বর্তমান যুগের ছবি তোলা এবং পোস্ট করা একটা ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গেছে। তবে বহু আগে যখন ক্যামেরার প্রচলন ছিল না তখন হাতেই ছবি আঁকতো মানুষেরা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য হোক কিংবা পশু-পাখি বা কোন মানুষের ছবি অংকন করা হোক, চিত্রকারীরা তুলিতে এমন টান দিত যে প্রাকৃতিক জিনিস ক্যানভাসে ফুটে উঠতো জীবন্ত হয়ে। তবে এই প্রতিবেদনে এমন একটি ছবির কথা বলা হয়েছে যা সকলের কাছেই ছিল অভিশপ্ত। সেই ছবিটির নাম হল দ্য ক্রাইং বয়। এই চিত্রটি অংকন করেছিলেন ইতালীয় চিত্রশিল্পী জিওভান ব্রাগোলিন। চিত্রশিল্পীর আসল নাম ছিল ব্রুনো আমাডিও।
তখনকার দিনে অর্থাৎ বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ৭০ থেকে ৮০ দশক নাগাদ প্রত্যেকটি মানুষ তাদের ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চিত্র টানিয়ে রাখত দেওয়াল গুলিতে।
অর্থাৎ বলতে গেলে তখনকার দিনের দেওয়ালে বিভিন্ন ধরনের চিত্র টানিয়ে রাখা ছিল এক ধরনের ফ্যাশন। চিত্রকর জিওভান ব্রাগোলিনের অংকন করা চিত্র ১৯৫০-৮০ দশকে বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। অধিকাংশ মানুষই এই চিত্র কিনে নিজের বাড়িতে শোভা বাড়ানোর জন্য রাখছিলেন। তবে ৮০-র দশকের পর থেকেই আচমকা বদলে যায় গোটা পরিস্থিতি। সেই সময় প্রায় ১৬ টি বাড়ির পুড়ে ছাইয়ে পরিণত হয়ে গেছিল। তবে প্রত্যেকটি ঘটনাতে দমকল কর্মীদের একটাই বক্তব্য ছিল যে বাড়িগুলির আসবাবপত্র সব পুড়ে গেলেও শুধুমাত্র এই ছবিটি পোড়েনি। এছাড়াও আরো তাজ্জবের বিষয় ছিল যে প্রত্যেকটি বাড়িতেই উপস্থিত ছিল তা ক্রাইং বয়ের পেইন্টিংটি। পরবর্তীতে এই ঘটনাগুলির পর থেকেই অভিশপ্ত হিসাবে পরিচিতি পায় পেইন্টিংটি।
পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ঠিক একইভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছিল রন এবং মে নামের দম্পতিদের বাড়ি। তাদের বাড়িতেও ছিল দ্যা ক্রাইং বয় পেইন্টিংটি। তবে এই দম্পতিরা এই পেইন্টিংকে দায়ী করেছিলেন বাড়িতে সর্বনাশ হওয়ার জন্য। যদিও পরবর্তীতে দম্পতিদের এই অভিযোগ একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।
এরপর থেকেই একের পর এক দুর্ঘটনা হওয়ার কারণে সকলের মনে একটাই প্রশ্ন জেগে ছিল পেইন্টিংয়ে থাকা এই ছেলেটি কে?
