মহাদেবের মাথায় কিভাবে স্থান পেলো অর্ধচন্দ্র? - Bangla Hunt

মহাদেবের মাথায় কিভাবে স্থান পেলো অর্ধচন্দ্র?

By Bangla Hunt Desk - April 03, 2023

দেবাদিদেব মহাদেব যাকে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সংহারকর্তা বলা হয়। তাঁর পরনে থাকে বাঘের ছাল, হাতে থাকে ত্রিশূল ও ত্রিশূলে জড়ানো ডুমুর, ত্রিনয়ন, ও রুদ্রাক্ষ এবং মাথায় থাকে গঙ্গা ও অর্ধচন্দ্র। এইরকম বেশ ধারণ করার পিছনে কিছু পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। আর এই সমস্ত পৌরাণিক কাহিনীগুলি মধ্যে অন্যতম একটি হল মহাদেবের মাথায় অর্ধচন্দ্রকে স্থান দেওয়া কাহিনী। মহাদেবের মাথায় কিভাবে স্থান পেলো অর্ধচন্দ্র? অর্থ বহন করে অর্ধচন্দ্র?

মহাদেবের মাথায় কিভাবে স্থান পেল অর্ধচন্দ্র? এই নিয়ে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত রয়েছে।

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ব্রহ্মাপুত্র প্রজাপতি দক্ষের ২৭ টি কন্যা নক্ষত্র ছিল।

তিনি এই ২৭ জন কন্যার সাথে বিবাহ দিয়েছিল চন্দ্রদেবের। চন্দ্রদেব ২৭ জন কন্যকে বিবাহ করলেও তাঁদের মধ্যে তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল রোহিণী। যার ফলে রোহিনীকে ব্রহ্মাপুত্র প্রজাপতি দক্ষের বাকি কন্যারা ঈর্ষা করতে শুরু করেন। একদিন তাঁরা একত্রিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তার পিতা দক্ষের কাছে। তাঁরা বলেন যে তাঁদের সাথে চন্দ্রদেব ভাল ব্যবহার করেন না। দক্ষ তাঁর কন্যাদের কথা শুনে চন্দ্রদেবের উপর ক্রোধিত হয়ে যান। যার ফলে তিনি চন্দ্রদেবকে অভিশাপ দেন যে তাঁর ধীরে ধীরে ঔজ্জ্বল্য কমে যাবে। দক্ষের দেওয়া অভিশাপ কি আর বিফলে যায়! যার ফলে চন্দ্রদেব ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। এদিকে এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন অন্যান্য দেবতারাও। যখন চন্দ্রদেবের মাত্র একফালি অংশই উজ্বল ছিল, তখন চন্দ্রদেব এবং অন্যান্য দেবতারা একত্রিত হয়ে যান মহাদেবের কাছে। মহাদেব দেবতাগনেদের থেকে সমস্ত বিষয় শোনার পর, মহাদেব নিজের জটায় চন্দ্রকে স্থান দেন। সাথে বর প্রদান করেন যে চন্দ্রদেবের ১৫ দিন উজ্বলতা হ্রাস পাবে এবং ১৫ দিন আবার তার উজ্বলতা ফিরে পাবে। পৌরাণিক মত অনুযায়ী, এই কারণেই প্রত্যেক মাসে হ্রাস-বৃদ্ধি হয় চাঁদের আলো।

