ভারতবর্ষের ইতিহাসে মহান মারাঠা সম্রাট ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের নাম স্বর্নাক্ষরে লেখা রয়েছে। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের অসাধারন বীরত্বের কাহিনী সম্পর্কে জানে না এমন খুব কম ব্যাক্তিই আছে। ভারতবর্ষের ইতিহাসে এমন অনেক মহান সম্রাট শাসন করেছে যারা তাদের অসাধারন বীরত্বের জন্য স্মরনীয় হয়ে আছে। কিন্তু ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ এমনই একজন রাজা ছিলেন যার দক্ষ স্থল সেনার পাশাপাশি একটি শক্তিশালী নৌবাহিনীও ছিল যার কারনে তাঁকে ভারতীয় নৌবাহিনীর জনক বলা হয়। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের জীবনের অসংখ্য যুদ্ধের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন যুদ্ধ হচ্ছে প্রতাপগড়ের যুদ্ধ। ১৬৫৯ সালের ১০ নভেম্বর ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ ও বিজাপুরের শাসক আদিল শাহের সেনাপতি আফজল খানের মধ্যে এই যুদ্ধ হয়েছিল যাতে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ জয়ী হয়েছিলেন।
এই যুদ্ধের পরই মারঠা সাম্রাজ্যের বিস্তার শুরু হয়। ভারতবর্ষের রাজনীতিতে এক সিংহ হৃদয় পুরুষের আবির্ভাব হয় যিনি মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। একদিকে মুঘল, অন্যদিকে আদিল শাহ উভয় পক্ষকেই শক্ত হাতে দমন করেছিলেন তিনি। মারাঠা সাম্রাজ্যের গঠন তার সময়েই শুরু হয়। যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হওয়ার পাশাপাশি দক্ষ শাসকও ছিলেন ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ।
১৫৩০ সালের পর থেকে শুরু থেকেই ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। একদিকে উত্তর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করে। আকবর সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করে। অন্যদিকে দক্ষিন ভারতে ক্ষমতার দখল নিয়ে রাজনৈতিক সংকট দেখা যায়। দক্ষিন ভারতে সেসময় একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজত্ব ছিল। ১৫৬৫ সালে পাঁচটি ডেকান প্রদেশ আহমেদনগর, বিজাপুর, গোলকোন্ডা, বিদার ও বেরার যৌথভাবে বিজয়নগর আক্রমন করে। ইতিহাসে এই যুদ্ধ তালিকোটার যুদ্ধ নামে পরিচিত, এই যুদ্ধের পরই বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এই পাঁচটি ডেকান প্রদেশ এর আগে একত্রে বাহমানি সাম্রাজ্য নামে পরিচিত ছিল। ১৩৪৭ সালে আলাউদ্দিন বাহমান শাহ এর প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৪৯০ থেকে ১৫১৮ এর মধ্যে এই সাম্রাজ্য পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এদের একত্রে ডেকান সাম্রাজ্যও বলা হত। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কৃষ্ণদেব রায় এই বাহমানি সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে যার কারনে এই সাম্রাজ্য ভেঙে যায় পাঁচ ভাগে। যার কারনে ১৫৬৫ সালে এই পাঁচটি প্রদেশ একত্রে বিজয়নগর আক্রমন করেছিল। পাঁচটি ডেকান প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল বিজাপুর যার শাসক ছিল আদিলশাহি বংশ। এই আদিল শাহি রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা ছিল ইউসুফ আদিল শাহ। এই আদিল শাহি বংশেরই সেনাপতি ছিল আফজল খান।
