সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো, আসুন জেনে নিই মা দূর্গা কি ও কেন' র সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা - Bangla Hunt

সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো, আসুন জেনে নিই মা দূর্গা কি ও কেন’ র সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

By Bangla Hunt Desk - October 15, 2020

শ্রীয়া চক্রবর্ত্তী; সামনে আসন্ন বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূজা, কিন্তু এই মা দূর্গার পুজে ও পদ্ধতির কিছু অন্তর্নিহিত অর্থ আছে, আজ আমি সেই বিষয়ে একটু আলোচনা করবো। দূর্গা পুজো কবে কিভাবে শুরু হয় , অকালবোধন কি এগুলো আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কিছু না কিছু জানি, কিন্তু এই যে দেবীর পূজো হয়, তার কি অর্থ আমরা অনেকেই জানি না।

প্রথমে আসা যাক মা দূর্গার নামের ব্যাখ্যায়:-

‘দূর্গা’ শব্দটি এসেছে ‘দূর্গ’ থেকে, দূর্গ, অর্থাৎ (দুঃখে যেখানে গমন করা হয়) আমরা আমাদের দুঃখ বিনাশ করতে তাই দূর্গার আশ্রয় গ্রহন করি।

দূর্গার দশটি হাত কেন ?:-

এই দশ হাত দশটি ইন্দ্রিয় এর প্রতীক মাত্র, দেবী দশ হাত দিয়ে আমাদের দশ ইন্দ্রিয় কে রক্ষা করেন।
আমাদের দশটি ইন্দ্রিয়ই আমাদের দুঃখের মূল কারণ, দেবী আমাদের দুঃখ হরণ করেন, এই দশ ইন্দ্রিয়ের ছিদ্র স্বরূপ আমাদের মন কে আগলে রাখেন, কারণ আমাদের মন সর্বদা বহির্মুখী, চঞল।

দূর্গার দশ হাতে অস্ত্র থাকে কেন?:-

মন স্বরূপ দশ ইন্দ্রিয় কে বদ্ধ করে রাখার জন্য দেবীর দশ টি হাত বন্ধ করে অস্ত্র থাকে।

দূর্গার পূজায় ঘট বসানো হয় কেন:-

ঘট ভক্তের প্রতীক, ঘট হল এখানে শরীর রূপী, ঘটের জল হল মন , ঘটের উপর রাখা আমপাতা হল ইন্দ্রিয়, জলের নীচে রাখা সোনা জীবাত্মা।

নবরাত্রির অর্থ কি? ন দিনে ন দেবীর পূজা করা হয় কেন? :-

নবরাত্রি হল সেই নয় দিন যেখানে পূরাণ মতে দেবী নয় রূপে মহিষাসুর এর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন,
“মহিষাসুর” হল আমাদের ভিতরের সেই কু-আত্মা বা কু-চিন্তা,, দেবী নয় রূপে সেই কু- চিন্তা কে দমন করেন।
নয় দেবী হলেন:- শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মান্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী, সিদ্ধিদাত্রী।

এই নয় দেবীর পূজা করলে আমাদের মনের কু-চিন্তা রূপী মহিষাসুর কে দেবী নিধন করেন।

দূর্গাপূজায় কলাবউ কি? :-

কলাবউ হলেন দেবীর রূপ, এখানে নবপত্রিকা রূপে দেবীকে বোধন বা পূজা করা হয়। কারণ সমস্ত জীবকূলেই দেবীর অস্তিত্ব বর্তমান।
(আমরা অনেকেই কলাবউ কে গনেশ এর বউ বলে জানি, কিন্তু কলাবউ গনেশ এর বউ না, গনেশ এর দুই বউ ঋদ্ধি ও সিদ্ধি। )

নবপত্রিকা কি কি? :-

১.কলা:- দেবী ব্রহ্মানী বিরাজ করেন কলা গাছে
২.কচু:-দেবী কালিকা বিরাজ করেন কচু গাছে
৩.হলুদ:- দেবী দূর্গা বিরাজ করেন হলুদ গাছে
৪.জয়ন্তী:-দেবী কার্তিকি বিরাজ করেন জয়ন্তী গাছে
৫.বেল:-দেবী শিবা বিরাজ করেন বেল গাছে
৬.ডালিম:- দেবী রক্তদন্তিকা বিরাজ করেন ডালিম গাছে
৭.অশোক:- দেবী শোকরহিতা বিরাজ করেন অশোক গাছে
৮.মানকচু:- দেবী চামুন্ডা বিরাজ করেন মানকচু গাছে
৯.ধান:- দেবী মহালক্ষী বিরাজ করেন ধান গাছে।

অর্থাৎ আমরা যে সমস্ত গাছ দেখি তার প্রায় সবেতেই দেবী দূর্গা বিরাজমান।

দেব দেবীর বাহন থাকার অর্থ কি? :-

বাহন অর্থাৎ যে বহন করে চলে সেই বাহন, এবার দেবী দূর্গা সহ লক্ষী, সরস্বতী, গনেশ, কার্তিক যে দেবীর সাথে আসেন তাদের প্রত্যেকের ই আলাদা আলাদা বাহন ও তার অর্থ আছে।

দূর্গার বাহন সিংহ:-

আমরা জানি সিঃহ বনের ও পশুদের রাজা, এখানে সিংহ রূপী রাজা আমাদের মনের পাশবিক প্রবৃত্তি বিনাশ করে। মনের ওপর রাজত্ব করে।

লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা:-

পেঁচা দিনে দেখে না, রাতে দেখে , অর্থাৎ অন্ধকারে ও নিশানা ঠিক রাখতে শেখায় আমাদের পেঁচা, আমাদের দিকভ্রান্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করে পেঁচা।

সরস্বতীর বাহন হাঁস:-

হাঁস যেমন জলটুকু ফেলে দুধটুকুই খায়, সেরকম আমাদের খারাপ ছেড়ে ভালো টুকু গ্রহন করতে শেখায় হাঁস।

গনেশ এর বাহন ইঁদুর:-

ইঁদুর সমস্ত কিছু কাটে একাগ্র চিত্তে। আমাদের মনের চঞ্চলতা আটকায় ইঁদুর। একাগ্র হতে শেখায়।

কার্তিকের বাহন ময়ূর:-

ময়ূর সাপকে খায় অর্থাৎ সাপ তীর্যক গতি সম্পন্ন, আমাদের মনের তীর্যক গতি রোধ করে ময়ূর। আমাদের চঞ্চল মনকে আটকে চিত্তবিক্ষেপ নাশ করা শেখায়।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


প্রাসঙ্গিক খবর