এরপরে ভারতীয় হিন্দু দর্শনে এতটাই প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি সংস্কৃত ভাষায় ভগবত গীতা পড়েন। সুনীতা উইলিয়ামস প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী যিনি মহাকাশে সবচেয়ে বেশী থাকার রেকর্ড করেছেন। দুটি মহাকাশ মিশনে তিনি মহাকাশে ৩২১ দিন ১৭ ঘন্টা ১৫ মিনিট থেকেছেন। ৫০ ঘন্টা ৪০ মিনিটের সবচেয়ে বেশী স্পেস ওয়াকের রেকর্ডও রয়েছে তার।
সুনীতা উইলিয়ামস মহাকাশ মিশনে তার সাথে একটি ভগবত গীতা ও গনেশজীর একটি মূর্তি নিয়ে গিয়েছিলেন। ভগবত গীতা জোসেফ স্টালিনের মতোন নিষ্ঠুর শাসককেও প্রভাবিত করেছিল।
১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন ডঃ এস রাধাকৃষ্ণন। সেসময় স্টালিনকে প্রায়ই ভগবত গীতা শোনাতেন তিনি। স্টালিন তাকে প্রফেসর বলে ডাকতেন। ডঃ রাধাকৃষ্ণন ভারতে ফিরে আসার সময় স্টালিন নিজে তার সাথে দেখা করতে বিমানবন্দরে এসেছিলেন। এছাড়াও উইলিয়াম ওয়ার্ডসোয়ার্থ, উইল স্মিথ, হিউ জ্যাকম্যান সহ কত বিখ্যাত ব্যক্তির জীবন বদলে দিয়েছে ভগবত গীতা।
দেশের মাটিতে গড়ে উঠছিল একের পর এক গুপ্ত সমিতি এবং বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাদের কার্যকলাপও। দিন দিন সক্রিয় হয়ে উঠছিল গুপ্ত সমিতি গুলি। গুপ্ত সমিতি গুলির সক্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বোমা। বোমা তৈরির শিক্ষা সশস্ত্র আন্দোলনকে একটি অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল। এরপর থেকেই ইতিহাসের পাতায় উঠে এসেছে একের পর এক বোমা মামলা, বিশেষ করে আলিপুর বোমা মামলা, মুজফ্ফারপুর বোমা মামলা ইত্যাদি। যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই বোমা তৈরি করা এবং বিপ্লবীদের সেই বোমা তৈরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিপ্লবীরা কলকাতা শহরের বেশ কিছু গুপ্ত আখড়াকে বানিয়ে ফেলেছিলেন বোমা তৈরির কারখানা এবং সেই বোমা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল সমগ্র বাংলা জুড়ে।
বিপ্লবীদের কাছ থেকে বোমা তৈরি প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন অনেকে। সব মিলিয়ে এই বাংলার মাটি পরিণত হয়েছিল বোমা কারখানার ক্ষেত্র ভূমি হিসাবে। দক্ষিণেশ্বরে এইরকমই একটি বোমা তৈরীর আখড়া আবিষ্কারকে কেন্দ্র করে ইতিহাসের পাতায় উঠে এসেছিল আরেকটি মামলা যা দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলা নামে খ্যাত।
ব্রিটিশ পুলিশ ১৯২৫ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধান পান দক্ষিণেশ্বর এবং শোভাবাজারের বিপ্লবীদের দুটি গুপ্ত আস্তানার। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মোট এগারোজন বিপ্লবীকে। এই এগারোজন বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা হয়েছিল মামলা যা দক্ষিণেশ্বর বোমা নামে পরিচিত। ব্রিটিশ সরকারের এই মামলায় অভিযুক্ত করা বিপ্লবীদের তালিকায় নাম ছিল হরিনারায়ণ চন্দ্র, বীরেন ব্যানার্জি, নিখিলবন্ধু ব্যানার্জি, রাজেন লাহিড়ি, ধ্রুবেশ চ্যাটার্জি, রাখাল চন্দ্র দে, অনন্তহরি মিত্র, দেবীপ্রসাদ চ্যাটার্জি, শিবরাম চ্যাটার্জি, প্রমোদরঞ্জন চৌধুরি এবং অনন্ত চক্রবর্তী প্রমুখ বিপ্লবী। দীর্ঘ দুমাস ধরে চলেছিল এই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। অবশেষে ৯ জানুয়ারি ১৯২৬ সালে এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়। এই মামলায় বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে লড়েছিলেন এ.সি মুখার্জি, হর্ষনাথ ব্যানার্জি, সি.সি বিশ্বাস, এ.কে মুখার্জি এবং হেমন্ত কুমার রায়চৌধুরি ও এনাদের বিপক্ষে দাড়িয়েছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল বি.এল মিত্র, পাবলিক প্রসিকিউটর এন.এন ব্যানার্জি এবং গুণেন সেন।
অগ্নিযুগের বাংলায় দিকে দিকে দেখা দিয়েছিল বোমা বিস্ফোরণের জোয়ার। বিপ্লবীদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল বোমা তৈরির কৌশল। এই শিক্ষায় পরবর্তীকালে জন্ম দিয়েছিল একের পর এক ব্রিটিশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের। এই বাংলার মাটি পরিণত হয়েছিল বোমা কারখানার ক্ষেত্র ভূমি হিসাবে। বিপ্লবীদের গুপ্ত আখড়ায় গড়ে উঠেছিল বোমা তৈরির কারখানা। যার ফলে তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশদের কাছে বাংলার মাটি যেন ল্যাণ্ড-মাইনে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। বোমা তৈরি কারখানার পাশাপাশি দিকে দিকে গড়ে উঠছিল বহু গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি। এইরকমই নতুন একটি গুপ্ত বিপ্লবী দল গড়ে উঠেছিল যাদের সাথে যোগাযোগ ছিল মূলত হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মি এবং অনুশীলন সমিতির ও সবার উর্ধ্বে ছিল একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, যেখানে যোগ দিতেন বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধি এবং স্থানীয় বিপ্লবীরা। এক গুপ্তচর মারফত পুলিশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ১৯২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ এই দলের প্রথম আলোচনাসভা শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে বসার খবর।
১৯২৫ সালে সংগঠিত হওয়া নয় দশজনের এই আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে হাওড়া জেলার দায়িত্ব দেওয়া হবে বীরেন ব্যানার্জিকে এবং হুগলি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হবে চৈতন্য দেব চ্যাটার্জিকে এবং তাঁদের সকলের একটি করে ছদ্মনাম দেওয়া হয়, যেমন – বীরেন ব্যানার্জির ছদ্মনাম দেওয়া হয়েছিল অশোক এবং হরিনারায়ণ চন্দ্রের ছদ্মনাম দেওয়া হয়েছিল দাদা যিনি বোমা তৈরির দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি ঠিক করা হয়েছিল যে সমগ্র বাংলায় বোমা সরবরাহ করা এবং সমস্ত জেলা-শাখাগুলি থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে পাঠানো হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় কমিটি অস্ত্র, বারুদ, গুলি ইত্যাদি এই সমস্ত জেলা-শাখাগুলিকে সরবরাহ করবে।