১৬৩০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী শিবনেরী দুর্গে জন্ম হয় ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের। তার বাবা শাহাজী ভোঁসলে এবং মা জিজাবাই। ছোটবেলা থেকের তার মা তাকে রামায়ান মহাভারত শোনাতো। শাহাজি ভোঁসলে সেসময় পুনের জায়গিরদার ছিল যা বিজাপুরের সুলতান আদিল শাহের অধীনে ছিল। খুব অল্প বয়স থেকেই মারাঠা সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখতেন শিবাজী মহারাজ যার কারনে ১৬৪৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই শিবাজি মহারাজ তোর্না দুর্গ বিজয় করেন। এর পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে তিনি পুনের কাছে আরও বেশ কিছু দুর্গ জয় করেন, যার মধ্যে পুরন্দর, কোন্ধানা এবং চাকান দুর্গ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও পূর্ব পুনের সুপা, বারামতি, ইন্দপুর এলাকা নিজের অধীনস্ত করেন। এরপর তিনি পশ্চিম কোঙ্কন উপকূলের দিকে কল্যান নামক গুরুত্বপূর্ন শহর জয় করেন। বিজাপুরের সুলতান এই খবর জানতে পেরে শিবাজী মহারাজের বাবা শাহাজি ভোঁসলেকে ১৬৪৮ সালের ২৫ জুলাই গ্রেফতার করেন। তবে একবছর পর তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। ১৬৪৯ থেকে ১৬৫৫ অবধি শিবাজী মহারাজ তার সাম্রাজ্য বিস্তার বন্ধ রাখেন। ১৬৫৬ সালে জাভেলি উপত্যকা বিজয়ের মাধ্যমে পুনরায় সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করেন তিনি। বর্তমান মহাবালেশ্বরের কাছেই অবস্থিত এই জাভেলি উপত্যকা। জাভেলি বিজয়ের পরই শিবাজী মহারাজ দক্ষিন এবং দক্ষিন পশ্চিম মহারাষ্ট্র বিজয় শুরু করেন। শিবাজী মহারাজের সাম্রাজ্য বিস্তারে ভীত হয়ে পড়ে বিজাপুরের আদিল শাহি রাজত্ব। ততদিনে আদিল শাহের মৃত্যু হয়েছে। বিজাপুরের শাসনভারের দায়িত্বে রয়েছে আদিল শাহের স্ত্রী বারি সাহেবা। তিনি সেনাপতি আফজল খানকে পাঠান শিবাজী মহারাজকে জীবিত অথবা মৃত যেকোনও অবস্থায় ধরে আনতে। আফজল খানের বিশ্বাস ছিল সে শিবাজী মহারাজকে বন্দী করতে পারবে কারন ৩৫,০০০ সেনার বিশাল সৈন্য বহর ছিল তার। আফজল খান খুবই শক্তিশালী ছিল, প্রায় সাড়ে ছয়ফুট উচ্চতার আফজল খান বিজাপুরের হয়ে অনেক যুদ্ধ জয় করেছিল। আফজল খানের সেনা প্রথমেই তুলজা ভবানী মন্দির এবং পান্ডাহারপুরের বিঠোবা মন্দির ধ্বংস করেন। এর মাধ্যমে আফজল খান শিবাজী মহারাজকে সামনে আনার চেষ্টা করছিলেন। শিবাজী মহারাজ গোরিলা যুদ্ধে পারদর্শী ছিলেন। তিনি জানতেন ৩৫,০০০ সেনার বিশাল সেনার সাথে তার ৭০০০ এর মারাঠা সেনার সমতলে লড়াই করা সম্ভব নয়। তাই তিনি প্রতাপগড় দুর্গে চলে যান। তিনি ঠিক করেন যুদ্ধ প্রতাপগড়েই হবে। প্রতাপগড় দুর্গ এমন ভাবে তৈরি এবং তার আশেপাশের উপত্যকার কারনে সেখানে সরাসরি সেনা অভিযান করা খুবই সমস্যার। আফজল খান প্রথমে ভেবেছিল শিবাজী মহারাজ হয়তো পুনেতে আছেন কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন শিবাজী মহারাজ প্রতাপগড় দুর্গে আছেন। আফজল খান নিজেও জানতেন প্রতাপগড় দুর্গে সরাসরি সেনা অভিযান প্রায় অসম্ভব। আফজল খানের কাছে বিশাল অশ্বারোহী সেনা ছিল কিন্তু প্রতাপগড় দুর্গ ঘেরাবন্দী করবার জন্য তা যথেষ্ট ছিলনা। দুই মাস ধরে অপেক্ষা করার পর আফজল খান কৃষ্ণাজী ভাস্কর নামে এক ব্রাহ্মন সহ কিছু লোককে চিঠি দিয়ে শিবাজী মহারাজের কাছে দূত হিসাবে পাঠায়। চিঠিতে আফজল খান জানায় শিবাজী মহারাজ যে সব দুর্গ জয় করেছে সেগুলো তার অধীনেই থাকবে শুধু তাকে বিজাপুরের অধীনে থাকতে হবে। এছাড়াও আফজল খান শিবাজী মহারাজের সাথে দুর্গের বাইরে আলাদা করে সাক্ষাৎ এর আর্জি জানায়। শিবাজী মহারাজ কৃষ্ণাজী ভাস্করকে দারুন অভ্যত্থনা জানান এবং যথেষ্ট সেবা যত্ন করেন। তবে শিবাজী মহারাজ সন্দেহ করেছিলেন আফজল খান হয়ত তাকে হত্যা বা গ্রেফতার করতে পারে কারন এর আগেও আফজল খান এধরনের কাজ করেছিলেন, ১৬৩৯ সালে এক রাজার সাথে আলোচনার সময়ে তার এই হাল করেছিল। ১০ নভেম্বর, ১৬৫৯ সালে প্রতাপগড় পাহাড়ের নীচে উভয়ে সাক্ষাৎ করেন। দেখা করবার নিয়ম ছিল উভয়ে মাত্র একজন লোককে নিয়ে আসবে সাথে করে এবং একটি মাত্র তরোয়াল থাকবে প্রত্যেকের