২৬ বছর বয়সে মন্ত্রী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের একবর্ণময় রাজনৈতিক জীবন - Bangla Hunt

২৬ বছর বয়সে মন্ত্রী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের একবর্ণময় রাজনৈতিক জীবন

By Bangla Hunt Desk - November 05, 2021

ষাটের দশকের দামাল ছাত্রনেতা থেকে বাংলার রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ। রাজ্য রাজনীতিতে তড়িৎগতিতে উত্থান হয়েছিল সদ্যপ্রয়াত পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের।

ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি সুব্রতর। শিয়ালদহের বঙ্গবাসী কলেজে পড়াশোনার করার সময় কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সেই সূত্রেই ঘনিষ্ঠতা বাংলার রাজনীতির আর এক দামাল চরিত্র প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে। সত্তরের দশকে বাংলার ছাত্র রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম হয়ে উঠেছিল ‘প্রিয়-সুব্রত’ জুটি। এ জুটির সঙ্গেই উচ্চারিত হত সোমেন মিত্রে নামও।

বাংলার রাজনীতিতে তিনি ছিলেন পথ প্রদর্শক। হয়েছিলেন সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী। ছিলেন কলকাতার মেয়র। যাঁর হাসিখুশি মুখে বাংলার রাজনৈতিক ঐতিহ্য বজায় ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকে সেই সদাহাস্যময় মুখটা আর দেখতে পাবে না বাংলা। প্রয়াত হয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একনজরে দেখে নিন তাঁর জীবনী –

১৯৪৬ সালের ১৪ জুন বজবজে জন্ম সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের। কলেজের পড়ার সময়ে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। তখন তিনি শিয়ালদহের বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সুব্রত। রাজনীতিতে সেই হাতেখড়ি।

আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছাত্র রাজনীতির সূত্রেই ঘনিষ্ঠতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে। সত্তরের দশকে প্রিয়-সুব্রত জুটি হয়ে উঠেছিল বাংলার ছাত্র রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম।

সত্তরের দশকেই রাজনীতিতে বার বার শিরোনামে আসেন সুব্রত। ১৯৭১ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়েই জয় ছিনিয়ে নেন। সে সময় কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের সভাপতিও হয়েছিলেন সুব্রত। ’৭২-এ ফের বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে জয়। সে জয়ের পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভার সদস্যও হন সুব্রত। বাংলার সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হওয়ার সে নজির আজও ভাঙা হয়নি কোনও রাজনীতিকের।

জয়ের পাশাপাশি হারের মুখও দেখেছেন। ১৯৭৭ সালের ভোটে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের সময় হেরে যান সুব্রতও। পরে দলবদল করে যোগ দেন সে সময়কার তরুণ তুর্কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে। সালটা ছিল ২০০০। সে বছরই কলকাতার পুরভোটে কংগ্রেসের বিধায়ক পদ ধরে রেখেই ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রতীকে ভোটে দাঁড়ান। জিতে কলকাতার মেয়র হন তিনি। ২০০১ সালে ফের বিধায়ক হয়েছিলেন সুব্রত, তৃণমূলের টিকিটে লড়ে। ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটে হেরে যান কলকাতা উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের লড়াইতে।

তৃণমূলের সঙ্গে সুব্রতর সম্পর্ক সব সময় যে মধুর ছিল, তা বলা যাবে না। ২০০৫ সালে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিরোধের জেরে তৃণমূল ছেড়ে পৃথক মঞ্চ গড়েন সুব্রত। এক সময় কংগ্রেসেও ফিরে গিয়েছিলেন। তবে প্রত্যাবর্তনও করেছিলেন তৃণমূলে। ২০০৮ সালে কংগ্রেসে থাকাকালীন সিঙ্গুরে মমতার ধর্নামঞ্চে যোগ দিয়ে অনেককেই চমকে দেন তিনি। এর বছর দুয়েক পর ২০১০-এ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে ফেরেন। আমৃত্যু সে দলেই ছিলেন সুব্রত।

রাজনীতির আঙিনার পাশাপাশি কলকাতার অন্যতম সেরা দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তা হিসাবেও স্বকীয়তার ছাপ রেখেছিলেন সুব্রত। যা আজও বজায় রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের পুজোকে কেন্দ্র করে বহু বাঙালির উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো।

কালীপুজোর রাতে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে অবসান হল রাজ্য রাজনীতির এক সোনালি অধ্যায়ের। আলোর উৎসবের মাঝে রাজনীতির আঙিনায় নেমে এল বিষাদের ছায়া।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন


প্রাসঙ্গিক খবর