১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত কেন জড়িয়ে পড়েছিল - Bangla Hunt

১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত কেন জড়িয়ে পড়েছিল

By Bangla Hunt Desk - December 16, 2021

আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন তথা মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল একটি ভূখণ্ড, যার নাম বাংলাদেশ। সবুজ জমিমে রক্তিম সূর্যখচিত মানচিত্রের দেশটির স্বাধীনতার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আজ।

৫০ বছর আগে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ভারতের সহায়তায় নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি লাভ করে বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনই হল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের ভূমিকার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এককথায় বলতে গেলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাক সেনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। কিন্তু কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যার জেরে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয় ভারতকে?

১৯৭১ সালের ২৪শে মে ভারতের লোকসভায় এক বক্তব্যে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, যে বিষয়টিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেটি ভারতেরও অভ্যন্তরীণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে যাওয়া শরণার্থীদের কথা উল্লেখ করে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ভারতের ভূমি ব্যবহার করে এবং ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে পাকিস্তান তাঁর সমস্যা সমাধানের করতে পারেন না । এটা হতে দেওয়া যায়না।

যুদ্ধ নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর ইঙ্গিত

১৯৭১ সালের মাঝামাঝি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, সীমান্তে পাকিস্তানের সাথে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করতে পারে কি না?

জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, “আমি আশা করি ভারত সেটা করবে না। আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে। আমরা আলোচনায় বিশ্বাস করি। তবে একই সাথে আমরা আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।”

ইন্দিরা গান্ধী বেশ জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান আর আগের মতো হবে না। তিনি একই সাথে সতর্ক করে বলেন, প্রতিবেশী দেশে যা ঘটছে সে ব্যাপারে ভারত চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে না।

ভারতে হামলা চালায় পাকিস্তান

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলছে ১৯৭১-এর ৩ ডিসেম্বর ভারতে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান । সেই সময় কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বক্তব্য রাখছিলেন ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী । সেই সময়ই ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায় পাক বায়ু সেনা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে অবিলম্বে দিল্লি ফিরে যান ইন্দিরা। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক সেরে মধ্যরাত্রের কিছুটা পরে তিনি রেডিওতে ঘোষণা করেন, “বাংলাদেশে যে যুদ্ধ চলে আসছিল, তা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।”এরপরেই পাকিস্তানের হামলা প্রতিহত করতে শুরু করে ভারত। ভারতের সামরিক বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী একসঙ্গে যৌথবহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

স্বাধীনতা পেল বাংলাদেশ

যৌথবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে পড়ে পিছু হঠতে শুরু করে পাক সেনা। একের পর এক পাক ঘাঁটির পতন হতে থাকে। এমনকী বাংলাদেশের পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিবাহিনীর পাশে দাঁড়ায়। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছে যায় মুক্তিবাহিনী। অন্যদিকে লাগাতার বিমান হামলা চালিয়েও পাক বাহিনীকে পর্যদুস্ত করা হয়। তাছাড়া মুক্তি বাহিনীর গেরিলা আক্রমণও রুখতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। ফলে সবদিক থেকে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাক বাহিনী। ঢাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণের রাখতে ব্যর্থ হয় তারা। যার ফলস্বরূপ ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান। ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের শেষে গড়ে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশ।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন


প্রাসঙ্গিক খবর