আজকের মেক্সিকো অতীতে অ্যাজটেক সভ্যতা! মাত্র দুইবছরে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়েছিল স্প্যানিশরা- দ্বিতীয় খণ্ড - Bangla Hunt

আজকের মেক্সিকো অতীতে অ্যাজটেক সভ্যতা! মাত্র দুইবছরে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়েছিল স্প্যানিশরা- দ্বিতীয় খণ্ড

By Bangla Hunt Desk - April 11, 2023

অ্যাজাটেকদের রাজধানী ছিল তেনোচটেটল্যান, সেখান থেকে তারা গোটা মধ্য মোক্সিকো সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় উন্নয়ন ও শাসন করত। অ্যাজাটেকরা নাহুটাল ভাষায় কথা বলত। এজন্য তাদের নাহুয়াও বলা হত। তবে অ্যাজটেক নাম দেওয়া হয়েছে উনবিংশ শতকে। এই সাম্রাজ্যের লোকেরা নিজেদের মেক্সিকা বলত, এরই উপর নির্ভর করে আজকের মেক্সিকো নাম এসেছে। অ্যাজাটেক মায়া সভ্যতার মানুষদের মতোই অ্যাজাটেকরা জ্যোর্তোবিজ্ঞানে অত্যন্ত পারদর্শী ছিল। তারা সূর্যের অবস্থান দেখে বলে দিতে পারত ভবিষ্যতে কী হবে, কোন সাম্রাজ্যের কখন পতন হবে।

আরো পড়ুন- আজকের মেক্সিকো অতীতে অ্যাজটেক সভ্যতা! মাত্র দুইবছরে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়েছিল স্প্যানিশরা

এরকমই উদাহারন হচ্ছে মায়া সভ্যতা। মায়াদের ক্যালেন্ডার এতটা উন্নত ছিল যে ২০১২ পর্যন্ত ক্যালেন্ডার তারা তৈরি করে গেছিল। যার জন্য এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, সিনেমা তৈরি হয়৷ যেহেতু ২০১২ এর পর মায়া ক্যালেন্ডার পাওয়া যায়নি আর সেজন্য ধরে নেওয়া হয়েছিল এরপর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। আসলে মায়ারা ২০১২ অবধিই ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল। অ্যাজটেকদের ক্যালেন্ডারও এমন উন্নত ছিল। সেখানে লেখা হয়েছিল ১৫২১ সালে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সেটাই হয়েছিল। অ্যাজটেক ক্যালেন্ডারে ১৮ মাস রয়েছে মানে এক মাসে ওদের হিসাবে ২০ দিন করে ছিল। তবে আরও একটি কথা অ্যাজটেকদের ক্যালেন্ডারে লেখা ছিল যে যখন সব কীছু শেষ হয়ে যাবে তখন ভগবান আসবে যার দাড়ি থাকবে যিনি অ্যাজটেকদের সমস্ত বিপদ থেকে উদ্ধার করবে।