আরো পড়ুন- ভূতের সঙ্গে বিয়ে হত যে দেশে
একটি সংবাদপত্রের পক্ষ থেকে কলমের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল যে স্প্যানিশের একটি অনাথ আশ্রমের দুঃখী শিশুদের ছবি আঁকতেন চিত্রকার জিওভানও। যদিও পরবর্তীতে শোনা গেছিল যে ওই অনাথ আশ্রমটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আরো একটি গল্পের প্রচলন রয়েছে যে পরবর্তী সময় নাকি একজন স্কুল শিক্ষক জর্জ ম্যালরি চিত্রকর জিওভানওকে খুঁজে বের করে তার কাছে এই চিত্রের সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। তখন চিত্রশিল্পী জানিয়েছিলেন যে” চিত্রে আঁকা শিশুটির নাম ডন বনিলো। সে একজন স্প্যানিশের পথ শিশু। ১৯৬৯ সালে শিশুদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আমার। বিশ্বযুদ্ধ শেষের পর ইতালি থেকে পালিয়ে এসেছিল শিশুটি। তবে রহস্যজনক এক অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল শিশুটির বাবা-মায়ের। সেই ঘটনার পর থেকেই শিশুকে সকলে এল ডায়াবলো নামে ডাকতে শুরু করেছিল। এই শব্দের অর্থ ছিল শয়তান। অর্থাৎ শিশুকে কেউ দত্তক নেওয়ার জন্য যেরকম রাজি ছিল না সেরকমই কেউ নিজের বাড়িতেও রাখতে চাইছিল না। কারণ সকলেরই ধারণা তৈরি হয়েছিল এই শিশু যেখানেই যাবে সেখানেই আগুন জ্বালিয়ে দেবে।”
এরপরই নাকি জিওভান শিশুটিকে এক পুরোহিতের অমতেই দত্তক নিয়েছিলেন। এরপরই শিশুটির চিত্র আঁকতে শুরু করেছিলেন। অর্থাৎ শিশুটিকে অপব্যবহার করে ধনী হতে থাকছিলেন চিত্রশিল্পী। তবে আচমকা একদিন তার স্টুডিও পুড়ে গেছিল আগুনে। সকলের মত তিনিও আগুন লাগার জন্য শিশুটিকেই দায়ী করেছিলেন। এই সকল ঘটনার কয়েক বছর পর বার্সেলোনায় এক গাড়ি বিস্ফোরণে আচমকা মৃত্যু হয়ে যায় ওই শিশুটির।
তবে শিশুর মৃত্যুর পরেও তার রহস্য ভেদ করতে উদগ্রীব ছিলেন একাধিক ব্যক্তি। এরপরই একজন সাংবাদিক ড: ডেভিড ক্লার্ক তিনি শিশুটির সম্পর্কে বহু গবেষণা করেছিলেন। কিন্তু সেই গবেষণার কোন তথ্য খুঁজে না পাওয়ার কারণে সাংবাদিকের মনে হয়েছিল যে জর্জ ম্যালরির, জিওভানির সঙ্গে কখনো দেখাই করেননি। হয়তো চিত্রশিল্পী সকল ঘটনা বানিয়ে বানিয়ে বলেছিলেন। এমনও হতে পারে যে ভেনিসে হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জিও কুড়ি ত্রিশ জন শিশুকে কান্নাকাটি করতে দেখেছিলেন আর তাদেরই চিত্র এঁকে দিয়েছিলেন। যেগুলি ১৯৭৯ এর দশকে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতে প্রচুর পরিমানে বিক্রি হয়েছিল।
পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর দ্য সান’ পত্রিকায় ক্রাইং বয় পেইন্টিং নিয়ে ‘ক্রাইং বয় জলন্ত অভিশাপ কি পাঠকদের মধ্যে ভিতীর সৃষ্টি করেছিল। যার কারণ হলো রন ও মে নামে দম্পতির বাড়ি পুড়ে যাওয়া। এরপর থেকে অনেকেই এটা মানতে শুরু করেছিল যে যারাই ছেলেটির ছবি কিনবে তাদের বাড়ি ছয় মাসের মধ্যে পুড়ে যাবে এবং অক্ষত থাকবে ওই পেইন্টিংটি। যেহেতু এই ঘটনাগুলি প্রথম দ্যা সান পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিল তাই সকলের থেকে এই পত্রিকার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। এমনকি শুধুমাত্র সংবাদ প্রকাশিত নয় যাদের বাড়িতে এই ছবি ছিল তাদেরকে এই ছবি সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল পত্রিকাটি। রীতিমতো সে পত্রিকার কথা শুনে প্রায় ২৫০০ টি পরিবারের পক্ষ থেকে ছবি পাঠানো হয়েছিল সংবাদপত্রের অফিসে। অফিসের একটি ঘরে উঁচু পর্বতের মতো স্তূপ জমে গেছিল। যদিও এই ঘটনার এক সপ্তাহ পরে পত্রিকাটি আরেকটি শিরোনাম দিয়ে একই গল্প প্রকাশিত করেছিল। ক্রয়িং-বয় কার্স স্ট্রাইকস এগেইন’ নামে একটি শিরোনাম দিয়ে সংবাদপত্রে লিখেছিল যে আরো এক দম্পতির বাড়ি একইভাবে পুড়ে গেছিল কিন্তু অক্ষত ছিল ওই পেইন্টিং।
পরবর্তীতে পত্রিকাটি তার সর্বশেষ নিউজ প্রকাশিত করেছিল ক্রাইং ফ্লেম নামক শিরোনাম দিয়ে। কারণ তারা উল্লেখ করেছিলেন যে টেমস নদীর ধারে তারা একটি বন ফায়ার করতে গিয়ে সকল ক্রাইং বয়ের পেইন্টিং পুড়িয়ে দিয়েছিলেন।
তবে সত্যিই কি শিশুটির ছবি থাকার জন্য সকলে বাড়িতে আগুন লাগতো ?
