কয়েকদিন পরেই জগদ্ধাত্রী পুজো, আসুন জেনেনি জগদ্ধাত্রী পুজো কি, কেন এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা - Bangla Hunt

কয়েকদিন পরেই জগদ্ধাত্রী পুজো, আসুন জেনেনি জগদ্ধাত্রী পুজো কি, কেন এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

By Bangla Hunt Desk - November 02, 2021

দুর্গাপূজার ঠিক এক মাস পরে, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী জগদ্ধাত্রী হলেন জগতের ধাত্রী বা পৃথিবীর পালিকা। তিনি দেবী দুর্গারই আর এক রূপ। দেবী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। তাঁর হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ; গলায় নাগযজ্ঞোপবীত। বাহন সিংহ, করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান।

হিন্দু উপনিষদের একটি কাহিনী অনুসারে মহিষাসুর বধের পর দেবতারা নাকি খুব অহংকারী হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের ধারণা হয়েছিল, দেবী দুর্গাকে অস্ত্রদান করার ফলেই এই বিজয়। এই ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণ করতে যক্ষরূপে আবির্ভূত হলেন শক্তির উৎস ব্রহ্ম। দেবতাদের পরীক্ষা করার জন্য একটি ঘাসের খণ্ড সামনে রেখে সেটিকে জয় করতে বললেন। অগ্নি ও বায়ু তাঁদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও সেই তৃণখণ্ডটিকে দগ্ধ বা বিধৌত করতে পারলেন না। অবশেষে দেবতারা বুঝতে পারলেন, যাবতীয় শক্তির উৎস এই ব্রহ্ম, যিনি বিরাজ করেন জগতের মাতা জগদ্ধাত্রী রূপে। তাঁর পূজা করলে জয় করা যায় যাবতীয় হিংসা আর অহংকারকে।

আমাদের এই বাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে, নদীয়া জেলার সদর কৃষ্ণনগরে। কিংবদন্তী আছে, নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করা হয়। নজরানা দিতে অপারগ রাজা বন্দী হয়ে মুর্শিদাবাদে (মতান্তরে মুঙ্গেরে) স্থানান্তরিত হন। মুক্তির পর নদীপথে কৃষ্ণনগরে প্রত্যাবর্তনের সময় ঘাটে বিজয়াদশমীর বিসর্জনের বাজনা শুনতে পান রাজা। বুঝতে পারেন যে সেই বছর দুর্গাপূজার সময় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপূজার আয়োজন করতে না পেরে দুঃখিত রাজা সেই রাতেই মা দুর্গাকে স্বপ্নে দেখেন আর আদেশ পান জগদ্ধাত্রীর রূপে পরবর্তী শুক্লানবমী তিথিতে পূজা করার। সেই থেকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে জগদ্ধাত্রী পূজা হয়ে আসছে। রাজবাড়ির দরজা জগদ্ধাত্রী পূজার সময় আজও খোলা থাকে। পূজা পুরনো প্রথা মেনে হয় শুধুমাত্র নবমী তিথিতে।

জগদ্ধাত্রী পূজা আজ কিংবদন্তীর পর্যায়ে চলে গেছে হুগলী জেলার চন্দননগরে। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবর্তক ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। জানা যায়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের ফরাসি সরকারের দেওয়ান। প্রায় আড়াইশো বছর আগে, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পূজা দেখে মুগ্ধ হয়ে ইন্দ্রনারায়ণ চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টিতে জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন করেন। এই পূজা চন্দননগরে আদি পূজা নামে পরিচিত। এখানকার প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল সনাতনরীতির প্রতিমায় সাদা সিংহ এবং বিপরীতমুখী অবস্থানে হাতি। শোনা যায়, বিসর্জনের সময় আদি প্রতিমা জলে পড়লেই শুশুক বা সাপের দেখা পাওয়া যায়। স্থানীয় বিশ্বাসে এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রতা। চন্দননগরের পূজার আর এক বৈশিষ্ট্য হল বিশাল উচ্চতার প্রতিমা আর আলোকসজ্জা। পূজার বিসর্জনও দেখবার মত। এছাড়া বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী গ্রামে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সহধর্মিণী সারদা দেবীর জন্মভিটার জগদ্ধাত্রী পূজা খুব বিখ্যাত। রামকৃষ্ণ মিশনেও এই পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন সারদা দেবী।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


প্রাসঙ্গিক খবর