জসীমউদ্দীন একজন বিখ্যাত বাঙালি কবি। তিনি বাংলাদেশে ‘পল্লীকবি’ হিসেবে পরিচিত। তার লেখা ‘কবর’ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় অবদান। পুরো নাম জসীমউদ্দীন মোল্লা হলেও তিনি জসীমউদ্দীন নামেই পরিচিত। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে তার জন্ম। পৈতৃক নিবাস একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। পিতা আনসারউদ্দীন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। শৈশবে ফরিদপুর হিতৈষী স্কুলে জসীমউদ্দীনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। তারপর ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (১৯২১), রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ (১৯২৪) ও বিএ (১৯২৯) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে তিনি এমএ (১৯৩১) পাস করেন।
জসীমউদ্দীনের কর্মজীবন শুরু হয় পল্লীসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে দীনেশচন্দ্র সেনের আনুকূল্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এ কাজে তিনি নিযুক্ত হন। এমএ পাস করার পর থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী ছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগদান করেন। এখানে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত চাকরি করার পর ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি প্রথমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে এখান থেকে ডেপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে অবসর গ্রহণ করে তিনি ঢাকার কমলাপুরে নিজ বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
জসীমউদ্দীনের কবিত্ব শক্তির প্রকাশ ঘটে ছাত্রজীবনেই। তখন থেকেই তিনি তার কবিতায় পল্লীপ্রকৃতি ও পল্লীজীবনের সহজ-সুন্দর রূপটি তুলে ধরেন। পল্লীর মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার অস্তিত্ব যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল। কলেজজীবনে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তার এ কবিতাটি প্রবেশিকা বাংলা সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়। কবি হিসেবে এটি তার এক অসামান্য সাফল্য। তার সাহিত্যের নানা শাখায় কাজ করেছেন, যেমন গাথাকাব্য, খণ্ডকাব্য, নাটক, স্মৃতিকথা, শিশুসাহিত্য, গল্প-উপন্যাস ইত্যাদি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো : নকশীকাঁথার মাঠ (১৯২৯), সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩), রঙিলা নায়ের মাঝি (১৯৩৫), মাটির কান্না (১৯৫১), সুচয়নী (১৯৬১), পদ্মা নদীর দেশে (১৯৬৯), ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে (১৯৭২), পদ্মাপার (১৯৫০), বেদের মেয়ে (১৯৫১), পল্লীবধূ (১৯৫৬), গ্রামের মায়া (১৯৫৯), ঠাকুর বাড়ির আঙিনায় (১৯৬১), জার্মানীর শহরে বন্দরে (১৯৭৫), স্মরণের সরণী বাহি (১৯৭৮), বাঙ্গালীর হাসির গল্প, ডালিম কুমার ইত্যাদি। তার রচিত বাঙ্গালীর হাসির গল্প (দুই খণ্ড, ১৯৬০ ও ১৯৬৪) ও বোবা কাহিনী (১৯৬৪) উপন্যাসটি সুখপাঠ্য।
জসীমউদ্দীন জারিগান (১৯৬৮) ও মুর্শীদ গান (১৯৭৭) নামে লোকসংগীতের দুখানি গ্রন্থ সংকলন ও সম্পাদনা করেন। ১৯৬৮ সালে তার সম্পাদনায় কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত হয় জারিগান। জারিগান একান্তভাবেই বাংলাদেশের নিজস্ব সৃষ্টি। এ গ্রন্থে জারিগানের মোট ২৩টি পালা সংকলিত হয়েছে। গ্রন্থের ভূমিকায় জসীমউদ্দীন জারিগানের উৎস এবং বিভিন্ন এলাকার জারিগানের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। দ্বিতীয় গ্রন্থটি তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়।
তার নকশীকাঁথার মাঠ কাব্যটি দি ফিল্ড অব এমব্রয়ডার্ড কুইল্ট এবং বাঙ্গালীর হাসির গল্প গ্রন্থটি ফোক টেল্স অব ইস্ট পাকিস্তান নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। বাংলা কবিতার ধারায় জসীমউদ্দীনের স্থানটি বিশিষ্ট। তার কবিতা অনাড়ম্ব্বর কিন্তু রূপময়। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও লোকজীবন জসীমউদ্দীনের কবিতায় নতুন রূপ লাভ করেছে।
বাংলাদেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না ও জীবন সংগ্রামের কাহিনীই তার কবিতার প্রধান উপজীব্য। জসীমউদ্দীন প্রেসিডেন্টের প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার (১৯৫৮), রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি (১৯৬৯), বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে (মরণোত্তর, ১৯৭৮) ভূষিত হন। তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ তিনি ঢাকায় মারা যান।
Mamata Banerjee: “Labeled as Bangladeshi Just for Speaking Bengali” — Mamata Sharpens Her Arsenal to Defeat BJP in the 2026 Elections
তৃণমূলের শুদ্ধিকরণে অভিষেক, রিপোর্ট পেলেই ছাঁটাই!
Khuti Puja 2025 | উল্টো রথে খুঁটি পুজোর মধ্যে দিয়ে পুজোর প্রস্তুতি শুরু কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের
ভাঙন পদ্ম শিবিরে, মালদায় তৃণমূলে যোগদান শতাধিক কর্মী সমর্থকের
গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হল এক নাবালিকার
Dilip Ghosh: আজ বিয়ের পিড়িতে দিলীপ ঘোষ! কিভাবে ফুটল বিয়ের ফুল?
‘Bangladesh Should Be Broken Apart,’ Says Tripura’s ‘King’ in Response to Yunus’ Comments
পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানের বলিউড প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাল মহারাষ্ট্র!
Taslima Nasrin: ‘Islam is not my religion…’—A Definitive Statement on Eid
Heatwave Alert: West Bengal, 16 Other States Brace for Extended Heatwave Days from April to June