রাজেন্দ্র নাথ দত্ত:মুর্শিদাবাদ : প্রতিদিনই দামে নজির গড়ছে সোনা। তাতেই প্রমাদ গুনছেন স্বর্ণকারেরা। আকাশ ছোঁয়া দাম শুনে দোকানমুখো হচ্ছেন না মধ্যবিত্ত বাঙালি। খরিদ্দারের অভাবে স্বর্ণ বিপণি বন্ধ হয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে জেলায়। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ জানান, পরিস্থিতি এমনই করুণ যে, জীবিকা হারিয়ে কারিগর, দোকানদারদের কেউ কেউ আনাজের দোকান খুলেছেন। কেউ এখন টোটোচালক। তাঁদের দুর্দশা নিয়ে সরব হয়ে দেখা যায়নি কোনও রাজনৈতিক দলকে। তাঁদের জন্য নির্বাচনের মুখে নেই কোনও প্রতিশ্রুতি। স্বর্ণকারদের আর্জি, স্বর্ণশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্রিয় হোক সরকার। নির্বাচনী ইস্তাহারে গুরুত্ব দেওয়া হোক স্বর্ণশিল্পকে।
স্বর্ণশিল্পীদের একাংশ জানান, এই পেশার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রচুর মানুষ যুক্ত। কেউ স্বর্ণ ব্যবসায়ী, কেউ কারিগর, কেউ আবার দোকানের কর্মী। আর তাঁদের উপর নির্ভর করে রয়েছেন হাজার হাজার পরিবার। মুর্শিদাবাদ জেলাতেই প্রায় ২০ হাজারের মতো ছোট ও মাঝারি সোনার দোকান রয়েছে। কারিগর আছেন দশ হাজার। এখনও কিছু কিছু দোকানে ‘ম্যানেজার’ রয়েছেন। জেলার স্বর্ণ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির দাবি, এই জেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ এই শিল্পের উপরে নির্ভরশীল। সোনার দাম আকাশ ছোঁয়া হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছেন সেই সব মানুষেরা। অথচ সরকারি ভাবে কয়েকটি পদক্ষেপ করলে কিছুটা হলেও অক্সিজেন পেত এই শিল্প।
জেলার স্বর্ণকার কমিটির সম্পাদক বলছেন, “সোনার দাম যত বাড়ছে ততই মাধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এই মধ্যবিত্তই আমাদের প্রধান খরিদ্দার। ফলে আমাদের খরিদ্দারও ক্রমে কমছে। বর্তমানে নেই বললেই চলে। যারা এখনও সোনার গয়না কেনার কথা ভাবেন তারা বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির শো-রুমে চলে যাচ্ছেন। ওদের মূলধন বেশি। ফলে ওরা নানা ধরনের ছাড় দিতে পারছে। আমরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি।” তিনি আরও বলেন, “অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে দিয়ে টোটো চালাচ্ছেন। কেউ বা আনাজ বিক্রি করছেন। অথচ সরকার চাইলেই আমাদের এই কঠিন অবস্থা থেকে অনেকটাই মুক্ত করতে পারত।” স্বর্ণকারদের একাংশের দাবি, সোনার উপরে আমদানি শুল্ক অনেকটাই বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁরা শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘ দিন ধরে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত জিএসটির চাপও তাঁরা নিতে পারছেন না। বর্তমানে বছরে ৪০ লক্ষ টাকার বেশি লেনদেন হলেই জিএসটি দিতে হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, এই নিয়ম যে সময় করা হয়েছিল তখন সোনার দাম কম ছিল। এখন দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে লেনদেনের পরিমাণ অন্তত এক কোটি টাকা করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির জেলা কমিটির সম্পাদক বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার আমদানি শুল্ক কমালে ও জিএসটিতে কিছুটা ছাড় দিলে আমাদের সুবিধা হত। টিকে থাকার সুযোগ পেতাম।’’ শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়, রাজ্য সরকারের কাছেও একাধিক দাবি জানাচ্ছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
সামাজিক অনুষ্ঠানে সোনার গয়না উপহার দেওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘ দিনের। বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে পাত্র বা পাত্রীকে সোনার গয়না উপহার দিয়ে থাকেন অনেকে। সোনার দাম বৃদ্ধির ফলে শুধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী নয়, সমস্যায় পড়েছেন মধ্যবিত্তেরাও। এক দিকে, হাতে নগদের অভাব আর অন্য দিকে, সোনার দাম ক্রমে আকাশছোঁয়া হতে থাকায় লৌকিকতা বজায় রাখতে গিয়ে সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে মধ্যবিত্ত।
