আজকের মেক্সিকো অতীতে অ্যাজটেক সভ্যতা! মাত্র দুইবছরে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়েছিল স্প্যানিশরা - Bangla Hunt

আজকের মেক্সিকো অতীতে অ্যাজটেক সভ্যতা! মাত্র দুইবছরে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়েছিল স্প্যানিশরা

By Bangla Hunt Desk - April 11, 2023

সিন্ধু সভ্যতার ও মায়া সভ্যতার মতই এক বিশাল উন্নত সাম্রাজ্য ছিল অ্যাজটেক সভ্যতা। ইতিহাসে কোন সাম্রাজ্য এত তাড়াতাড়ি ভাঙেনি যত তাড়াতাড়ি অ্যাজটেক সাম্রাজ্য ভেঙে গেছিল। স্প্যানিশরা মাত্র দুইবছরে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়েছিল। আজকের মেক্সিকো অতীতে অ্যাজটেক সভ্যতা ছিল। একটা সময় গোটা আমেরিকা ইউরোপীয়দের অধীনে ছিল, ইউরোপীয়ানরা আমেরিকার আদি জনগনদের পুরো ধ্বংস করে দিয়েছিল। আমেরিকার আসল অধিবাসী রেড ইন্ডিয়ান সহ অনেক ট্রাইবের মানুষ তাদের উৎখাত করে ইউরোপীয়ানরা। ১৩৪৫ সালে এই সাম্রাজ্য তৈরি হয় এবং ১৫১৯ সালে স্পেন এখানে আক্রমন করে। ১৫২১ সালের মধ্যে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দেয় স্পেন। হয়ত স্পেনের সাথে যুদ্ধে বেঁচেও যেত এই সাম্রাজ্য কিন্তু ইউরোপীয়ানরা তাদের সাথে যে ভয়ানক রোগ নিয়ে এসেছিল তার জন্য এই সাম্রাজ্যের অর্ধেক জনসংখ্যা ধ্বংস হয়ে যায়।

এব্যাপারেই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

মেক্সিকোতে তৈরি এই অ্যাজাটেক সাম্রাজ্য সম্পর্কে বলা হয় এখানকার অধিবাসীরা নোমাডিক বা যাযাবর প্রকৃতির। এইসব লোকেরা বিশ্বাস করত তারা অ্যাজটান ল্যান্ড থেকে এসেছে। কিন্তু ঐতিহাসিকদের মতে ১৩ শতকে মেসোপটেমিয়া থেকে এসে এরা এই সাম্রাজ্য তৈরি করে। এরকমই একটি যাযাবর সম্প্রদায় হচ্ছে মঙ্গোল সাম্রাজ্য। সাধারনত এই ধরনের সম্প্রদায়ের মানুষরা অত্যন্ত নৃশংস হয়। এরা যেখানে যায় সেখানকার অধিবাসীদের পুরো শেষ করে দেয়। তবে বলা হয় অ্যাজটেকরা যে শহর নির্মান করেছিল তা অত্যন্ত সুন্দর ছিল, দূর দূরান্ত থেকে লোক এখানে ব্যবসার জন্য আসত। অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে তাদের উপাস্য ভগবানের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর মন্দির ছিল।

অ্যাজটেকরা পলিথিয়েস্টিক ছিল। যার অর্থ অনেক দেবদেবী ছিল তাদের। ধর্ম সাধারনত দুই ধরনের হয় পলিথিয়েস্টিক ও মনোথিয়েস্টিক। পলিথিয়েস্টিক মানে বহু দেব দেবীর উপসনা যেমন সনাতন ধর্ম, রোমান ও গ্রীক ধর্মে রয়েছে। মনোথিয়েস্টিক মানে একই পরাশক্তির ভক্ত যেমন ইসলাম, খ্রিষ্টান, ইহুদী ধর্ম। অ্যাজটেকদের প্রায় ২০০ উপাস্য দেব দেবী ছিল। তারা ভগবানকে টিওটেল নামে সম্বোধন করত। তাদের প্রধান দেবতার নাম ছিল ওমিশিহুয়াটাল যিনি দুজন মহিলা দেবী ছিলেন এবং ওমিশিসুঠিল যিনি দুজন পুরুষ দেবতা ছিলেন। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এরাই ছিলেন জগৎ এর সৃষ্টিকর্তা। তাদের দেবদেবীকে তিন ধরনের শ্রেনীতে বিভক্ত করা হয়। প্রথমত সূর্যের ও সমস্ত জীবিত প্রানীর দেবতা, দ্বিতীয়ত বিষ্টি ও কৃষিকাজের দেবতা, তৃতীয়ত যুদ্ধ ও ত্যাগের দেবতা।

