বিশ্বের সমস্ত শক্তিশালী দেশের নিজস্ব গোপন গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে যার ভিত্তিতে সেই দেশটি নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। গোয়েন্দা সংস্থা গুলির অস্তিত্ব ও তাদের অপারেশনের বাস্তব প্রমান রয়েছে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি সংস্থা আছে যা অত্যন্ত গোপনীয়, এটি কোন দেশের অধীনস্থ নয়। এমনকী এই সংস্থাটির যে অস্তিত্ব আছে তারও সঠিক কোন প্রমান নেই। বলা হয় এই সংস্থাটির অস্তিত্ব ২৫০ বছরেরও বেশী ধরে রয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই সংস্থা সম্পর্কে কোনও প্রমান পাওয়া যায়নি, শুধু বিভিন্নরকম কথা শোনা গেছে। যে গোপন সংস্থার কথা বলা হচ্ছে তার নাম দি অর্ডার অফ ইলুমিনাতি। সাধারনত এই সংস্থাটি ইলুমিনাতি নামে পরিচিত। ইন্টারনেটে ইলুমিনাতি নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে।
ইলুমিনাতি কথাটি সামনে এলেই এর সাথে নতুন ধরনের পৃথিবী, সরীসৃপ, শয়তানের উপাসক, এলিয়েন এইসব কথা আলোচিত হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গোপন সংস্থা ইলুমিনাতি আসলে কী? কেনই বা এই সংস্থা নিয়ে এত আলোচিত হয়! বিশ্বজুড়ে বহু মানুষই এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে।
বলা হয় ইলুমিনাতি কোন একটি দেশ নয় বরং গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রন করে। বিশ্বের বেশীরভাগ শক্তিশালী ও ধনী ব্যাবসায়ীরা এর সদস্য যার মাধ্যমে তারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করে। মহারানী এলিজাবেথ, আইজ্যাক নিউটন, ডেভিড রকফেলার, বিল গেটস, জর্জ ডব্লিউ বুশ, হেনরি ক্রিসেনজার, মার্ক জাকারবার্গ, কেটি পেরি, টেলর সুইফট, রোহানার মতোন বিশিষ্ট তারকা, ব্যাবসায়ী ও রাজনীতিবিদ দের ইলুমিনাতির সদস্য বলে ধরা হয়। শুধু তাই নয় ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এবং ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড বা আইএমএফ এর নামও ইলুমিনাতির সাথে যুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার, ব্যাঙ্ক, খবর, রাজনীতি, বিজ্ঞাপন, সিনেমা সমস্ত কিছুই এই সংগঠন অত্যন্ত গুপ্ত ভাবে নিয়ন্ত্রন করছে বলে বিশ্বাস করা হয়। মনে করা হয় এই সংস্থার সাথে জড়িত কোন ব্যাক্তি যদি সংগঠনের কথা ভুল করেও বাইরে প্রকাশ করে দেয় তাহলে তাকে নিজের জীবন দিতে হবে। এই বিশ্বে যখনই রহস্যাময় কোন ঘটনা ঘটে যার কোন সমাধান পাওয়া যায়না, তাকে ইলুমিনাতির সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়। যেমন ২০১৯ সালে বিশ্বে যখন করোনা মহামারী শুরু হয় তখন চীনকে অভিযুক্ত করা হয় এর জন্য। প্রথমে বলা হয় বাদুর থেকে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। আবার এটাও বলা হয় চীন পরীক্ষাগারে এই ভাইরাস প্রস্তত করেছে। যথারীতি ইলুমিনাতির সাথেও যুক্ত করে দেওয়া হয় এই ঘটনা। তবে এই ঘটনার পেছনে একটি কারনও আছে। চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী ধরা পড়ার চার পাঁচদিনের মধ্যে দ্যাট পপি নামে এক বিখ্যাত আমেরিকান গায়ক একটি গান তৈরি করে যার নাম ডোন্ট গো আউটসাইড। যাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে এই মহূর্তে মানুষকে বাইরে বেরোনো উচিৎ নয়। সাথে সাথে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে মাত্র একজন রোগী পাওয়ার পরই দ্যাট পপি কী করে বুঝতে পারে করোনা ভাইরাস এত অতিমারির রূপ নেবে। এর পরেই পপিকে ইলুমিনাতির সদস্য বলে প্রচার করা শুরু হয়।