কাছে। তবে শিবাজী মহারাজ পুরো প্রস্তত হয়ে গিয়েছিলেন, তিনি জামার ভিতর কবজ পরেছিলেন, বাম হাতে বাঘ নখ এবং ডান হাতে ছোরা নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রতাপগড় পাহাড়ের নীচে বিশেষ তাঁবু তৈরি করা হয়েছিল উভয়ের সাক্ষাৎ এর জন্য। আফজল খানের কাছে হীরের তরোয়াল ছিল যা তাকে উপহার দিয়েছিল আদিল শাহ। আফজল খান সুযোগ বুঝে শিবাজী মহারাজের উপর ছুরিকাঘাত করে কিন্তু শিবাজী মহারাজের কবজ থাকায় ছুরির আঘাত লাগেনি। সাথে সাথে শিবাজী মহারাজ বাঘনখ বসিয়ে দেয় আফজল খানের পেটে। আফজল খানের দেহরক্ষী বাডা সৈয়দ শিবাজী মহারাজের উপর আক্রমন করতে আসে তরোয়াল দিয়ে কিন্তু শিবাজী মহারাজের দেহরক্ষী জিভা মহালা তাকে হত্যা করে। আহত অবস্থাতেও আফজল খান কোনও রকমে তাঁবুর বাইরে বেড়িয়ে পালকিতে বসে পড়ে। কিন্তু শিবাজী মহারাজের বিশ্বস্ত সেনাপতি সম্ভাজি কভজি কোন্ডালকর পীছু পীছু ধাওয়া করে আফজল খানের শিরচ্ছেদ করে। পরে কাটা মাথাটি মহারাজ শিবাজীর মা জিজাবাইকে দেখানোর জন্য রায়গড়ে পাঠানো হয়েছিল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আফজাল খানের বন্দী থাকাকালীন তার স্বামী শাহাজি রাজে ভোঁসলের সাথে দুর্ব্যবহার এবং তার বড় ছেলে সম্ভাজি শাহাজি রাজে ভোসলের মৃত্যুতে খানের ভূমিকার জন্য প্রতিশোধ চেয়েছিলেন। এরপরে শিবাজী মহারাজ একটি তোপ চালিয়ে তার লুকিয়ে থাকা সেনাকে আদেশ দেয় বিজাপুরী সেনার উপর আক্রমন করতে। প্রতাপগড়ের এই যুদ্ধে বিজাপুরের ৫০০০ এর বেশী সেনা নিহত হয়, যেখানে ১৭৩৪ মারাঠা সেনা বীরগতি প্রাপ্ত হন। এই যুদ্ধে শিবাজি মহারাজ বিজয়ী হন। এই যুদ্ধে প্রায় ৩০০০ বিজাপুরী সেনাকে বন্দী করা হয়, সাথে আফজল খানের দুই ছেলেকেও বন্দী করা হয়। এই যুদ্ধের পর শিবাজী মহারাজের নাম সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। শিবাজী মহারাজ এতটাই মানবিক ছিলেন তিনি যুদ্ধ বন্দীদের উপর কোন অত্যাচার করেননি। কিছুদিন পর তাদের নিজ গৃহে ফেরত পাঠিয়ে দেন। শিবাজী মহারাজের মহানুভবতায় প্রভাবিত হয়ে সিদ্দি হিলাল এর মতোন আফজল খানের অনেক জেনারেল সহ সেনা শিবাজী মহারাজের হয়ে আনুগত্য স্বীকার করেন। প্রতাপগড় যুদ্ধের পর শিবাজী মহারাজের বিজয়রথ চলতেই থাকে যা ওনাকে ছত্রপতি হিসাবে বিখ্যাত করে দেয়।
কল্যাণীতে দুঃসাহসিক ছিনতাই! কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা লুঠ
Durga Puja 2024: অভিনব উদ্যোগ! মহালয়ার দিন অঙ্কন প্রতিযোগিতা করল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাব
কাঁচরাপাড়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মাল চুরি, মুল পান্ডা সুমন রায় গ্রেফতার
Durga Puja 2024: খুঁটি পুজো দিয়ে শুরু হল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের এ বছরের পুজো
ইটালিতে জি৭ বৈঠকে জেলেনস্কি-মোদী বৈঠক, যুদ্ধ বন্ধের জন্য কী বললেন?
নিয়োগ মামলার তদন্তে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আরও জমি বাজেয়াপ্ত করল ইডি
রাজ্যের ৪ বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থীর নাম ঘোষনা তৃণমূলের
চন্দবাবুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কেনো এলেন না নীতিশ? খোঁচা বিরোধীদের, নীতিশকে ঘিরে জল্পনা
উত্তরের চা বলয়ে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে ধস! রাশ ধরুক আরএসএস, জোর চর্চা দলের অন্দরে
একী কাণ্ড? বাংলায় ৩ বিজেপি সাংসদ যোগাযোগ করছেন তৃণমূলের সঙ্গে!
Good post. I learn something new and challenging on blogs I stumbleupon on a daily basis. Its always exciting to read content from other authors and use a little something from other web sites.