আরো পড়ুন- মিড ডে মিলের খিচুড়িতে পাওয়া গেল আস্ত সাপ! চাঞ্চল্য নদিয়ায়

তবে শিব পুরাণে এই বিষয়ে অন্য ব্যাখ্যা রয়েছে। শিব পুরাণ অনুযায়ী, সতী তাঁর পিতা দক্ষের মুখ থেকে তাঁর স্বামী মহাদেবের অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের প্রাণ তিনি বিসর্জন দিয়েছিলেন যজ্ঞের অগ্নিকুন্ডে। এই কথাটি মহাদেব জানতে পারায় তিনি অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে যান এবং সেই সময় তিনি তাঁর জটা ছিঁড়ে ফেলেন। এরপর সেই যজ্ঞস্থলে মহাদেব তাঁর অনুচরদের সঙ্গে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সমস্ত কিছু লণ্ডভণ্ড করে দেন এবং প্রজাপতি দক্ষের মুণ্ডপাত করেন। তারপর মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে নিয়ে শুরু করেন তান্ডব নৃত্য। মহাদেবের এই প্রলয় নৃত্য না থামাতে পারলে সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যেত। যার কারনে ভগবান বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ৫১টি অংশে খণ্ডিত করে দেন। এর ফলে শিব অনেকাংশে শান্ত হলেও তাঁর সেই রুদ্রতেজ কমে ছিল না। তাঁর এই প্রবল তেজের প্রভাবে মুমূর্ষু হয়ে গিয়েছিলেন সূর্যও। তখন দেবতারা তাঁর তেজ কমানোর উপায় খুঁজতে ব্রহ্মার কাছে যান। ব্রহ্মা তখন এই সমস্যা সমাধানের উপায় হিসাবে বলেন অমৃতের কলস এবং ষোলকলাময় চন্দ্র এর কথা।

সেই উপায় অনুযায়ী, ষোলকলায় সেজে চন্দ্র অমৃতের কলস সাথে নিয়ে এলেন। চন্দ্রকে ব্রহ্মা বললেন যে, তিনি রাতের আকাশে যে তৃপ্তিময় শীতলতা এবং প্রশান্তি নিয়ে অবস্থান করেন, এটি ওই অমৃতের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। ব্রক্ষ্মার অনুরোধে অমৃতের কলসে প্রবেশ করেন চন্দ্রদেব এবং দেবতারা ওই অমৃত কলস নিয়ে যায় শিবের কাছে। এরপর ওই অমৃত পান করার জন্য মহাদেবকে অনুরোধ করে দেবতারা। অমৃত দেখে মহাদেবও প্রসন্ন হন। এরপর তিনি ওই কলসে আঙুল ডুবিয়ে অমৃত তোলা মাত্রই, তাঁর নখের আঘাতে কলসে থাকা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যান চন্দ্রদেব! এটি দেখে মহাদেব উপলব্ধি করেন যে স্বাভাবিক ছন্দে তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্যই চন্দ্রদেব এই আত্মত্যাগ করেছেন। তখন তিনি অত্যন্ত প্রশন্ন হয়ে চন্দ্রদেব বর দেন ষোলকলা ফিরে পাওয়ার। সাথে খণ্ডিত হওয়া অষ্টকলাকে মহীয়ান করতে, মহাদেব নিজের মাথায় তা ধারণ করলেন। এরপর মহাদেবের শরীর থেকে মুক্ত হয়ে রুদ্রতেজ এবং ভরে ওঠে প্রশান্তিতে। এর পর থেকেই মহাদেবের মাথায় স্থান পান অর্ধচন্দ্র।

এছাড়াও বহু প্রাচীন গ্রন্থে এই নিয়ে প্রচলিত রয়েছে অন্য আরেকটি কাহিনী, যখন সমুদ্র মন্থন হয়েছিল সেই সময় অমৃতের সাথে উঠে এসেছিল বিষ। আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বাঁচানোর জন্য সেই বিষ মহাদেব নিজের কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন। নিজের কণ্ঠে নীল বিষ ধারণ করেছিলেন বলেই তিনি অপর একটি নাম হল নীলকণ্ঠ। এই তীব্র বিষ প্রভাবে মহাদেবের শরীরের তাপমাত্রা ভীষণভাবে বেড়ে যায়। সেই সময় তাপ হ্রাস করতেই মহাদেব তাঁর মাথায় ধারণ করেছিলেন চন্দ্রকে।

মহাদেবের মাথায় থাকা অর্ধচন্দ্র কিসের প্রতীক?

এই অর্ধচন্দ্র হল চিরন্তন সময়ের ইঙ্গিতের বাহক অর্থাত্‍ প্রাচীন, বর্তমান এবং ভবিষ্যত এই সবেরই প্রতীক হিসাবে ধরা হয়।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


প্রাসঙ্গিক খবর