ভারত ও দক্ষিন কোরিয়ার কুটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পূর্ন হল। বিগত পাঁচ দশকে দুই দেশের বন্ধুত্ব অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দক্ষিন কোরিয়ার প্রভাব ততটা নেই কিন্তু তবুও ভারত ও দক্ষিন কোরিয়া দুই দেশ পারস্পরিক সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত। সামরিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রাক্তন দক্ষিন কোরিয়ান রাষ্ট্রপতি মুন জায় ইনের নিউ সাউথার্ন পলিসি বা এনএসপির পর ভারত ও দক্ষিন কোরিয়ার কুটনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বিশ্বরাজনীতির ক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হচ্ছে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চল। এখানে ভারত ও দক্ষিন কোরিয়া উভয়েরই প্রধান সমস্যা একটাই চীন।
যার কারনে দুই দেশেরই উভয়ের উভয়কে প্রয়োজন। তবে একদিকে যখন ইন্দো প্যাসিফিক এবং এনএসপির কারনে স্ট্রাটেজিক ভাবে দুই দেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে তখন অন্যদিকে দক্ষিন কোরিয়ার সাথে ভারতের বানিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলেছে। বিশ্বরাজনীতির ক্ষেত্রে ইদানিং একটি বিশেষ বিভাগে ভারতের সাথে দক্ষিন কোরিয়ার প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে আসিয়ানে হওয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি গুলো থেকে এরকমই মনে হচ্ছে। কিন্তু ভারত ও দক্ষিন কোরিয়ার কুটনৈতিক সম্পর্ক এতটাই মজবুত যে এসব কথা হয়ত অবিশ্বাস্য বলেই মনে হবে। সত্যিই কী আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দক্ষিন কোরিয়ার সাথে ভারতের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে নাকী এটা শুধুই কোন জল্পনা!
দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ন জোট হচ্ছে আসিয়ান। দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার দশটি দেশ ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া,মায়ানমার, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামকে নিয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী সংগঠন আসিয়ান বা অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস। এই সংগঠন প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল ভাগকে ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত করেছে। আমেরিকা ও চীন আসিয়ানকে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির কেন্দ্র হিসাবে মনে করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আসিয়ান দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিকাঠামো গঠনে, শান্তি স্থাপনে ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। আসিয়ান কখনও সামরিক শক্তিশালী দেশগুলোর বিবাদে জড়ায়নি। ২০২১ সালে আসিয়ান দেশগুলোর সম্মিলিত জিডিপি ছিল ৩.৩৫ ট্রিলিয়ন ডলার। পুরো আসিয়ান যদি আলাদা দেশ হত তাহলে আমেরিকা, চীন, ভারত ও জপানের পর বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হত। তথ্য অনুযায়ী ২০৩০ এর পর আসিয়ান বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে উঠে আসবে। বিগত ৫০ বছরে আসিয়ান অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপক উন্নতি করেছে। আসিয়ান আমেরিকা ও চীন উভয়ের সাথেই সমান ভাবে বানিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
২০২০ সালে আমেরিকার সাথে আসিয়ানের বানিজ্য ছিল ৩৬২ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে যেখানে ১৯৯১ সালে যেখানে আসিয়ান ও চীনের মধ্যে বানিজ্য ছিল ৯ বিলিয়ন ডলারের, তা ২০২০ সালে বেড়ে হয় ৬৮৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে চীনের সবচেয়ে বড় বানিজ্যিক সাথী হয়ে ওঠে আসিয়ান। অর্থাৎ চীন ও আমেরিকার অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে না চাইতেও জড়িয়ে পড়েছে আসিয়ান। যেখানে স্পষ্ট বিজয়ী চীনই। দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তার মোটেও ভালোভাবে নেয়নি আমেরিকা, যার করনে আমেরিকা এই অঞ্চলে বিভিন্ন দেশের সাথে তার সামরিক চুক্তি করেছে। সুতরাং স্পষ্টতই দক্ষিন পূর্ব এশিয়াও বিশ্ব রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্র। সুতরাং ভারত ও দক্ষিন কোরিয়া উভয় দেশের ক্ষেত্রেই আসিয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার অস্থির রাজনীতির কারন চীনের আগ্রাসন ও তার বিরুদ্ধে আমেরিকার আগমন। যার প্রমান হচ্ছে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সামরিক খরচ বৃদ্ধি।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী ২০০০ সালে যেখানে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সামরিক খরচ ছিল ২০.৩ বিলিয়ন ডলার সেখানে ২০২১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৩.২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের পর থেকে সামরিক খরচ সবচেয়ে বেশী হয়েছে। আসিয়ান দেশ গুলোর মধ্যে ২০০২ সালের পর থেকে সবচেয়ে বেশী সামরিক খাতে খরচ করেছে সিঙ্গাপুর। ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরের সামরিক বাজেট ছিল ১১.১৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর দ্বিতীয় স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়া ৮.২৫ বিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় স্থানে আছে থাইল্যান্ড ৬.৬ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের সামরিক বাজেট সম্পর্কে সরাসরি কোন তথ্য পাওয়া যায় না, কারন ভিয়েতনাম ২০১৮ সাল থেকে তাদের সামরিক বাজেট প্রকাশ করে না, তবে ধারনা করা হয় ভিয়েতনাম মোটামুটি ৫.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে প্রতিরক্ষা বাজেটে। ভিয়েতনাম তার সামরিক অস্ত্রের জন্য একটা সময় ৭০ শতাংশ রাশিয়ার উপর নির্ভর ছিল, কিন্তু বর্তমানে আমেরিকা ও দক্ষিন কোরিয়া ভিয়েতনামের সামরিক বাজারে ভাগ বসিয়েছে। এদিকে ভারতও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সামরিক বাজারে প্রভাব বিস্তার করছে ধীরে ধীরে। ২০২১ এ ভারত ও ফিলিপিন্সের মধ্যে ব্রাহ্মস মিসাইলের জন্য ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া তাদের নৌবাহিনীর জন্য ব্রাহ্মস মিসাইল কিনবে। ভারতের লক্ষ্য ২০২৬ সালের মধ্যে তাদের সামরিক অস্ত্র বিক্রি হবে পাঁচ বিলিয়ন ডলার এবং এর মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলারই আসবে ব্রাহ্মস থেকে। ভারতের সামরিক ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে দক্ষিন পূর্ব এশিয়া একটি বড় বাজার, এখানে সামরিক অস্ত্র বিক্রিকে কেন্দ্র করেই দক্ষিন কোরিয়া ও ভারতের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
কোরিয়ান এরোস্পেস সংস্থা বা কাই গত ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার সাথে ১৮ টি এফএ-৫০ যুদ্ধবিমানের জন্য ৯১০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। রয়েল মালয়েশিয়ান এয়ারফোর্সের যুদ্ধবিমান কেনার টেন্ডারে দক্ষিন কোরিয়ার কাই এর এফএ-৫০, ভারতের হিন্দুস্তান এরোনটিকস লিমিটেড বা হ্যালের তেজস, পাকিস্তান ও চীনের জেএফ-১৭, রাশিয়ার ইয়াক -১৩০ এবং ইটালির লিওনার্দোর এম-৩৪৬ অংশ নিয়েছিল। মালয়েশিয়া তাদের পুরোনো মিগ-২৯ বিমান গুলোর রিপ্লেসমেন্ট হিসাবে নতুন যুদ্ধবিমান কেনার এই টেন্ডার ডেকেছিল। শেষপর্যন্ত কাই এই চুক্তি পায়। এফএ-৫০ গোল্ডেন ইগল টি-৫০ প্রশিক্ষন বিমানের ওয়েপনাইজড ভার্সন।
দক্ষিন কোরিয়া ২০২৬ এর মধ্যে এই বিমানগুলো সরবরাহ করবে। দক্ষিন কোরিয়া, ইরাক, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স ও ইন্দোনেশিয়ার বায়ুসেনা প্রায় ২০০ টি এফএ ৫০ বিমান ব্যবহার করে। কলম্বিয়া ২০ টি এফএ ৫০ অর্ডার করেছে এবং মিশরের সাথে খুব শীঘ্রই এই বিমানের চুক্তি হবে দক্ষিন কোরিয়ার। মালয়েশিয়ার সাথে গত কয়েক বছরে দক্ষিন কোরিয়ার দুই বিলিয়ন ডলারের সামরিক চুক্তি হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে দক্ষিন কোরিয়ার অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে দক্ষিন কোরিয়ার অস্ত্র বানিজ্য ১৪০ শতাংশ বেড়ে ১৭.৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে যার মধ্যে ১২.৪ বিলিয়ন ডলারের ট্যাঙ্ক, হাউতজার, যুদ্ধবিমান, রকেট লঞ্চার পোল্যান্ডকে দেওয়া হয়েছে। তবে অস্ত্র বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলেও সেই চতুর্থ শতক থেকে যখন ভারত থেকে বৌদ্ধ ধর্ম দক্ষিন কোরিয়াতে যায় তখন থেকে ভারত ও দক্ষিন কোরিয়ার সুসম্পর্ক রয়েছে। ভারত ও দক্ষিন কোরিয়ার বানিজ্য বর্তমানে ১৫ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর যা ২০৩০ এ বেড়ে ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে। ২০১৫ সাল থেকে ভারত ও দক্ষিন কোরিয়ার মধ্যে বিশেষ স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ তৈরি হয়েছে। দক্ষিন কোরিয়া ও ভারত উভয়েরই ইন্দো প্যাসিফিক নীতি একই।
Mamata Banerjee: “Labeled as Bangladeshi Just for Speaking Bengali” — Mamata Sharpens Her Arsenal to Defeat BJP in the 2026 Elections
তৃণমূলের শুদ্ধিকরণে অভিষেক, রিপোর্ট পেলেই ছাঁটাই!
Khuti Puja 2025 | উল্টো রথে খুঁটি পুজোর মধ্যে দিয়ে পুজোর প্রস্তুতি শুরু কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের
ভাঙন পদ্ম শিবিরে, মালদায় তৃণমূলে যোগদান শতাধিক কর্মী সমর্থকের
গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হল এক নাবালিকার
Dilip Ghosh: আজ বিয়ের পিড়িতে দিলীপ ঘোষ! কিভাবে ফুটল বিয়ের ফুল?
‘Bangladesh Should Be Broken Apart,’ Says Tripura’s ‘King’ in Response to Yunus’ Comments
পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানের বলিউড প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাল মহারাষ্ট্র!
Taslima Nasrin: ‘Islam is not my religion…’—A Definitive Statement on Eid
Heatwave Alert: West Bengal, 16 Other States Brace for Extended Heatwave Days from April to June