১৯২৪ সালে পুলিশের গ্রেপ্তারের থেকে নিজেদের বাঁচাতে এই দলের সালকিয়া শাখার বিপিন গাঙ্গুলি এবং নগেন সেন আশ্রয় নিয়েছিলেন ডোমজুড়ের বিজন ব্যানার্জির বাড়িতে। এই আস্তানার সন্ধান পুলিশ পেয়ে যাওয়ায় সেটিকে বদল করে কলকাতার ৪ নং শোভাবাজার স্ট্রিটের একটি বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন বিজন ব্যানার্জি, বীরেন ব্যানার্জি আর সুধাংশু চৌধুরি এবং তাঁদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন হরিনারায়ণ চন্দ্র, অনন্তহরি মিত্র এবং প্রমোদ চৌধুরি।
১৯২৫ সালে বরানগরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেছিলেন বীরেন ব্যানার্জি সহ বেশ কিছু বিপ্লবী। কিন্তু সেই আস্তানার খবরও পেয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ। যার ফলে পুনরায় বদলে ফেলতে হয়েছিল তাদের আস্তানা। অবশেষে দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলের বাচস্পতিপাড়ায় আরেকটি নতুন আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন বিপ্লবীরা। সেই সময় বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল দক্ষিণেশ্বর এবং শোভাবাজার এই দুটি অঞ্চলের বাড়ি দুটি। কলকাতার এই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন বিপ্লবী পাঁচু দাঁ, বীরেন ব্যানার্জি, চৈতন্যদেব চ্যাটার্জি, অনন্তহরি মিত্র এবং নিখিল ব্যানার্জি। এই কমিটির সাথে সমস্ত চিঠিপত্র আদানপ্রদান করার দায়িত্ব ছিল সালকিয়া শাখার সন্তোষ গাঙ্গুলির উপর এবং অর্থনৈতিক দিকটি দেখভাল করতেন বঙ্কিম মুখার্জি। তবে পুলিশ কীভাবে দক্ষিণেশ্বরের এই গুপ্ত আস্তানা উদ্ধার করেছিল সেই নিয়ে নানা মতামত রয়েছে।
১৯২৯ সালে ৮ই এপ্রিল সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির (Central Legislative Assembly) ভিতর হঠাৎ কেপে ওঠে এক বোমা বিস্ফোরণে। সাথে সাথে ধোঁয়ায় ধোঁয়া হয়ে যায় চারিদিক। এরই মধ্য থেকে একটি স্লোগান ভেসে আসে সবার কানে “ইনক্লাব জিন্দাবাদ”। আস্তে আস্তে ধোঁয়ায় আবরণ করা অস্পষ্ট মুখ দুটি স্পষ্ট হতে থাকে। তবুও তারা সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে না। যথারীতি এই দুই বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই দুই বিপ্লবের মধ্যে একজন হলেন ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগত সিং এবং আরেকজন হলেন বটুকেশ্বর দত্ত যিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতে জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।
তাঁর বৈপ্লবিক জীবনের হাতে খড়ি হয়েছিল ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী শচীন সান্যাল এর হাত ধরে। .১৯২৫ . সালে তিনি কানপুরের পি পি এন হাই স্কুলের থেকে তাঁর স্কুল স্তরে পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হয়েছিলেন কানপুর কলেজে।
তবে কানপুরে তিনি থাকলেও তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন তৎকালীন পরাধীন ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ থানার ওঁয়াড়ি গ্রামে।
১৯১০ সালে ১৮ নভেম্বর তাঁর জন্মের কিছুদিন পর তাঁর পিতা গোষ্টবিহারী দত্ত কাজের সূত্রে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে আসেন। তাঁর পিতার সাথে তিনিও চলে আসেন কানপুরে। বটুকেশ্বর দত্ত নামে পরিচিত হলেও গ্রামে ছোটবেলায় তিনি ‘মোহন’ নামে পরিচিত ছিলেন। কলেজে পড়াকালীন সময়ে তিনি সংস্পর্শ এসেছিলেন শচীন্দ্রনাথ সান্যালের ওরফে লাট্টুর। শচীন্দ্রনাথ সান্যাল ছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়া অন্যতম এক বিপ্লবী এবং রাসবিহারী বসুর অনুগামী। যখন রাসবিহারী বসু তাঁর দেশের মাটি ত্যাগ করেছিলেন সেই সময় তিনি দেশের স্বাধীনতার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন বারাণসীর তাঁর এই অনুগামীর হাতে।
১৯২০ সালে শচীন সান্যালের সাথে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর মতভেদ তৈরি হয়েছিল দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পদ্ধতি নিয়ে। তাদের এই মতভেদ নিয়ে তৎকালীন পত্রিকা ইয়ং ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল লেখা। সেই লেখা পড়েই শচীন সান্যাল এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন বটুকেশ্বর। এরপরই শচীন সান্যাল বটুকেশ্বরকে রাসবিহারী বসুর আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
ওই সময় থেকে তরুণ বিপ্লবী বটুকেশ্বর দেশ থেকে পরাধীনতাকে হটাতে কাজ শুরু করেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। সেই সময় তার সাথে পরিচয় হয় শচীন বাবুর আরেক শীষ্য ভগৎ সিং এর সাথে। তাদের এই পরিচয় দ্রুত পরিণত হয়েছিল বন্ধুত্বের। ভগৎ সিং এর সংস্পর্শে এসে বটুকেশ্বরের মধ্যে ঘটেছিল আরো বৈপ্লবিক চেতনার বিকাশ। তিনি ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত সাহসী এবং দেশপ্রেমী ছিলেন। এরপর তিনি যোগ দিয়েছিলেন “হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন” নামের এক গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনে। এই গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনটি মূল উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটানো। পরবর্তীকালে এই সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে হয়েছিল “হিন্দুস্তান সোশালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন”। এরপর তাঁর পরিচয় হয়েছিল আরও এক বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদের সাথে। তাদের সে সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ মিত্রতায় পরিণত হয়েছিল। এরপর তিনি শেখেন বোমা বানানো, তাঁর সাথে এই শিক্ষা গ্রহণের সহযোগী ছিলেন ভগৎ সিং, শুকদেব। বিপ্লবী সদস্যদের কাছে তিনি বি.কে নামে পরিচিত ছিলেন।
