নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর জনোসভায় চরম বিশৃঙ্খলা, সভা চলাকালীন পড়ল এলোপাথাড়ি ঢিল - Bangla Hunt

নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর জনোসভায় চরম বিশৃঙ্খলা, সভা চলাকালীন পড়ল এলোপাথাড়ি ঢিল

By Bangla Hunt Desk - January 08, 2021

বাংলা হান্ট ডেস্ক ; শুক্রবার নন্দীগ্রামে দলের ‘ওজনদার’ নেতাদের নিয়ে বিশাল জনসভার ডাক দিয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু ইট-পাটকেল এবং ‘চোর’ স্লোগানে শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারীর সেই জনসভায় কার্যত দক্ষযজ্ঞ বেধে গেল। জনতাকে সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা গেল গেরুয়া শিবিরকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল, যে মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে মাইক বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিতে হল কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে। মাথায় উঠল তৃণমূল ছেড়ে আসা নেতাদের বিজেপি-তে ‘মেগা যোগদানের’ পালাও। এমনকি, বক্তৃতা না দিয়ে সভায় ইতি টানতে হল শুভেন্দুকেও!

নন্দীগ্রাম টাউনে ঢোকার মুখে শুক্রবার বিশাল জনসভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়, বাংলায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু— পালা করে সকলেরই বক্তৃতা করার কথা ছিল সেখানে। নন্দীগ্রামের মঞ্চে দিলীপ-শুভেন্দুকে পাশাপাশি দেখতেও মুখিয়ে ছিলেন অনেকে। কারণ, শুভেন্দু তৃণমূলে থাকাকালীন তাঁর দাপটেই লোকসভা নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রাম থেকে ফিরে যেতে হয়েছিল দিলীপকে। শুক্রবার দিলীপকে মঞ্চে এনে সম্ভবত তারই ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে চেয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু সভা শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়। মঞ্চে তখন সবে বক্তৃতা শুরু করেছেন কৈলাস। আচমকাই বাঁ-দিক থেকে এলোপাথাড়ি ঢিল পড়তে শুরু করে। একসাথে সজোরে ‘চোর-চোর’ স্লোগানও উঠতে শুরু করে। আচমকা এমন ঘটনায় হতচকিত হয়ে যান বিজেপি নেতৃত্ব। দর্শকাসনে তো বটেই, মঞ্চের উপরেও শুরু হয়ে যায় ঠেলাঠেলি। দর্শকাসন থেকে হুড়মুড় করে মঞ্চের উপর উঠে আসতে শুরু করেন দলে দলে মানুষ। মঞ্চের সামনে রাখা চেয়ার তুলে আছাড় মারতে শুরু করেন অনেকে। বাঁশের তৈরি ব্যারিকেডও ভেঙে ফেলা হয়।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে দেন কৈলাস বিজয় বর্গী। সকলকে শান্ত হয়ে বসার জন্য আবেদন করেন তিনি এবং দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মঞ্চের একপাশে সরে আসেন তিনি। নির্দেশ দেন মাইক বন্ধ করে দেওয়ার। দর্শকদের ভয় পেতে দেখে সেইসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক। উচ্চৈস্বরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে শুরু করেন তিনি। মঞ্চে উপস্থিত বিজেপি নেতারাও তাতে শামিল হন। সেই ফাঁকেই দলের স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে গিয়ে টেনে টেনে মঞ্চ থেকে লোকদের নামাতে থাকেন তাঁরা। মাইক ধরে সকলকে শান্ত হওয়ার আর্জি জানান শুভেন্দুও। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে নিতে হবে।’ তাতেই ধীরে ধীরে উত্তেজনা কাটে। কিন্তু তত ক্ষণে সভার তাল কেটে গিয়েছে। তবে ভুল বোঝাবুঝির কথা বললেও গোটা ঘটনার জন্য নাম না করে তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় তোলেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘এত বছর সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সিপিএম কিন্তু কখনও তৃণমূলের মিছিলে ঢিল ছোড়েনি! আর এখন পরিস্থিতি দেখুন। সভা চলাকালীন এলোপাথাড়ি ঢিল পড়ছিল। যাতে সভা ভণ্ডুল হয়ে যায়। আমি আজ এখানে অতিথিমাত্র। দিলীপদাই মূল বক্তা। এরপর দিলীপ ঘোষের বক্তব্য শেষে শুভেন্দু অধিকারী আগত বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশ্যে জানান আপনারা নিরাপদে বাড়ি ফিরে যান। আপনাদের বাড়ি ফেরানোই আমার এখন মূল চিন্তা। সকলে নিরাপদে না ফেরা পর্যন্ত আমি এখান থেকে বেড়বো না। আরও এক ঘণ্টা মঞ্চের পিছনে অপেক্ষা করব আমি।’

স্থানীয় সূত্রে খবর, গোকুলনগরের এলাকার কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে বিজেপি-তে নেওয়ার প্রতিবাদেই গোটা ঘটনার সূত্রপাত। ওই নেতার বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীদের মারধর এবং তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ রয়েছে এলাকায়। এদের তৃণমূল ভাঙিয়ে ‘যোগদান মেলা’য় বিজেপি দলে যোগ দিতে ডাকা হয়েছিল, তাঁদের দেখেই ক্ষেপে ওঠেন বিজেপি-র পুরনো কর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে পদ্মশিবিরে রয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। সেই তৃণমূলের লোকজনের দলে যোগদান মেনে নিতে পারেননি তাঁরা। তাই অশান্তি বাধান। ভাঙচুর চালান। তৃণমূল যদি হামলা চালিয়ে থাকে, তা হলে যোগদান মেলা বন্ধ রেখে সভা গুটিয়ে চলে যেতে হল কেন ওঁদের? কারণ ওঁরা জানতেন, তৃণমূল থেকে আসা লোকজনের নাম ঘোষণা করলে বিজেপি সমর্থকরা আরও ক্ষেপে উঠবেন। তখন আর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। তাই শুভেন্দুও আর বক্তৃতা করার সাহস দেখান নি।’

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন


প্রাসঙ্গিক খবর