স্পেন থেকে হেরনান করট্রেস বা হেরনান্দ করট্রেস যখন অ্যাজাটেক আক্রমন করতে আসে তখন সেখানকার লোক ভেবেছিল এই বোধহয় সেই ভগবান কিন্তু বাস্তবে হেরনান করট্রেস সবকীছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। প্রধানত উত্তর মেক্সিকোয় অবস্থিত এই অ্যাজাটেক সাম্রাজ্যের একদিকে ছিল উত্তর আমেরিকা, কানাডা, অন্যদিকে ছিল দক্ষিন আমেরিকা। উত্তর আমেরিকার কিছু দেশ, কানাডা এবং ব্রাজিল বাদে প্রায় গোটা এলাকা স্পেন দখল করে নিয়েছিল। নির্মম ভাবে এখানকার অধিবাসীদের হত্যা করে স্পেন এবং তাদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে। ইউরোপীয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ছিল স্পেন ও ইংরেজরা। অ্যাজাটেককে ট্রিপল অ্যালায়েন্স বলা হত বা তিনটি শহরের মিলনস্থল। তেনোচটেটল্যান, ট্যাক্সোপেরোন ও টেক্সকোকো, যার মধ্যে তেনোচট্যাটলান সবচেয়ে বড় শহর ছিল এবং অ্যাজটেকদের রাজধানীও এটি। ১৪২৮ সালে এই শহর তৈরি হয়। যেমন আগে বলা হয়েছে যাযাবররা নৃশংস ছিল ঠিক তেমনি অ্যাজাটেকরা তাদের উপাস্যালয়ে নরবলি দিত। যদি খরা হত কিংবা বন্যা হত এরকম বিভিন্ন কারনে তারা আশেপাশের জঙ্গল থেকে ছোট ছোট সম্প্রদায়ের লোকেদের ধরে এনে বলি দিত। তবে একটা দুটো নয় বরং একসাথে কয়েকশো মানুষের বলি দেওয়া হত। ২০০৬ সালে মেল গিবসনে অ্যাপোক্লিপটো নামে একটি সিনেমা তৈরি করে যাতে অ্যাজাটেকদের ইতিহাস, নরবলি সবকিছু খুব ভালোভাবে দেখানো হয়েছে। এইসময় ইউরোপে শুরু হয় এজ অফ এক্সপ্লোরেশন যার অর্থ ইউরোপীয়ানরা বিভিন্ন দিকে জাহজ নিয়ে বেরিয়ে পড়ত যেখানে পৌঁছাত সেই দেশ দখলের চেষ্টা করত। যেমন ভাস্কো ডা গামা ভারত এসেছিল, ঠিক তেমনি ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করে তারপরেই স্পেনকে অ্যাজাটেকদের ব্যপারে জানানো হয়। স্পেন আমেরিকা দখলের জন্য প্রথমে কিউবা দখল করে। কারন কিউবা আমেরিকার পাশেই অবস্থিত এবং এটি একটি বন্দর দেশ তাই এখান থেকে সহজে আমেরিকা আক্রমন করা যাবে জাহজে করে। ১৫০৩ সালে অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের নতুন রাজা হয় মকতেজুমা যিনি ১৫০৯ অবধি রাজা ছিলেন, এইসময় তিনি অনেক শহর জিতে নেন।