এরপর বটুকেশ্বর যতীন্দ্রনাথ দাস যিনি পরবর্তীকালে বোম বানানোর কাজে বিপ্লবীদের দীক্ষাগুরু হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় উত্তর ভারতের বিপ্লবী গোষ্ঠীর। এরই মধ্যে ব্রিটিশ সরকার বিপ্লবী আন্দোলনকে দমন করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় আইনসভার ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিল পেশ করার। তখন এই পাবলিক সেফটি বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার উদ্দেশ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির (Central Legislative Assembly) ভিতরে বোমা নিক্ষেপ করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯২৯ সালে ৮ই এপ্রিল ভগৎ সিং এবং তাঁর সহযোগী বটুকেশ্বর দত্ত অ্যাসেম্বলির ভেতর অধিবেশন চলাকালীন সময়ে দুটি বোমা নিক্ষেপ করেন। তবে কাউকে হত্যা করা ছিল না এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাবলিক সেফটি বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। যথারীতি এই বোমা নিক্ষেপ করায় বেশ কিছু কাউন্সিলের সদস্য আহত হয়েছিল। এই বোমা দুটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে নিক্ষেপ করার পরে অ্যাসেম্বলির চারদিক ধোয়ায় ভরে যায় এবং সেই ফাঁকে তারা দুজনে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারতেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু হলেও সেখান থেকে পালিয়ে যান না ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত। উল্টে “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” বলে স্লোগান দিতে শুরু করলেন সেখানেই। এরপর ব্রিটিশ পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে।
শুরু হয় তাদের বিরুদ্ধে মামলা। এরই মধ্যে উঠে এসেছিল তাদের বিরুদ্ধে একটি ডেপুটি কমিশনার জি পি স্যান্ডার্স হত্যাকাণ্ডের তথ্য। শুরু হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আরেক মামলা যা ইতিহাসে পাতায় লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। স্যান্ডার্সকে হত্যাকে করেছিলেন ভগৎ সিং এবং তার অন্যান্য সহকারীরা। কারণ ১৯২৮ সালে যখন সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে লাহোরে আন্দোলন করা হয়। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রাই। এই আন্দোলনে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সুপার জেমস স্কট নির্দেশ দেন বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি চার্জ করার। স্কট নিজেই এই লাঠি চার্জে করতে গিয়ে ধরে ফেলেন লালা লাজপত রাইকে। রিপোর্টে দাবি অনুসারে, লালা লাজপত রাইকে ধরার পর লাঠি দিয়ে আঘাত করেন স্কট। যার ফলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যুবরন করেন। তবে অবশ্য সেই দাবী অস্বীকার করেছিল ব্রিটিশ আদালত। ভগৎ সিং ছিলেন লালা লাজপত রাইয়ের অনুগামীদের মধ্যে অন্যতম। এই ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন তিনি। তাঁর এই অভিযানে যোগদান করেন চন্দ্রশেখর আজাদ, রাজগুরু এবং শুকদেব থাপার। তবে তাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায় কারণ তারা ভুলবশত স্কটের পরিবর্তে অ্যাসিট্যান্ট পুলিশ সুপার স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন। এরপর এই মামলা চলেছিল ১৯২৯ সালের ১১ জুলাই থেকে ১৯৩০ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। সেই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন ভগৎ সিং, শুকদেব, শিবরাম রাজগুরু, বটুকেশ্বর দত্ত সহ আরো অনেক বিপ্লবীরা। এই মামলার রায়ে ভগৎ সিং, শুকদেব, শিবরাম রাজগুরুকে ফাঁসির আদেশ, বটুকেশ্বর দত্তকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিল এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদী শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। সেই জেলে বহু বিপ্লবীরা ব্রিটিশদের নির্মম অত্যাচারে শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। এরই মধ্যে বটুকেশ্বর দত্তের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল টিবি রোগ। এরপর রোগাক্রান্ত হওয়ায় জেল থেকে ১৯৩৮ সালে মুক্তি পায় বটুকেশ্বর। কিন্তু তাঁর বাংলা, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
তিনি ছিলেন বিপ্লবী তাই তাঁকে দমিয়ে রাখা অসম্ভব ছিল। মুক্তি লাভের পর তিনি পুনরায় ফিরে আসেন তাঁর পুরনো রাস্তায়। যোগদান করেন ভারতছাড়ো আন্দোলনে। যার কারণে তাঁকে পুনরায় কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল তিন বছরের জন্য।
তবে তাঁর শেষ জীবনটা কেটেছিল চরম কষ্টে। যিনি সারা জীবন দেশের জন্য তাঁর প্রাণপাত করে গেছিলেন সেই প্রানেরই দাম দেয়নি এই দেশ। সরকারি সাহায্য বা সম্মান বিশেষ কিছু পাননি তিনি।
একদিন যেখানে তিনি বিপ্লবীর বেশে এসেছিলেন সেখানেই তিনি শেষ জীবনে এসেছিলেন এক অসহায় অসুস্থ দারিদ্রের বেশে। এইভাবেই তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তাঁর শেষ জীবন কাটিয়েছেন। তখনও তিনি ষাট পেরোয়নি তার শরীরকে ঘিরে ফেলেছিল রোগে। দিন দিন তাঁর অবস্থা ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে। অবশেষে ১৯৬৫ সালে ২০ জুলাই, মাত্র ৫৪ বছর বয়সে দিল্লীর একটি হাসপাতালে লোকচক্ষুর আড়ালে মৃত্যুবরন করেন। বটুকেশ্বর দত্তের তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর শেষ কাজ করা হয়েছিল তার বন্ধু ভগৎ সিং এবং রাজগুরুর মতো পাঞ্জাবের হুসেইনিওয়ালায়।
তাঁর নামে নামকরন করা রয়েছে দিল্লি এয়ারপোর্ট এর পাশের একটি রাস্তার নাম যা বি.কে দত্ত কলোনি নামে পরিচিত হয়ে রয়েছে।
সময়টা ১৯৭৪ সালের কোন এক বিকেল, আমেরিকার সেনেট কমিটির এক গুরুত্বপূর্ন বৈঠক চলছে। আমেরিকার বিদেশনীতি সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং গোপনীয় এই বৈঠকে উপস্থিত রয়েছে আমেরিকার রোথড দ্বীপের ডেমোক্রেট সেনেটর ক্লাইবোর্ন পেল এবং নিউ জার্সি শহরের রিপাবলিকান সেনেটর ক্লিফোর্ড কেস। এই বৈঠকে আলোচনা হচ্ছিল আবহাওয়া সম্পর্কে। ক্লাইবোর্ন পেল ছিলেন আমেরিকার তৎকালীন সমুদ্র ও আন্তজার্তিক আবহাওয়া বিভাগের চেয়ারম্যান। বিদেশনীতি সম্পর্কে অত্যন্ত গোপনীয় কোন বৈঠকে আবহাওয়া নিয়ে আলোচনা করা ব্যাপারটা একটু বেমানান হলেও এটা কোন সাধারন বিষয় ছিলনা। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েক বছর ধরে আমেরিকার একটি অতি গোপনীয় প্রজেক্ট চলছিল।
এই গোপনীয় প্রজেক্টের নাম অপারেশন পপআই। যার মূল লক্ষ্য ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধে আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রন করে আমেরিকার বিজয়। এই প্রোজেক্টে ক্লাউড সিডিং এর মাধ্যমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধ জয়ের পরিকল্পনা করেছিল আমেরিকা।
