সরস্বতী পুজোর দিন বই ছোঁয়া মানা, তাহলে পুজোর দিন কেন হয় হাতেখড়ি? শাস্ত্র মতে এর ব্যাখ্যা কি - Bangla Hunt

সরস্বতী পুজোর দিন বই ছোঁয়া মানা, তাহলে পুজোর দিন কেন হয় হাতেখড়ি? শাস্ত্র মতে এর ব্যাখ্যা কি

By Bangla Hunt Desk - January 26, 2023

তাঁকে তপস্যায় তুষ্ট করে বেদজ্ঞ হয়েছিলেন দস্যু রত্নাকর। তাঁর বাৎসল্যেই মহাকবি হয়েছিলেন মূর্খ কালিদাস। এহেন দয়া যাঁর শরীরে তিনি আর যাই করুন কারও ক্ষতি যে করবেন না একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবু প্রচলিত এক নিয়ম অনুযায়ী, সরস্বতী পুজোর দিন পড়তে বসলেই নাকি পরীক্ষায় ফেল অবধারিত। একইভাবে তাঁর পুজো ঘিরে আরও কিছু নিয়মের গণ্ডি আছে। জ্ঞানে-অজ্ঞানে যা পার করার সাহস দেখান না কোনও ছাত্রছাত্রী।

প্রথমত একথা অবশ্যই বলা উচিৎ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শাস্ত্রের নামে যা বলা হয় তা হবহু শাস্ত্রের বর্ণনার সঙ্গে মেলে না। এক্ষেত্রেও খানিকটা তেমনই হয়েছে। তাই সরস্বতী পুজোর দিন অধ্যয়ন নিষিদ্ধ একথা যেমন ভুল নয়, তেমনই এদিন লেখাপড়া করলে দেবী রুষ্ট হবেন সেকথাও সত্যি নয়। আসল ব্যাপারটা বুঝতে হলে জানতে হবে শাস্ত্রে বর্ণিত সরস্বতী পুজোর কিছু বিধির কথা। যে কোনও মূর্তি পুজোর ক্ষেত্রেই তাঁর সঙ্গে থাকা যাবতীয় অনুষঙ্গের পুজো করতে হয়। দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে যেমন দেবীর বাহন সিংহ, দশ রকমের অস্ত্র, মহিষ, এমনকি মহিষাসুরেরও আলাদা ভাবে পুজো করতে হয়। তেমনই সরস্বতী মূর্তির সঙ্গে থাকা অনুষঙ্গেরও আলাদা ভাবে পুজো হয়। ষড়োশপচারে দেবীর পুজো করার পর আলাদা ভাবে মন্ত্র পড়ে পুজো করতে হয় এঁদের। বলা বাহুল্য, সরস্বতী মূর্তির মতো এই অনুষঙ্গগুলিকেও ব্রহ্মজ্ঞানেই পুজো করতে হয়। যার মধ্যে প্রথমেই আসে দেবীর বাহন হংস। এরপর আসে ‘নাদ’ যা ইঙ্গিত করে যে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রকে। একইভাবে ব্রহ্মজ্ঞানে পুজো হয় দোয়াত, কলম, পুস্তক, রং-তুলি ইত্যাদিরও। শাস্ত্রমতে এই সমস্ত অনুষঙ্গের পুজো করার আগে অন্তর থেকে এঁদের মধ্যে ব্রহ্মস্থাপন করতে হয়। তারপর বিভিন্ন উপাচারে দেবীর মতো এঁদের পুজো করা হয়। এবং পুজো শেষে মন্ত্রের মাধ্যমেই পুনরায় তাঁদের ব্রহ্মলোকে প্রেরণ করতে হয়।

আরো পড়ুন- ১০ টন সোনা সহ ১৫ হাজার কোটির বেশি নগদ! তিরুপতি মন্দিরে দানের হিসাব জেনে চোখ কপালে উঠবে

সহজ ভাবে বলতে গেলে, যে কোনও মূর্তিপুজোর ক্ষেত্রে বিগ্রহের মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজো করা হয়। শাস্ত্রমতে মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে, পুজারি ব্যতীত অন্যকারও তা স্পর্শ করার অধিকার থাকে না। পরেরদিন মন্ত্রের মাধ্যমে ঘট বিসর্জন হলে তারপর মূর্তিতে যে কেউ হাত দিতে পারেন। তেমনভাবেই সরস্বতী পুজোর সময় দেবীর কাছে রাখা অনুষঙ্গগুলির মধ্যেও ব্রহ্মস্থাপিত হয়। তাই পরের দিন বির্সজনের আগে পর্যন্ত সেগুলিকে স্পর্শ করার অধিকার সবার থাকে না। বলা যায়, এর থেকেই এই নিয়মের জন্ম। এইজন্যই বেশ কিছু শাস্ত্রে বিসর্জনের আগে পর্যন্ত বিদ্যাচর্চার সঙ্গে জড়িত কোনও জিনিসকে ব্যবহার করতে মানা করা হয়।

এবার আসা যাক হাতেখড়ির প্রসঙ্গে। আগেকার দিনে বিদ্যারম্ভের জন্য কোনও নির্দিষ্ট দিন থাকতো না। মনে করা হতো বিদ্যারম্ভের মতো শুভ কাজ যেই দিনই করা হোক না কেন তার কোনও অশুভ প্রভাব থাকতেই পারে না। সেই বিদ্যারম্ভই আজকের হাতেখড়ি। চতুরাশ্রম প্রথার কথা আমরা এখন কেবল ইতিহাসেই পড়ি, বাস্তবে তার প্রয়োগ সামান্যই। তাই গুরুগৃহে যাওয়ার সঙ্গে পড়াশোনা শুরু হওয়ার কোনও সম্পর্ক এখন আর সেভাবে নেই। তবু হাতেখড়ির জন্য একটা শুভ দিনের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পুজোর দিনই যথোপযুক্ত। সেই কারণেই বর্তমানে দেবী সরস্বতীর সামনে আয়োজন করা হয় ‘হাতেখড়ির’।

অন্যদিকে এইসব শাস্ত্রের ব্যাখ্যা যদি বাদও দিই, তাহলেও যা পড়ে থাকে তা হল বাঙালির আবেগ। পড়ুয়া থেকে আরম্ভ করে শিক্ষক-শিক্ষিকা, সরস্বতী পুজোর দিনটাকে সকলেই নিজের মতো করে উদযাপন করে। তাই সেইদিন রোজকার কাজের থেকে একটু বিরতি নিলে মন্দ কোথায়! তবে হ্যাঁ, পুজোর পরেরদিন যদি কারও পরীক্ষা তাহলে তার অবশ্যই পড়তে বসা উচিত। নাহলে হাজার পুজো করলেও দেবী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বর দেবেন না। শাস্ত্র মেনে যা-ই করা হোক না কেন, মনে রাখতে হবে, বাগদেবী তাঁর উপরই প্রসন্নন হন, যিনি বিদ্যার অনুশীলন করেন। সেটাই তাঁর প্রকৃত পূজা।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন


প্রাসঙ্গিক খবর