বাংলাহান্ট ডেস্কঃ পুর-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফিরহাদ হাকিমের দফতরে CBI হানা! সল্টলেকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে হানা দেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ‘পুরোটাই রাজনীতি’, অভিযোগ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। জানা গিয়েছে, বুধবার একযোগে রাজ্যের মোট ১৪টি পুরসভায় পৌঁছন সিবিআই-এর একদল আধিকারিক। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। সেই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে ‘রাজনীতির’ গন্ধ পান ফিরহাদ। তিনি জানেন না কী উদ্দেশ্যে এ দিনের হানা। তবে ত্রাস তৈরির চেষ্টা চলছে বলে কটাক্ষ করেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের প্রায় ১৫ মিনিট ছিলেন সিবিআই গোয়েন্দারা। বেরনোর সময় ওই দফতরের দু’জন কর্মচারীকে গাড়িতে তুলে ডিডি ব্লকে নিয়ে যান।
বুধবার রাজ্যের একাধিক জায়গায় একযোগে তল্লাশিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কলকাতা থেকে জেলা, পুর ও নগরোয়ন্নয় দফতরের পাশাপাশি রাজ্যের একাধিক পুরসভায় তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, চুঁচুড়া, দক্ষিণ দমদম, নিউ ব্যারাকপুর, দমদম, পানিহাটি, কামারহাটি, কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, শান্তিপুর-সহ ১৮টি পুরসভায় তল্লাশি চালাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সিবিআই সূত্রে খবর, মূলত নথি উদ্ধারের জন্যই রাজ্যের এই পুরসভাগুলিতে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে সিবিআই। এদিন কলকাতার নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ১০০ জন সিবিআই অফিসারের ১৬টি দল তল্লাশি অভিযান চালানোর জন্য বের হয়। পুরসভাগুলির আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলবেন গোয়েন্দারা, সিবিআই সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, পুরসভায় অভিযান চালানোর পাশাপাশি, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীলের সংস্থার নামে থাকা এবিএস ইনফোজোনের অফিসেও তল্লাশি চালাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকরা। এর পাশাপাশি অয়নের চুঁচুড়ার পৈতৃক বাড়িতেও গিয়েছে সিবিআইয়ের একটি দল। সেখানে অয়নের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলছেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সিবিআই সূত্রে খবর, ২০১৪ সালের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বিভিন্ন পদে, তা সে মজদুর, ক্লার্ক, ঝাড়ুদার, ড্রাইভার থেকে শুরু করে সব পদেই নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক পুরসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব কাউন্সিলরদের মিটিংয়ে প্রস্তাব পেশ করে তা পাশ করতে হয়। সেক্ষেত্রে পাশ হওয়া রেজিলিউশনে কোন কোন কাউন্সিলরের সই রয়েছে, সেই তথ্যও সংগ্রহ করবে সিবিআই।
উল্লেখ্য, আদালতের রায়ের ভিত্তিতে পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এফআইর দায়ের করেছিল। সিবিআই সূত্রে দাবি, মোটা টাকার বিনিময়ে মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই নিয়োগ দুর্নীতির পিছনে প্রভাবশালীদের একাংশের হাত রয়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এবার তদন্তে সেই সংক্রান্ত প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা করা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অয়ন শীলের থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূ্র্ণ তথ্য পাওয়া যায়। সম্প্রতি ইডির পক্ষ থেকেও রাজ্যের সব পুরসভাগুলির থেকে ২০১৪ সালের পর থেকে পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়। এদিকে, সিবিআইয়ের অভিযান নিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে অভিযানে নেমেছে সিবিআই। এখন কোনও প্রভাবশালীর নাম তদন্তে উঠে আসে কি না, সেটাই দেখার।