১৯৫৫ সালে ১ নভেম্বর শুরু হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধ যা শেষ হয় ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল। প্রায় উনিশ বছর ধরা চলা এই যুদ্ধে ১৯৭৩ সাল নাগাদ বাধ্য হয়ে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় আমেরিকা। ভিয়েতনাম যুদ্ধে হার আমেরিকার জন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি বড় ধাক্কা ছিল। এই ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকা বেশ কিছু গোপন প্রজেক্ট প্রয়োগ করেছিল যার একটি হচ্ছে প্রজেক্ট পপআই। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ সাল পাঁচ বছর ধরে আমেরিকান বায়ুসেনা এই প্রজেক্ট করেছিল। এই প্রজেক্টের লক্ষ্য ছিল উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিন লাওসের বিশেষ কিছু এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঘটানো যাতে রাস্তা নরম হয়ে যায়, ধ্বস নামে রাস্তায়, নদীতে বন্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে হো চি মিন অঞ্চলে এই প্রোজেক্ট শুরু করে আমেরিকান বায়ুসেনা। হো চি মিন বা আনামাইট রেঞ্জ যা উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিন ভিয়েতনামকে সংযুক্ত করে। তবে এই অঞ্চল গিয়েছে লাওস ও কম্বোডিয়া হয়ে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় উত্তর ভিয়েতনামীরা বা ভিয়েত কং এই এলাকা দিয়েই তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট পেত। আমেরিকা উত্তর ভিয়েতনামের এই মিলিটারি সাহায্য বন্ধ করার জন্যই এই প্রজেক্ট শুরু করেছিল। সাধারনত সূর্যের তাপে বাতাস গরম হয়ে হালকা হয়ে যায়। হালকা বাতাস ঊর্ধগামী হয়। এই বাতাসের চাপ কম হতে থাকে ক্রমশ এবং একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর বায়ু ঠান্ডা হয়ে যায়। পরে সেই বায়ু ঘনিভূত হয়ে মেঘ বা ক্ষুদ্র জলকনা তৈরি করে। যা পরে মাধ্যাকর্ষন শক্তির প্রভাবে নীচে বৃষ্টি আকারে নেমে আসে। এটা হচ্ছে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে বৃষ্টিপাত। কিন্তু বিশ্বের অনেক জায়গা আছে যেখানে বৃষ্টিপাত হয়না বললেই চলে। সেখানে দরকার পরে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত প্রযুক্তির, যাকে ক্লাউড সিডিং বলা হয়।
১৯৪৬ সালে আমেরিকান রসায়নবিদ ভিনসেন্ট জোসেফ সর্বপ্রথম কৃত্রিম বৃষ্টিপাত পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৯৪৭ ও ১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয়াতে এই পদ্ধতির সর্বপ্রথম প্রয়োগ করা হয়। তবে ১৮৯১ সালে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত তৈরিতে তরল কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যাবহারের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কিন্ত কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের সম্পূর্ন পদ্ধতি ভিনসেন্ট জোসেফই তৈরি করেছিলেন। ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিতে ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালশিয়াম কার্বাইড, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, সিলভার আয়োডাইড, পটাশিয়াম আয়োডাইড ব্যাবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে মেঘের মধ্যে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস সাত ডিগ্রিতে নিয়ে আসা হয়, যাতে বিমানে করে যে অঞ্চলে ক্লাউড সিডিং হবে সেই অঞ্চলের মেঘে সিলভার আয়োডাইড প্রয়োগ করা হয়।
২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিকে চীন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিল। ঠিক একই পদ্ধতি আমেরিকা ১৯৬৭ -৭২ সালে ভিয়েতনামেও প্রয়োগ করেছিল।
থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস হয়ে ভিয়েতনামে এই প্রজেক্ট সম্পূর্ন গোপন ভাবে করেছিল আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট হেনরি কিসেঞ্জার এবং সিআইএ। এই বিষয়ে কোন তথ্য জানতইনা সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স মেলভিন লায়ার্ড। ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনামে এই প্রজেক্ট শুরু করার আগে অপারেশন পপআই এর পরীক্ষা করা হয় ১৯৬৬ সালের অক্টোবরে লাওসের সী কং নদীর তীরে বলোভেনস উপত্যকায়। লাওসের সরকারের অনুমতি ছাড়াই এই পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই সময়ে আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স পঞ্চাশের বেশী ক্লাউড সিডিং পরীক্ষা করেছিল যার ফলাফল আশানুরূপ ছিল। ৮২ শতাংশ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়েই যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এই প্রজেক্টে যতটা বৃষ্টিপাত করানো হয়েছিল সেটা যথেষ্ট ছিল ওই এলাকার রাস্তা খারাপ করতে যা ঠিক করতে পারেনি উত্তর ভিয়েতনামিরা। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে পূর্ব ভিয়েতনাম সীমান্তে একটি আমেরিকান বিশেষ বাহিনীর ক্যাম্পও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্সের বিজ্ঞানীদের ধারনা ছিল তাদের পরীক্ষা যথেষ্ট সফল, এই পরিমান বৃষ্টিপাত হলে রাস্তা যানচলাচল অযোগ্য হয়ে পড়বে। আমেরিকা আগেই এই অঞ্চলে সমস্ত সেতু্কে বোম্বিং করে উড়িয়ে দিয়েছিল, ফলে ক্লাউড সিডিং এর জন্য উত্তর ভিয়েতনামের সহয়তা একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই প্রজেক্টের জন্য আমেরিকার বেশী লোকও প্রয়োজন পড়েনি, এমনকী খরচও অনেক কম হয়েছিল। মাত্র দুটি সি-১৩০ হারকিউলিস হেলিকপ্টারকে বিশেষ ভাবে ক্লাউড সিডিং পোগ্রমের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। উত্তর পূর্ব থাইল্যান্ডে আমেরিকার বেসে অতিরিক্ত মাত্র ৩৩ জন সদস্য যোগ দিয়েছিল এই মিশনের জন্য। সেখানে আগে থেকেই বিশেষ বিমান রাখা ছিল। এই বিমানে ক্লাউড সিডিং এর জন্য লেড আয়োডাইড এবং সিলভার আয়োডাইড ব্যাবহার করা হয়েছিল। প্রজেক্ট স্ট্রোমফিউরির জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার নেভাল এয়ার ওয়েপনস স্টেশনে এটা আগেই তৈরি করেছিল। এর আগেই টেক্সাস, ফ্লোরিডা, গুয়ামে এর প্রয়োগ পরীক্ষা করে দেখেছিল আমেরিকা। অতি ঘূর্নিঝড়কে নিয়ন্ত্রন করার জন্যই আমেরিকা প্রজেক্ট স্ট্রোম ফিউরি শুরু করেছিল। এই মিশনের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল উত্তর ভিয়েতনামের জনবহুল এলাকা গুলোর জন্য বিশেষ করে ডং হই শহরের জন্য। তবে যেহেতু সে সময়টা বর্ষাকাল ছিল তাই জন্য এই এলাকার মানুষকে ততটা সমস্যায় পড়তে হয়নি। অন্য কোনও সময় এই মিশন শুরু করা হলে ধান চাষ, ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা ছিল। তবে লাওসে এই মিশন করা হয় কম জনবসতি পূর্ন এলাকাগুলোতে। তবে এই মিশনের সবচেয়ে সুবিধা ছিল সাধারন মানুষের থেকে উত্তর ভিয়েতনামী মিলিটারি বেশী সমস্যায় পড়বে কারন মিলিটারি গাড়ির উপর বেশী নির্ভরশীল।