১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর গুলি করে হত্যা করা হয় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি। যখন জন এফ কেনেডিকে গুলি করা হয় তখন রাস্তার ধারে এক অজানা মহিলাকে দেখা গিয়েছিল যার হাতে ক্যামেরার মতো অদ্ভুত দেখতে জিনিস ছিল। এই মহিলাটিকে দি বাবুসকা লেডি নাম দেওয়া হয়েছে। এই মহিলাটির সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি পরে। পরে তদন্তে দেখা যায় মহিলাটির হাতে থাকা ক্যামেরার মতো জিনিসটি আসলে একটি পিস্তল। এই ঘটনাও ইলুমিনাতির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। বিখ্যাত পপ গায়ক মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু রহস্যের জন্যও ইলুমিনাতি দায়ী বলে মনে করা হয়। আঠারো শতাব্দীতে ফরাসী বিপ্লব, বিংশ শতাব্দীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সহ যেকোনও বড় যুদ্ধ, হত্যাকাণ্ডের সাথে রহস্যময় সংগঠন ইলুমিনাতি জড়িত বলে মনে করা হয়। তবে এই সংগঠনকে অনেকে এলিয়েন অথবা শয়তানের পূজারীও বলে।
১৯৯১ সালে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ দ্বারা প্রকাশিত একটি বই ব্লাড লাইনস অফ দি ইলুমিনাতির প্রথম কয়েকটি পাতায় স্পষ্ট লেখা আছে যারা ইলুমিনাতির সদস্য তারা শয়তানের উপাসক। অনেকের ধারনা ইলুমিনাতির কোন অস্তিত্ব এখন নাই তবে অনেক ইউরোপীয় সংগঠনের বিশ্বাস ইলুমিনাতির অস্তিত্ব আজও তাদের মধ্যে রয়েছে।
ইলুমিনাতি শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ইলুমিনাটাস থেকে যার অর্থ নিজের মধ্যে জ্ঞানের প্রকাশ ঘটানো এবং অশিক্ষার অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে আসা। জনপ্রিয় মত অনুযায়ী ইলুমিনাতির চিহ্ন হচ্ছে একটি ত্রিভুজের মধ্যে একটি চোখ যাকে দি আই অফ প্রোভিডেন্স বা অল নোয়িং আই বলা হয়। তবে এই চিহ্নের সাথে ফ্রিম্যাসোনারি দলের চিহ্নের মিল আছে যার অর্থ ভগবানের চোখ সবসময় আপনাকে দেখছে, সেজন্য সবাইকে মানবিক হওয়া উচিৎ। ইলুমিনাতির মতোনই ফ্রিম্যাসোনারিও একটি রহস্যময় সংগঠন যা ইলুমিনাতি তৈরির আগে তৈরি হয়েছিল। বলা হয় ফ্রিম্যাসোনারিই একটি ইলুমিনাতি তৈরি হবার৷ ইলুমিনাতি পরে নিজেদের অন্য একটি চিহ্ন তৈরি করে যার নাম দি মিনারভাল আউল বা দি আউল অফ এথেনা৷
প্রাচীন গ্রীসের বু্দ্ধির দেবতা এথেনার নাম অনুসারে এই নাম আসে। খ্রীষ্টান ধর্মেও ত্রিভুজের মধ্যে একটি চোখকে ভগবানের দৃষ্টি বলেই বিশ্বাস করা হয়। খ্রীষ্টান ধর্ম অনুযায়ী ত্রিভুজের তিন কোনাকে ইশ্বরের সৃষ্টি পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার প্রতিক বলে বিশ্বাস করা হয়। যার কারনে অনেক খ্রীষ্টান দেশের নোটেও এই চিহ্ন দেখা যায়। ইলুমিনাতির ইতিহাস জানতে হলে সময়ের একটু পিছনে যেতে হবে।
সময়টা ১৭৭৬ সালের মে মাস, জার্মানির ব্রেভেরিয়া অঞ্চলে একটি ছোট শহর ইঙ্গোলস্টাডে এক শিক্ষক অ্যাডাম উইসাপ্ট বাস করতেন। এই রহস্যময় সংগঠন ইলুমিনাতির প্রতিষ্ঠা এই ২৭ বছর বয়সী শিক্ষক অ্যাডাম উইসাপ্টই। ১৭৪৮ সালে জন্ম হয় অ্যাডাম উইসাপ্টের। ১৭৭৬ সালে ইঙ্গোলস্টাডে ক্যানন ল এর শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সোজা ভাষায় ক্যানন ল কে গীর্জার আইন বলা হত। সেসময় ইউরোপীয়ান দেশ গুলোতে খ্রীষ্টান ধর্ম ও মিশনারীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী ছিল। সেসময় গীর্জার প্রভাব সবচেয়ে বেশী ছিল। কারও ক্ষমতা ছিলনা গীর্জার বিরুদ্ধে কথা বলার। জ্ঞান বিজ্ঞানের বদলে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস বেশী ছিল। এই বিচার ধারার সম্পূর্ন বিরুদ্ধে ছিল অ্যাডাম উইসাপ্ট। তার বক্তব্য ছিল বিজ্ঞান ও ধর্ম একে অপরের প্রতিযোগী নয় বরং বিজ্ঞান ও ধর্ম একে অপরের পরিপূরক। দুই ক্ষেত্রেই মানুষকে স্বাধীনতা পাওয়া দরকার। তিনি একটি নতুন বিশ্ব গঠনের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে সবাই ধর্ম ও বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ পাবে মুক্তোমনে। এই কারনেই তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চার ছাত্রকে নিয়ে তৈরি করে ইলুমিনাতি সংগঠন। এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল সমাজ ব্যাবস্থাকে পরিবর্তন করা যার কারনে প্রথমে এই সংগঠনের নাম ছিল দি অর্ডার অফ পারফেক্টিবিলিস্ট। পরে এই সংগঠনের নাম পাল্টে রাখা হয় দি অর্ডার অফ ইলুমিনাতি। আঠারো শতকে তৈরি হওয়া এই ইলুমিনাতি সংগঠনকে সেসময় জ্ঞানের প্রকাশ হিসাবে ভাবা হত। অ্যাডাম উইসাপ্টের চিন্তাভাবনা ছিল উন্নত বিশ্ব তৈরি করার। কিন্তু শুধুমাত্র পাঁচ জন লোকের চেষ্টায় সমাজ ব্যাবস্থা পরিবর্তন সম্ভব নয়। সেকারনে অ্যাডাম উইসাপ্ট বিভিন্ন দেশ থেকে ধনী ও শিক্ষিত ব্যাক্তিদের ইলুমিনাতির সদস্য করা শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই ইলুমিনাতির সদস্য বেড়ে হয় প্রায় তিন হাজার। এই সংগঠনের প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী ভয় পেতে শুরু করে। সেকারনে ১৭৮৪ সালে ব্রাভেরিয়ার ডিউক চার্লস থিওডর একটি আইন পাশ করায় যাতে সমস্ত গোপন সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
ইলুমিনাতির অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তারও করা হয়। শেষে ইলুমিনাতিতে প্রায় ৩৭ থেকে ৪০ জন সবচেয়ে শক্তিশালী লোক থাকে সদস্য হিসাবে। অ্যাডাম উইসাপ্টের মৃত্যুর পর ইলুমিনাতি সংগঠনের দায়িত্ব এসে পড়ে কিছু ক্ষমতাশীল লোভী লোকের হাতে যাদের চিন্তাধারা অ্যাডাম উইসাপ্টের চিন্তাভাবনার থেকে অনেক আলাদা ছিল। তবে এবার ইলুমিনাতির কার্যক্রম অনেক গোপন ভাবে শুরু করা হয়। এরপর ইলুমিনাতির কোন অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউ কোনওদিন জানতেও পারেনি। বর্তমানে ইলুমিনাতির অস্তিত্ব আছে কী নেই তা কেউই জানে না তবে এটা ঠিক ইলুমিনাতির জন্ম হয়েছিল একটি ভালো উদ্দেশ্যে কিন্তু তা সফল হয়নি।
কল্যাণীতে দুঃসাহসিক ছিনতাই! কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা লুঠ
Durga Puja 2024: অভিনব উদ্যোগ! মহালয়ার দিন অঙ্কন প্রতিযোগিতা করল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাব
কাঁচরাপাড়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মাল চুরি, মুল পান্ডা সুমন রায় গ্রেফতার
Durga Puja 2024: খুঁটি পুজো দিয়ে শুরু হল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের এ বছরের পুজো
ইটালিতে জি৭ বৈঠকে জেলেনস্কি-মোদী বৈঠক, যুদ্ধ বন্ধের জন্য কী বললেন?
নিয়োগ মামলার তদন্তে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আরও জমি বাজেয়াপ্ত করল ইডি
রাজ্যের ৪ বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থীর নাম ঘোষনা তৃণমূলের
চন্দবাবুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কেনো এলেন না নীতিশ? খোঁচা বিরোধীদের, নীতিশকে ঘিরে জল্পনা
উত্তরের চা বলয়ে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে ধস! রাশ ধরুক আরএসএস, জোর চর্চা দলের অন্দরে
একী কাণ্ড? বাংলায় ৩ বিজেপি সাংসদ যোগাযোগ করছেন তৃণমূলের সঙ্গে!