ন্যূনতম সোনার গয়না কিনতে গিয়ে অনেকের বাজেট শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার পরেও আসন্ন লোকসভা ভোটে এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি জেলার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে।স্বর্ণশিল্পীদের একাংশ জানান, সোনার অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি সমাজের একটা বিরাট অংশের মানুষের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতা সকলেই সঙ্কটে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সকলেই চাইছেন, রাজনৈতিক দলগুলি স্বর্ণশিল্প নিয়ে সরব হোক। এই শিল্প এবং শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে থাকা পরিবারগুলিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসুক। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পদক্ষেপ করুক।
জেলার স্বর্ণশিল্পীরা বলছেন, “সোনার গয়না ব্যবসায় সঙ্কটে পড়েছেন ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। আমরা নিজেদের মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে রাজনৈতিক দলগুলি এ নিয়ে সরব হলে সঙ্কট মুক্তির বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাবে।”
রাজনৈতিক দলগুলি কি সত্যিই এই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে?জেলার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্যে স্পষ্ট, তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নিয়ে সরব হলেও আলাদা করে স্বর্ণশিল্পের সঙ্কট নিয়ে ভাবেনি। তাদের ইস্তাহারেও এর কোনও প্রতিফলন নেই। যদিও সকলের কমবেশি দাবি, ক্ষমতায় এলে সমস্যার স্থায়ী সমাধানে মনোযোগী হবে।
সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মণ্ডলের এক সদস্য বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপর জোর দেওয়ার কথা বলে আসছি। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম, জিএসটি চালু হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সঙ্কটে পড়বে। সেটাই হচ্ছে। স্বর্ণশিল্প তারই জ্বলন্ত উদারহণ।” তিনি আরও বলেন, “এটা ঠিক, আমরা হয়তো আলাদা করে স্বর্ণশিল্প নিয়ে সরব হইনি। তবে সমগ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বাঁচাতে সব সময় রাস্তায় নেমেছি। আগামী দিনেও লড়াই চালিয়ে যাব।”তৃণমূলের বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার এক নেতা বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর সবার দিকে সমান নজর রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন এই ধরনের শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি কতটা আন্তরিক ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। অপেক্ষা করুণ স্বর্ণব্যবসায়ীদের জন্য তিনি নিশ্চয়ই আলাদা ভাবে কোনও না কোনও পদক্ষেপ করবেন। বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য বলেন, “নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য ভাবেন। সেখানে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলে আলাদা করে কিছু নেই। তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করতে আগামী দিনে নিশ্চয়ই কোনও পদক্ষেপ করবেন।”
কল্যাণীতে দুঃসাহসিক ছিনতাই! কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা লুঠ
Durga Puja 2024: অভিনব উদ্যোগ! মহালয়ার দিন অঙ্কন প্রতিযোগিতা করল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাব
কাঁচরাপাড়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মাল চুরি, মুল পান্ডা সুমন রায় গ্রেফতার
Durga Puja 2024: খুঁটি পুজো দিয়ে শুরু হল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের এ বছরের পুজো
ইটালিতে জি৭ বৈঠকে জেলেনস্কি-মোদী বৈঠক, যুদ্ধ বন্ধের জন্য কী বললেন?
নিয়োগ মামলার তদন্তে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আরও জমি বাজেয়াপ্ত করল ইডি
রাজ্যের ৪ বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থীর নাম ঘোষনা তৃণমূলের
চন্দবাবুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কেনো এলেন না নীতিশ? খোঁচা বিরোধীদের, নীতিশকে ঘিরে জল্পনা
উত্তরের চা বলয়ে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে ধস! রাশ ধরুক আরএসএস, জোর চর্চা দলের অন্দরে
একী কাণ্ড? বাংলায় ৩ বিজেপি সাংসদ যোগাযোগ করছেন তৃণমূলের সঙ্গে!