অবশেষে ১৯৬৭ সালের ২০ মার্চ আমেরিকার ৫৪ তম ওয়েদার রিকোনেসান্স স্কোয়াড্রন অপারেশন পপআই শুরু করে, তাদের স্লোগান ছিল কাদা তৈরি করো, যুদ্ধ নয়।
১৯৬৭ সালের ২০ মার্চ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর ধরে প্রত্যেক বর্ষাকালে মার্চ থেকে নভেম্বর মাস অবধি অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। থাইল্যান্ডের উডোন থানি রয়েল থাই এয়ারফোর্স বেস থেকে দুটি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান, দুটি এফ-৪সি ফ্যান্টম বিমান প্রত্যেকদিন দুইবার করে উড়তো মিশনের জন্য। সরকারি ভাবে জানানো হত এই বিমানগুলো আবহাওয়া পর্যবেক্ষন করছে। এই মিশনের কোডনেম দেওয়া হয়েছিল মটোরপুল। প্রথমে এই প্রজেক্ট শুরু করা হয় অর্ধেক লাওটিয়ান প্যানহ্যান্ডেল এলাকা জুড়ে। ১১ জুলাই, ১৯৬৭ এই মিশন উত্তর ভিয়েতনামের বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে করা হয়। সেপ্টেম্বর মাস আসতে আসতে দক্ষিন ভিয়েতনামের সাউ উপত্যকাকেও যুক্ত করা হয় মিশনে।
১৯৭২ সাল আসতে আসতে কম্বোডিয়ার উত্তর পূর্ব এলাকা জুড়েও এই অপারেশন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৭২ সালের ৫ জুলাই এই প্রজেক্ট বন্ধ করা হয়। আমেরিকার পেন্টাগন পেপারস প্রকাশের পর অপারেশন পপআই এর কথা সর্বপ্রথম জনসমক্ষে আসে। ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই নিউইয়র্ক টাইমস এই ব্যাপারে একটি প্রতিবেদনও লেখা হয়েছিল, তার দুইদিন পরেই লাওসে এই অপারেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়৷
বাংলাহান্ট ডেস্কঃ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের দোরগোড়ায় গোটা দেশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে উদ্বোধনীর অপেক্ষায় রাম মন্দির (Ram Temple)। আগামী ২২শে জানুয়ারি উদ্বোধন হতে চলেছে রাম মন্দিরের। নাগারা স্টাইলে গোলাপি স্যান্ড দিয়ে তৈরি হয়েছে এই ঐতিহাসিক মন্দিরটি। খোদাই করা হয়েছে রাজস্থানের মির্জাপুর ও বাঁশি-পাহাড়পুর থেকে আনা মার্বেল পাথর। ১৭ হাজার গ্রানাইট পাথরও ব্যবহার করা হয়েছে মন্দির নির্মাণে। শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই বলেন, “এ পর্যন্ত ২১ লক্ষ কিউবিক ফিট গ্রানাইট, স্যান্ডস্টোন এবং মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে মন্দির নির্মাণে।”
জানা গিয়েছে ১০০০ বছরেও এই মন্দিরের গায়ে কোন আঁচড় লাগবে না। কারন মন্দির নির্মাণে স্টিল এবং সাধারণ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। চেন্নাই আইআইটির পরামর্শে মন্দিরের ভিত ১২ মিটার গভীর। ভিত ভরতে যে মাটি ব্যবহার করা হয়েছে, আঠাশ দিনের মধ্যেই তা পাথরে পরিণত হতে পারে। রাই জানান, যেভাবে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে অন্ততপক্ষে হাজার বছর মন্দির সংস্কারের প্রয়োজন হবে না। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৬.৫ হলেও, ভিত নড়বে না মন্দিরের।
ট্রাস্ট-এর তরফে চম্পত রায় দাবি করেন, আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মন্দিরের ভিত নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে তা কমপক্ষে ১,৫০০ বছর টিকে থাকে এবং মন্দিরের কাঠামো যাতে অন্তত ১,০০০ বছর অটুট থাকে, সে ভাবেই নির্মাণ করা হচ্ছে।
বাংলাহান্ট ডেস্কঃ দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা অনেক সময় মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায় আর্থিক কারণে। সেই কথা মাথায় রেখেই স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন নিয়ে এসেছে SBI আশা স্কলারশীপ স্কীম। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য পাবেন।
আসুন দেখে নিই, এই স্কলারশিপে আবেদনের যোগ্যতা কি :-
(১). ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীভুক্ত ছাত্রছাত্রীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে। (২). শেষ শিক্ষাবর্ষের রেজাল্টে ৭৫% মার্কস থাকতে হবে। (৩). পরিবারের বার্ষিক আয় ৩০০০০০ টাকার নীচে হতে হবে। (৪). দেশের যে কোনো প্রান্তের ছাত্রছাত্রীরা এই স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবে।
স্কলারশিপ অ্যামাউণ্ট – বছরে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত মিলতে পারে আর্থিক অনুদান।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডক্যুমেন্টস
(১). শেষ শিক্ষাবর্ষের মার্কশীট। (২). সরকারী পরিচয়পত্র (আধার কার্ড)। (৩). চলতি বছরের অ্যাডমিশন প্রুফ (ফি রিসিপ্ট/অ্যাডমিশন লেটার/স্কুলের আইডেন্টি কার্ড)। (৪). ছাত্রছাত্রী বা তাদের বাবামায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস। (৫). ইনকাম প্রুফ (ফর্ম ১৬এ/ গভর্নমেন্ট অ্যাপ্রুভড সার্টিফিকেট/স্যালারি স্লিপ)। (৬). আবেদনকারীর ছবি।
কিভাবে অ্যাপ্লাই করবে? – স্টেপ 1- SBI আশা স্কলারশিপে অ্যাপ্লাই করার জন্য যেতে হবে এই লিংকে: https://www.buddy4study.com/page/sbi-asha-scholarship-program; সেখানে মোবাইল নাম্বার এবং মেইল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। স্টেপ 2 – তারপর লগ ইন করে পর Apply Now-তে ক্লিক করলে স্কলারশিপে অ্যাপ্লাইয়ের পেজ খুলে যাবে। স্টেপ 3 – তারপর প্রয়োজনীয় ডক্যুমেন্টস ভালো করে যাচাই করে আপলোড করে Submit বাটনে ক্লিক করলেই অ্যাপ্লাই হয়ে যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ তারিখ – এই স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট 23/11/2023.