১৫০৪ সালে হেরনান্দ করট্রেস ক্যারিবিয়ান দ্বীপে আসে। তখন হেরনান্দ স্পেনের একজন সাধারন সেনা ছিল তখনও কোন বড় পদ পায়নি। ১৫১১ সালে দিয়েগো ভেলাসকুইজকে কিউবার ভাইসরয় নিযুক্ত করা হয় এবং তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় আমেরিকা দখল করতে। কিন্তু দিয়েগো ভেলাসকুইজ বহুদিন পর্যন্ত আক্রমনে যায়নি কারন তার কাছে আমেরিকা সম্পর্কে কোন তথ্যই ছিলনা। ফ্রান্সিসকো হেরনান্দেজ প্রথম কোন ইউরোপীয়ান ব্যাক্তি যে মেক্সিকোতে যায় প্রথম। ১৫১৭ সালে তিনটি জাহাজে করে ১০০ জন লোক নিয়ে সে মেক্সিকো যায়। ১৫১১ সালে দিয়েগো ভেলাসকুইজকে আদেশ দেওয়া সত্বেও সে আমেরিকা আক্রমন করছিলনা। সেজন্য হেরনান করট্রেস দিয়েগো ভেলাসকুইজকে না জানিয়েই কিছু সেনা নিয়ে মেক্সিকো চলে যায়। হেরনান করট্রেসের কাছে খুবই সেনা ছিল, সেই তুলনায় অ্যাজাটেকদের কাছে অনেক বেশী সেনা ছিল। অ্যাজাটেক সাম্রাজ্যে সবচেয়ে নীচু স্তরের লোকদের সার্ফ বলা হত। বিভিন্ন ট্রাইবের লোকদের জোর করে ধরে এনে অ্যাজাটেকরা তাদের দাস বানাতো, প্রয়োজনে বলি দিত, এদেরই সার্ফ বলা হত। এই সার্ফরা চাইত এই সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাক, সেজন্য তারা হেরনান করট্রেসকে সাহায্য করে। ১৫১৯ সালে হেরনান করট্রেস অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের টাবাসকো পৌঁছায়। সেখানে সে জানতে পারে অ্যাজটেক সাম্রাজ্যের রাজা তখন মকতেজুমা ২. হেরনান করট্রেস ও তার ৪০০ সেনা এরপর মেক্সিকোর আরও ভেতরে অ্যাজটেকদের রাজধানী তেনোচটেটল্যান অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। যাবার পথে ছোট ছোট এলাকা জিততে শুরু করে তার সেনা। এদিকে মকতেজুমা ২ হেরনান করট্রেস সম্পর্কে খবর পেয়েছিলো কিন্তু সে ভেবেছিল বোধহয় ভগবান এসেছে তাদের জন্য সেইজন্য তার লোকের হেরনান করট্রেসকে স্বাগত জানানোর জন্য তৈরি ছিল। লা মালিনচি নামে এক মহিলা হেরনান করট্রেসের সেনার ট্রান্সলেটর হিসাবে কাজ করে। ওদিকে কিউবা থেকে দিয়েগো ভেলাসকুইজ সেনা পাঠায় করট্রেসের বিরুদ্ধে কারন না অনুমতি নিয়ে আক্রমন করার জন্য। সেজন্য অ্যাজটেক সাম্রাজ্য জেতবার জন্য করট্রেস ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। তেনোচটেটল্যানে হেরনান করট্রেসকে অভ্যত্থনা জানানো হয়। কিন্তু সেখানকার স্থানীয় মানুষরা রাজার এই কাজকে একদম সমর্থন করেনি তারা বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহের কারনে কীছুদিনের মধ্যেই মকতেজুমা ২ কে স্থানীয়রাই হত্যা করে। এরপর মকতেজুমা ২ এর ভাইপো কুয়াওটেমক সাম্রাজ্যের দায়িত্ব গ্রহন করে। কুয়াওটেমক রাজা হয়েই স্প্যানিশদের তার সাম্রাজ্য থেকে বের করে দেয়। কিন্তু স্প্যানিশদের শরীরে স্মল পক্সের মতো রোগ ছিল যা মহামারীর মতোন তেনোচট্যাটল্যানো ছড়িয়ে যার কারনে প্রায় ৪০ শতাংশ লোক বা ২,৪০,০০০ লোকোর মৃত্যু হয়।

রাজা কুয়াওটেমকও এই রোগে আক্রান্ত হয়। এই সুযোগে হেরনান করট্রেস তেনোচট্যাটল্যানে আক্রমন করে। ওদিকে কিউবা থেকে আসা সেনা ও স্থানীয় মানুষরাও করট্রেসের সাথে যোগ দেয়। ১৫১৯ সালে অ্যাজটেকদের সাথে স্প্যানিশদের যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৫২১ সালের ১৩ আগস্ট পুরো অ্যাজটেক সাম্রাজ্য হেরনান করট্রেস জিতে নেয়, নারকীয় ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছিল। স্পেন যখন এই খবর পায় তখন করট্রেসকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয় এবং মেক্সিকোর ভাইসরয় হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। আমেরিকাতে স্পেনের কলোনাইজেশনের এটাই ছিল প্রথম পদক্ষেপ। এর পরবর্তী ২০০ সালের মধ্যে ইউরোপীয়ানরা আমেরিকাতে তাদের কলোনী তৈরি করে। ১৫৪৭ সালে মৃত্যু হয় হেরনান করট্রেসের।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন

One Reply to “আজকের মেক্সিকো অতীতে অ্যাজটেক সভ্যতা! মাত্র দুইবছরে এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দিয়েছিল স্প্যানিশরা- দ্বিতীয় খণ্ড”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


প্রাসঙ্গিক খবর