পরবর্তীতে এই বিষয়গুলিকে ভালো করে খতিয়ে দেখা হলে জানা গেছিল যে আগুন লাগার পেছনে মূল কারণ থাকতো সিগারেট, বা তারের অসংলগ্নতা বা কোন সময় অতিরিক্ত হট ফ্রাইং প্যান। যদিও পরবর্তীতে এসেক্সের অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ধ্বংসপ্রাপ্ত জায়গা গুলিতে অনুসন্ধান চালিয়ে ওই একটি ক্রাইং বইয়ের ছবি উদ্ধার করেছিলেন। তাই আগুন লাগার পেছনে ছবি দিকেই দায়ী করেছিল বাড়ির মালিকেরা।
বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা! পরবর্তীতে ছবিটিকে নিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে দেখা গেছিল যে ছবিটি তৈরি হয়েছিল অগ্নি প্রতিরোধক বার্নিশ তেল দিয়ে। এছাড়াও ছবিটির ক্যানভাস এতটাই খরচ হতো যে আগুনে পুড়ে যাওয়া থেকে সর্বদাই রক্ষা পেত।
চিত্রকর্মটি কি সত্যিই অভিশপ্ত ছিল?
বিজ্ঞানীদের আগুন ধরার ব্যাখ্যা দেওয়ার পরে প্রমাণিত হয়েছিল যে চিত্রটি অভিশপ্ত নয়। তবে প্রমাণ পাওয়ার পরেও অনেকের ধারণা ছিল যে চিত্রটি অভিশপ্ত এবং সেইগুলি বাড়িতে না রাখার। যদিও পরবর্তীতে ১৯৮১ সাল নাগাদ জিওভান ব্রাগোলিনের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই চিত্রটির রহস্যও চাপা পড়ে গেছিল। কিছু মানুষের ধারণা ছিল এই চিত্রটি অভিশপ্ত নয় তো কিছু মানুষের ধারণা ছিল এটি অভিশপ্ত। তবে চিত্রটিকে কেন্দ্র করে যেহেতু নানান মুখরোচক গল্প তৈরি হয়েছিল তাই চিত্রটি সম্বন্ধে মানুষের আগ্রহের শেষ ছিল না।
কল্যাণীতে দুঃসাহসিক ছিনতাই! কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা লুঠ
Durga Puja 2024: অভিনব উদ্যোগ! মহালয়ার দিন অঙ্কন প্রতিযোগিতা করল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাব
কাঁচরাপাড়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মাল চুরি, মুল পান্ডা সুমন রায় গ্রেফতার
Durga Puja 2024: খুঁটি পুজো দিয়ে শুরু হল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের এ বছরের পুজো
ইটালিতে জি৭ বৈঠকে জেলেনস্কি-মোদী বৈঠক, যুদ্ধ বন্ধের জন্য কী বললেন?
নিয়োগ মামলার তদন্তে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আরও জমি বাজেয়াপ্ত করল ইডি
রাজ্যের ৪ বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থীর নাম ঘোষনা তৃণমূলের
চন্দবাবুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কেনো এলেন না নীতিশ? খোঁচা বিরোধীদের, নীতিশকে ঘিরে জল্পনা
উত্তরের চা বলয়ে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে ধস! রাশ ধরুক আরএসএস, জোর চর্চা দলের অন্দরে
একী কাণ্ড? বাংলায় ৩ বিজেপি সাংসদ যোগাযোগ করছেন তৃণমূলের সঙ্গে!