বিশ্বের সমস্ত শক্তিশালী দেশের নিজস্ব গোপন গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে যার ভিত্তিতে সেই দেশটি নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। গোয়েন্দা সংস্থা গুলির অস্তিত্ব ও তাদের অপারেশনের বাস্তব প্রমান রয়েছে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি সংস্থা আছে যা অত্যন্ত গোপনীয়, এটি কোন দেশের অধীনস্থ নয়। এমনকী এই সংস্থাটির যে অস্তিত্ব আছে তারও সঠিক কোন প্রমান নেই। বলা হয় এই সংস্থাটির অস্তিত্ব ২৫০ বছরেরও বেশী ধরে রয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই সংস্থা সম্পর্কে কোনও প্রমান পাওয়া যায়নি, শুধু বিভিন্নরকম কথা শোনা গেছে। যে গোপন সংস্থার কথা বলা হচ্ছে তার নাম দি অর্ডার অফ ইলুমিনাতি। সাধারনত এই সংস্থাটি ইলুমিনাতি নামে পরিচিত। ইন্টারনেটে ইলুমিনাতি নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে।
ইলুমিনাতি কথাটি সামনে এলেই এর সাথে নতুন ধরনের পৃথিবী, সরীসৃপ, শয়তানের উপাসক, এলিয়েন এইসব কথা আলোচিত হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গোপন সংস্থা ইলুমিনাতি আসলে কী? কেনই বা এই সংস্থা নিয়ে এত আলোচিত হয়! বিশ্বজুড়ে বহু মানুষই এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে।
বলা হয় ইলুমিনাতি কোন একটি দেশ নয় বরং গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রন করে। বিশ্বের বেশীরভাগ শক্তিশালী ও ধনী ব্যাবসায়ীরা এর সদস্য যার মাধ্যমে তারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করে। মহারানী এলিজাবেথ, আইজ্যাক নিউটন, ডেভিড রকফেলার, বিল গেটস, জর্জ ডব্লিউ বুশ, হেনরি ক্রিসেনজার, মার্ক জাকারবার্গ, কেটি পেরি, টেলর সুইফট, রোহানার মতোন বিশিষ্ট তারকা, ব্যাবসায়ী ও রাজনীতিবিদ দের ইলুমিনাতির সদস্য বলে ধরা হয়। শুধু তাই নয় ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এবং ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড বা আইএমএফ এর নামও ইলুমিনাতির সাথে যুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার, ব্যাঙ্ক, খবর, রাজনীতি, বিজ্ঞাপন, সিনেমা সমস্ত কিছুই এই সংগঠন অত্যন্ত গুপ্ত ভাবে নিয়ন্ত্রন করছে বলে বিশ্বাস করা হয়। মনে করা হয় এই সংস্থার সাথে জড়িত কোন ব্যাক্তি যদি সংগঠনের কথা ভুল করেও বাইরে প্রকাশ করে দেয় তাহলে তাকে নিজের জীবন দিতে হবে। এই বিশ্বে যখনই রহস্যাময় কোন ঘটনা ঘটে যার কোন সমাধান পাওয়া যায়না, তাকে ইলুমিনাতির সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়। যেমন ২০১৯ সালে বিশ্বে যখন করোনা মহামারী শুরু হয় তখন চীনকে অভিযুক্ত করা হয় এর জন্য। প্রথমে বলা হয় বাদুর থেকে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। আবার এটাও বলা হয় চীন পরীক্ষাগারে এই ভাইরাস প্রস্তত করেছে। যথারীতি ইলুমিনাতির সাথেও যুক্ত করে দেওয়া হয় এই ঘটনা। তবে এই ঘটনার পেছনে একটি কারনও আছে। চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী ধরা পড়ার চার পাঁচদিনের মধ্যে দ্যাট পপি নামে এক বিখ্যাত আমেরিকান গায়ক একটি গান তৈরি করে যার নাম ডোন্ট গো আউটসাইড। যাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে এই মহূর্তে মানুষকে বাইরে বেরোনো উচিৎ নয়। সাথে সাথে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে মাত্র একজন রোগী পাওয়ার পরই দ্যাট পপি কী করে বুঝতে পারে করোনা ভাইরাস এত অতিমারির রূপ নেবে। এর পরেই পপিকে ইলুমিনাতির সদস্য বলে প্রচার করা শুরু হয়।
১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর গুলি করে হত্যা করা হয় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি। যখন জন এফ কেনেডিকে গুলি করা হয় তখন রাস্তার ধারে এক অজানা মহিলাকে দেখা গিয়েছিল যার হাতে ক্যামেরার মতো অদ্ভুত দেখতে জিনিস ছিল। এই মহিলাটিকে দি বাবুসকা লেডি নাম দেওয়া হয়েছে। এই মহিলাটির সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি পরে। পরে তদন্তে দেখা যায় মহিলাটির হাতে থাকা ক্যামেরার মতো জিনিসটি আসলে একটি পিস্তল। এই ঘটনাও ইলুমিনাতির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। বিখ্যাত পপ গায়ক মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু রহস্যের জন্যও ইলুমিনাতি দায়ী বলে মনে করা হয়। আঠারো শতাব্দীতে ফরাসী বিপ্লব, বিংশ শতাব্দীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সহ যেকোনও বড় যুদ্ধ, হত্যাকাণ্ডের সাথে রহস্যময় সংগঠন ইলুমিনাতি জড়িত বলে মনে করা হয়। তবে এই সংগঠনকে অনেকে এলিয়েন অথবা শয়তানের পূজারীও বলে।
১৯৯১ সালে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ দ্বারা প্রকাশিত একটি বই ব্লাড লাইনস অফ দি ইলুমিনাতির প্রথম কয়েকটি পাতায় স্পষ্ট লেখা আছে যারা ইলুমিনাতির সদস্য তারা শয়তানের উপাসক। অনেকের ধারনা ইলুমিনাতির কোন অস্তিত্ব এখন নাই তবে অনেক ইউরোপীয় সংগঠনের বিশ্বাস ইলুমিনাতির অস্তিত্ব আজও তাদের মধ্যে রয়েছে।
ইলুমিনাতি শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ইলুমিনাটাস থেকে যার অর্থ নিজের মধ্যে জ্ঞানের প্রকাশ ঘটানো এবং অশিক্ষার অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে আসা। জনপ্রিয় মত অনুযায়ী ইলুমিনাতির চিহ্ন হচ্ছে একটি ত্রিভুজের মধ্যে একটি চোখ যাকে দি আই অফ প্রোভিডেন্স বা অল নোয়িং আই বলা হয়। তবে এই চিহ্নের সাথে ফ্রিম্যাসোনারি দলের চিহ্নের মিল আছে যার অর্থ ভগবানের চোখ সবসময় আপনাকে দেখছে, সেজন্য সবাইকে মানবিক হওয়া উচিৎ। ইলুমিনাতির মতোনই ফ্রিম্যাসোনারিও একটি রহস্যময় সংগঠন যা ইলুমিনাতি তৈরির আগে তৈরি হয়েছিল। বলা হয় ফ্রিম্যাসোনারিই একটি ইলুমিনাতি তৈরি হবার৷ ইলুমিনাতি পরে নিজেদের অন্য একটি চিহ্ন তৈরি করে যার নাম দি মিনারভাল আউল বা দি আউল অফ এথেনা৷
প্রাচীন গ্রীসের বু্দ্ধির দেবতা এথেনার নাম অনুসারে এই নাম আসে। খ্রীষ্টান ধর্মেও ত্রিভুজের মধ্যে একটি চোখকে ভগবানের দৃষ্টি বলেই বিশ্বাস করা হয়। খ্রীষ্টান ধর্ম অনুযায়ী ত্রিভুজের তিন কোনাকে ইশ্বরের সৃষ্টি পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার প্রতিক বলে বিশ্বাস করা হয়। যার কারনে অনেক খ্রীষ্টান দেশের নোটেও এই চিহ্ন দেখা যায়। ইলুমিনাতির ইতিহাস জানতে হলে সময়ের একটু পিছনে যেতে হবে।