অ্যাজটেকদের বিশ্বাস অনুযায়ী তারা এই জায়গায় এসে বসতি স্থাপন করেছে তাদের দেবতার নির্দেশ অনুযায়ী। তাদের সূর্যের দেবতা নির্দেশ দিয়েছিল এমন কোনো জায়গায় বসতি স্থাপন করতে যেখানে একটি বাজপাখির মুখে কোন প্রানী থাকবে এবং পাখিটি ক্যাকটাসের উপর বসে থাকবে। তারা সেই অনুযায়ী অনেক জায়গা খুঁজে এই জায়গাটা খুঁজে পায়। অ্যাজটেকরা বিশ্বাস করত তারা পঞ্চম সূর্যে বাস করছে। মানে আমাদের হিন্দু ধর্মে সময়কে চার যুগে ভাগ করা হয়েছে সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ ও কলি যুগ। এখন কলি যুগ চলছে। তেমনি অ্যাজটেকদের বিশ্বাস অনুযায়ী এখন আকাশে পঞ্চম সূর্য রয়েছে। মানে এর আগে চারবার সূর্য সৃষ্টি হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে এটা পঞ্চম বার। তারা সেজন্য সূর্যকে খুশি করতে নরবলি দিত যাতে মানুষের রক্ত ও হৃদয় তাদের উপাস্য দেবতার উদ্দেশ্যে দেওয়া হত। ১৪৮৭ সালে অ্যাজটেক সাম্রাজ্যে গ্রেট পিরামিডে চারদিনের অনুষ্ঠানে প্রায় ১০,০০০-৮০,০০০ লোকের বলি দেওয়া হয়েছিল এতটাই নৃশংস ছিল এরা। তাদের প্রধান পাঁচ ধর্মগুরু যাকে বলি দেওয়া হবে তাকে কোনো উঁচু জায়গায় পাথরের টেবিলের উপর শুইয়ে জীবিত অবস্থায় তার হৃদপিন্ড কেটে বার করে নিত। তবে তার আগে যাকে বলি দেওয়া হবে তাকে ভাল খাওয়ানো হতো।

আরো পড়ুন- আজকের মেক্সিকো অতীতে অ্যাজটেক সভ্যতা! মাত্র দুইবছরে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়েছিল স্প্যানিশরা- দ্বিতীয় খণ্ড

তাদের বিশ্বাস মতে সমগ্র জগৎ তিনভাগে বিভক্ত ট্যামোঅ্যানচ্যান বা পৃথিবী লোক যেখানে সবাই বাস করে, মিক্টল্যান যেখানে মৃত লোকেরা বাস করে যার নয়টি স্তর আছে এবং আকাশ লোক যার ১৩ টি স্তর আছে, একদম সর্বোচ্চ স্তরকে ওমিয়াকোন বলা হয়। আমরা যেমন জানি পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে সেজন্য আবর্তন অনুযায়ী দিন রাত হয়। কিন্তু অ্যাজটেকদের মতে সূর্য অস্ত যাবার সময় মিক্টল্যানে চলে যায়। অ্যাজটেকদের সবচেয়ে বড় ও পবিত্র উৎসব ছিল জিওহোমলোপিলি যা ৫২ বছর অন্তর একবার হত। এখানকার ধ্বংসাবশেষ থেকে জানা গেছে এদের সবচেয়ে বড় উপাস্যালয়ের নাম ছিল টেম্পো মেয়োর।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


প্রাসঙ্গিক খবর