সময়টা ১৭৭৬ সালের মে মাস, জার্মানির ব্রেভেরিয়া অঞ্চলে একটি ছোট শহর ইঙ্গোলস্টাডে এক শিক্ষক অ্যাডাম উইসাপ্ট বাস করতেন। এই রহস্যময় সংগঠন ইলুমিনাতির প্রতিষ্ঠা এই ২৭ বছর বয়সী শিক্ষক অ্যাডাম উইসাপ্টই। ১৭৪৮ সালে জন্ম হয় অ্যাডাম উইসাপ্টের। ১৭৭৬ সালে ইঙ্গোলস্টাডে ক্যানন ল এর শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সোজা ভাষায় ক্যানন ল কে গীর্জার আইন বলা হত। সেসময় ইউরোপীয়ান দেশ গুলোতে খ্রীষ্টান ধর্ম ও মিশনারীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী ছিল। সেসময় গীর্জার প্রভাব সবচেয়ে বেশী ছিল। কারও ক্ষমতা ছিলনা গীর্জার বিরুদ্ধে কথা বলার। জ্ঞান বিজ্ঞানের বদলে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস বেশী ছিল। এই বিচার ধারার সম্পূর্ন বিরুদ্ধে ছিল অ্যাডাম উইসাপ্ট। তার বক্তব্য ছিল বিজ্ঞান ও ধর্ম একে অপরের প্রতিযোগী নয় বরং বিজ্ঞান ও ধর্ম একে অপরের পরিপূরক। দুই ক্ষেত্রেই মানুষকে স্বাধীনতা পাওয়া দরকার। তিনি একটি নতুন বিশ্ব গঠনের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে সবাই ধর্ম ও বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ পাবে মুক্তোমনে। এই কারনেই তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চার ছাত্রকে নিয়ে তৈরি করে ইলুমিনাতি সংগঠন। এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল সমাজ ব্যাবস্থাকে পরিবর্তন করা যার কারনে প্রথমে এই সংগঠনের নাম ছিল দি অর্ডার অফ পারফেক্টিবিলিস্ট। পরে এই সংগঠনের নাম পাল্টে রাখা হয় দি অর্ডার অফ ইলুমিনাতি। আঠারো শতকে তৈরি হওয়া এই ইলুমিনাতি সংগঠনকে সেসময় জ্ঞানের প্রকাশ হিসাবে ভাবা হত। অ্যাডাম উইসাপ্টের চিন্তাভাবনা ছিল উন্নত বিশ্ব তৈরি করার। কিন্তু শুধুমাত্র পাঁচ জন লোকের চেষ্টায় সমাজ ব্যাবস্থা পরিবর্তন সম্ভব নয়। সেকারনে অ্যাডাম উইসাপ্ট বিভিন্ন দেশ থেকে ধনী ও শিক্ষিত ব্যাক্তিদের ইলুমিনাতির সদস্য করা শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই ইলুমিনাতির সদস্য বেড়ে হয় প্রায় তিন হাজার। এই সংগঠনের প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী ভয় পেতে শুরু করে। সেকারনে ১৭৮৪ সালে ব্রাভেরিয়ার ডিউক চার্লস থিওডর একটি আইন পাশ করায় যাতে সমস্ত গোপন সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
ইলুমিনাতির অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তারও করা হয়। শেষে ইলুমিনাতিতে প্রায় ৩৭ থেকে ৪০ জন সবচেয়ে শক্তিশালী লোক থাকে সদস্য হিসাবে। অ্যাডাম উইসাপ্টের মৃত্যুর পর ইলুমিনাতি সংগঠনের দায়িত্ব এসে পড়ে কিছু ক্ষমতাশীল লোভী লোকের হাতে যাদের চিন্তাধারা অ্যাডাম উইসাপ্টের চিন্তাভাবনার থেকে অনেক আলাদা ছিল। তবে এবার ইলুমিনাতির কার্যক্রম অনেক গোপন ভাবে শুরু করা হয়। এরপর ইলুমিনাতির কোন অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউ কোনওদিন জানতেও পারেনি। বর্তমানে ইলুমিনাতির অস্তিত্ব আছে কী নেই তা কেউই জানে না তবে এটা ঠিক ইলুমিনাতির জন্ম হয়েছিল একটি ভালো উদ্দেশ্যে কিন্তু তা সফল হয়নি।
সেটা ছিল ১৯৭১ সাল। বোম্বেতে কিংবদন্তি শিল্পী শচীনদেব বর্মনের বাড়ীতে একটা হিন্দী সিনেমার গানের রেকর্ডিং এর আগে রিহার্সাল চলছে ।
শচীন কর্তার সামনে বসে আছেন সেই সময়ের একঝাঁক নক্ষত্ররাজি, লতা, আশা, হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া (বাঁশি) এবং আরও অনেকে। রিহার্সাল এর মাঝখানে, শচীন কর্তা উঠে ভেতরের ঘরে গিয়ে একটা কৌটো এনে সবার মাঝে রাখলেন, বিখ্যাত কে,সি,দাস এর দোকানের রসগোল্লা, কলকাতা থেকে নিয়ে গেছেন। সবাইকে খেতে বললেন । কেউ কেউ খেলেন, কেউ বা খেলেন না। কৌটোতে অনেকগুলি রসগোল্লা থেকে গেলো। এরই মাঝে শচীনকর্তা আবার কোনও কাজে, ভেতরের ঘরে গেছেন, আসতে দেরী হচ্ছে , হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া এরমাঝে সবগুলি রসগোল্লা খেয়ে ফেলেন। শচীনকর্তা ফিরে এসে যখন দেখেন কৌটো পুরো খালি, ভীষণ রেগে যান, বলতে থাকেন,,,,,,,
”কেডা খাইলো, কেডা খাইলো ? কোন চুরা এতডি রসগোল্লা খাইছে ? আমার লিগ্যা একটাও রাখলো না । দেখছো নি চুরার কান্ডটা ”। সামনে যারা ছিলেন, তাঁরা চুপ। রিহার্সাল শেষ হলো, সবাই চলে গেলেন। পরদিন আবার যথারীতি কর্তার বাড়ীতেই রিহার্সাল চলছে। লতাজী গানের মুখড়াটা গেয়ে ছেড়েছেন, হরিজী ইন্টারল্যুডে বাঁশিতে বাজাচ্ছেন, শচীনকর্তা দুহাত তুলে সবাইকে থামালেন। সবাই তটস্থ, কোথায় কি ভুল হল ? কর্তা বললেন,,,,
“অখন বুজজি, কোন চুরা কাইল আমার সব রসগোল্লা চুরি করছে ? তোমরা বুঝতা না, আমি বুজজি। হরি’কে দেখিয়ে বললেন, “এই ছেমড়াই কামডা করছে , কাইল আমরার কইলকাতার অতডি মিষ্ঠি রসগোল্যা তার পেটে ঢুকছেনি, হের লাইগ্যাই আইজ তার বাঁশির আওয়াজও কাইলের থিক্যা বেশী মিডা লাগতাছে”। আবার তিনি ইশারা করতেই, শুরু হলো রিহার্সাল ।
কমল কুমার মজুমদারের লিখেছিলেন..
‘বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাস/রসগোল্লার কলম্বাস।’
বাংলা সাহিত্যেও রসগোল্লাকে নিয়ে রচিত হয়েছে সরেস সাহিত্যকর্ম। বিশিষ্ট রম্য সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচনা করেছেন বিখ্যাত রম্যগল্প “রসগোল্লা” যা ইউরোপের বহু দেশে সমাদৃত হয়েছে।
যতদূর জানা যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রথম রসগোল্লা প্রস্তুত করা হয়েছিল। নবীন চন্দ্র দাস আধুনিক রশিগোলার আবিষ্কর্তা ছিলেন এবং তিনি ইতিহাসে জনপ্রিয় কণ্ঠে রসগোল্লার কলম্বাসের সাথে যুক্ত হয়েছেন। ১৪ শতকের শেষভাগে ১৫ শতকের ভক্তি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভীষণাভক্তি বৃদ্ধি লাভের সময় মিষ্টিটির প্রাচীনতা নাদিয়াতে ফিরে আসত। এর পর এই রসগোল্লা জনপ্রিয় হয়ে, পাশের রাজ্যগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কলকাতায় এটি উল্লেখযোগ্যভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। রসগোল্লা নদীয়া থেকে কলকাতা ও ওড়িশায় ছড়িয়ে পড়ে।প্রতিবছর উল্টোরথের আগের দিন গোটা ওডিশায় পালিত হয় ‘রসগোল্লা দিবস’।এ বঙ্গেও দাবি ওঠে প্রতিবছর ১৪ নভেম্বরকে রসগোল্লা দিবস পালনের।
নবীন দাস
বিশেষজ্ঞদের মতে রসগোল্লার আদি উৎপত্তিস্থল বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলে। বিশেষ করে, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় পর্তুগীজদের সময় সেখানকার ময়রাগণ ছানা, চিনি, দুধ ও সুজি দিয়ে গোলাকার একধরণের মিষ্টান্ন তৈরি করেন যা ক্ষীরমোহন বা রসগোল্লা নামে পরিচিত। পরবর্তীতে বরিশাল এলাকার হিন্দু ময়রাগণের বংশধর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতা কিংবা ওড়িশায় বিস্তার লাভ করে। ২০১৫ সালের জুন মাস থেকেই ওড়িশা রসোগোল্লা তাদের বলে দাবি তোলে।সুপ্রীম কোর্ট অবশ্য মান্যতা দেয়না।
জিওগ্রাফিক ইন্ডিকেশন (জিআই)’ নামক প্রতিষ্ঠান রসগোল্লাকে পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টান্ন বলে ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে বাংলাদেশী মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের মতে, রসগোল্লার আদি উৎস কলকাতা কিংবা উড়িষ্যা নয়, বরং বাংলাদেশের পটুয়াখালি অঞ্চলে এর উৎপত্তি।
#নবীন_চন্দ্র_দাস। তিনি ১৫১ বছর আগে রসে ভেজানো গোলাকার এই রসগোল্লা তৈরি করেন।নবীন চন্দ্র দাসের এই সাফল্যের পিছনেও আছেন এক নারী৷ তিনি নবীনচন্দ্র দাসের স্ত্রী ক্ষীরোদমণি দেবী৷ জানা যায়, নবীন চন্দ্র দাসের গোটা ব্যবসার রাশ ছিল তাঁর হাতেই৷
যদিও খ্যাতির আড়ালে থেকে গিয়েছেন ক্ষীরোদমণি দেবী৷ রসগোল্লার কারিগর নবীন চন্দ্র দাসের স্ত্রী ছিলেন তিনি৷ প্রখ্যাত মিষ্টান্ন কারিগর ভোলা ময়রার মেয়ে৷ চোদ্দ বছর বয়সে নবীন ময়রার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়৷ রাশভারী মহিলা ছিলেন৷ স্বামীর উদ্ভাবনী ক্ষমতা থাকলেও যেহেতু ব্যবসায়িক দক্ষতা ছিল না তাই ক্ষীরোদমণি দেবীই ব্যবসার রাশ নিজের হাতে নেন৷ এমনকি ছেলে কে.সি দাস আলাদা দোকান করলেও আমৃত্যু পর্যন্ত নবীন চন্দ্র দাসের দোকান একাই চালিয়েছেন তিনি৷
গবেষকদের মত অনুযায়ী ১৮৬৮ সালে কলকাতায় বাগবাজারের নবীনচন্দ্র দাসের হাতে সৃষ্টি এই রসগোল্লা। যতটুকু জানা যায়, একটি ছোট্ট মেয়ে নবীন দাসের কাছে বায়না ধরে,
“চটচটে নয়, শুকনো হতে মানা,
দেখতে হবে ধবধবে চাঁদপানা,
এমন মিষ্টি ভূ-ভারতে নাই,
নবীন ময়রা, এমন মিষ্টি চাই।”
অক্ষরে অক্ষরে নবীন দাস কথা রাখেন মেয়েটির, ছানা আর গরম চিনির রস মিলিয়ে ঠিক যেন চাঁদপানার মতোই তৈরী করলেন রসগোল্লা। এই “রসগোল্লা”ই মিলিয়ে দিলো নবীন দাস আর সেই মেয়েটিকে, নাম যাঁর “ক্ষীরোদমনি”, বাগবাজারের তত্কালীন বিখ্যাত কবিয়াল “ভোলা ময়রা”র মেয়ে। নবীন দাসের ঘরণী হয়ে আসেন এই ক্ষীরোদমনি।
১৮৬৪ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকোতে একটি মিষ্টির দোকান খোলেন কলকাতার চিনি ব্যবসায়ী নবীন চন্দ্র দাস। বেশি দিন ওই মিষ্টির দোকানটি চলেনি। ফের ১৮৬৬ সালে কলকাতার বাগবাজারে আরেকটি মিষ্টির দোকান খোলেন তিনি। এই দোকানটির প্রধান মিষ্টি ছিল সন্দেশ। তবে কলকাতা শহরের খানদানি বণিকদের যেন সন্দেশে আশ মিটছিল না। তাই নবীন চন্দ্র দাস নতুন মিষ্টি তৈরির কথা ভাবছিলেন। পরে দুই বছরের মধ্যে তিনি তিনি তৈরি করেন রসগোল্লা।
প্রথমদিকে নবীনবাবুদের ক্রিস্টাল সুগার রিফাইনের ব্যবসা ছিল৷ তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁকে পারিবারিক ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ জমানো টাকা দিয়ে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেন তিনি৷ তাই বেশি দূর পড়াশোনা হয়নি৷ মা-ছেলে দুজনের সংসার সামলাতে ১৬-১৭ বছর বয়সে কালীদাস ইন্দ্র নামে এক মিষ্টি বিক্রেতার কাছে কারিগরের কাজ নেন৷ কিন্তু সেখান থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি৷
এরপর মায়ের জমানো টাকায় ১৮৬৪ সালে জোড়াসাঁকোতে একটি দোকান করেছিলেন নবীনবাবু৷ কিন্তু সেটা চলেনি৷ তারপর ফের মায়ের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ওই কালীদাস ইন্দ্রের দোকানের উল্টোদিকে আবারও একটি মিষ্টির দোকান করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেই ব্যবসাও ভালমতো চলত না৷ সেইসময় কিছু লোকজন তাঁকে বলতেন এমন মিষ্টি তৈরি করতে যাতে খিদের সঙ্গে তেষ্টাও মেটে৷এরপরই তিনি ছানার বল করে রসে দিলেন৷ কিন্তু প্রথম প্রথম তা ছেড়ে যেত৷ তারপর বেশ কিছুদিন এরকম হওয়ার পর শেষপর্যন্ত ঠিক হয়৷ সেই খুশিতে এবং নিজের মিষ্টির প্রচারের জন্য তিনি প্রায় সকলকে বিনা পয়সায় মিষ্টি বিলোতে থাকেন৷ তখন তিনি তেইশের যুবক।
একদিন তাঁদের বাগবাজারের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় একটি ঘোড়া টানা গাড়ি। গাড়িতে ছিল কলকাতার ধনাঢ্য ব্যক্তি, ভগবান দাস বাগলার পরিবার। ভগবান দাসের এক ছেলের পিপাসা পেলে সে গাড়ি থেকে নেমে ওই মিষ্টির দোকানের সামনে আসে। ভগবান দাস কথায় ওই ছেলেটিকে এক গ্লাস জল ও একটি রসগোল্লা দেওয়া হয়। রসগোল্লা খেয়ে ওই ছেলে বেজায় খুশি হয়ে বাবাকে বলেন তোমারও খেতে হবে এই মিষ্টি। ভগবান দাস এরপর এক হাঁড়ি রসগোল্লা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতার ছড়িয়ে পড়ে রসগোল্লার সুখ্যাতি।সুখ্যাতি তো ছড়াল৷ কিন্তু ব্যবসার হাল ধরবে কে? রসগোল্লার কারিগর তখন মিষ্টি শুভেচ্ছায় মোহিত৷ তাতেই লাটে উঠতে পারে ব্যবসা৷ অগত্যা হাল ধরলেন স্ত্রী ক্ষীরোদমণি৷ বাংলার মিষ্টান্ন শিল্পে জড়িয়ে গেল এই গৃহবধূর নাম৷ তিনি না থাকলে হয়তো রসগোল্লা হারিয়েই যেত৷।
জানা যায় ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা, ইসরো ২০১৬ সালে পরিকল্পিত মনুষ্য অভিযানে ভারতীয় মহাকাশচারীদের জন্য নিরুদিত বা ডিহাইড্রেড দুধ সাদা নরম তুলতুলে রসোগোল্লা এবং অন্যান্য খাবারের উদ্ভাবন করেছিল। এমনই এই সাদা রসালো গোলকের মাহাত্ম।
হাতটি যখন বাড়িয়েছিলি
রসোগোল্লা চাঁদে,
ভাবিসনি তো পড়বি যে তুই
এমনতরো ফাঁদে !
প্রাথমিক ত্রুটি সারিয়ে আজ সোমবার ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর ‘চন্দ্রযান দুই’ পাড়ি দিতে চলেছে চাঁদের পাহাড়। এই চন্দ্রযানে স্মারক হিসেবে থাকতেই পারে এককৌটো সাদা ‘রাজগোল্লা’ বা রসোগোল্লা .. কিন্তু প্রশ্ন হল থাকবে কি ..?..