ভোটের তাগিদে মাত্র ৬ মিনিটে পাশ কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল, তবু আন্দোলনে অনড় কৃষকরা - Bangla Hunt

ভোটের তাগিদে মাত্র ৬ মিনিটে পাশ কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল, তবু আন্দোলনে অনড় কৃষকরা

By Bangla Hunt Desk - December 01, 2021

১৫ মাস বনাম ৬ মিনিট। তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ১৫ মাস ধরে দিল্লির সীমানায় বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের আন্দোলন চলছে। কেন্দ্র ভ্রুক্ষেপ করেনি। অথচ ভোটের তাগিদে সেই আইন বাতিল করতে লোকসভায় সময় লাগল মাত্র ৬ মিনিট। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যসভায়। সময় আরও কম—৪ মিনিট। অর্থাৎ, যে আইন ১৫ মাস ধরে বাতিল হবে না বলে সরকার পণ নিয়েছিল, সেটাই বাতিল করতে সাকুল্যে সময় লাগল ১০ মিনিট। কিন্তু এই পাশ-পর্বেও বিরোধীদের প্রতি মোদি সরকারের উপেক্ষার ঐতিহ্যে ফাটল ধরল না! বিরোধীদের প্রবল দাবিই সার, আলোচনা ছাড়াই সংসদের দুই কক্ষে বাতিল হল কৃষি আইন।

কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত (Rakesh Tikait) জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে আইন না আনা পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই। সরকারকে ফের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে, দাবি রাকেশ টিকায়েতের।

সোমবার প্রথমে লোকসভায় বিলটি পেশ হয়। বিরোধী শিবির বিলটি নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু সেই দাবি সরকার পক্ষ মানেনি। যার জেরে অধিকাংশ বিরোধী দল লোকসভা থেকে ওয়াক আউট করে। বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে মাত্র ৬ মিনিটে ধ্বনিভোটে কৃষি আইন প্রত্যাহার বিলটি পাশ করিয়ে নেয় সরকার। লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও (Rajya Sabha) একইভাবে বিলটি পাশ করিয়ে নেয় সরকার পক্ষ।

গত ১৫ মাসে কৃষকদের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল কেন্দ্রের অনমনীয় জেদ। সরকারের প্রত্যেক মন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, কৃষি আইন কিছুতেই বাতিল হবে না। দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ—লাঠি, গুলি, পাথরের আক্রমণ, এমনকী গাড়ি চাপার ‘দুর্ঘটনাতেও’ পিছু হটেননি কৃষকরা। সরকারও গ্রাহ্য করেনি। হঠাৎ পাঁচ রাজ্যের ভোটের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রীর বোধোদয়। অথচ এই ১০ মিনিটের একটি অধ্যায়ে পৌঁছনোর জন্য কৃষকদের ৭০০ প্রাণহানি ঘটল। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার ছিল সরকারের কাছে—কৃষি আইন নিয়ে এখনও অনেক জবাব চাইবে বিরোধীরা। এই উপলব্ধিতেই সোমবার আইন বাতিল করা হল কোনও আলোচনা ছাড়া। সম্মিলিত বিরোধীদের অভিযোগ, এর আগে ৬টি আইন এভাবেই বাতিল করা হয়েছিল। সেগুলির ক্ষেত্রে কিন্তু বাতিল বিল সংসদে পেশ করার পর নিয়ম মতো আলোচনা হয়েছে। অথচ কৃষি আইনের ক্ষেত্রে সেই রীতি অমান্য করা হল। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তড়িঘড়ি ধ্বনিভোটে কেন্দ্র পাশ করিয়ে দিল বাতিলের সিদ্ধান্ত। বিরোধীদের উচ্চবাচ্য করতে দেওয়া হল না ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সংক্রান্ত আইন নিয়েও। সরকারও এ ব্যাপারে আগাগোড়াই নিশ্চুপ। ফলে দুই কক্ষেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিরোধী এমপিরা। দফায় দফায় মুলতুবি হয় দুই কক্ষই। শেষ পর্যন্ত সারাদিনের জন্যই স্থগিত করে দিতে হয় সভার কাজ।

কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমারের বক্তব্য, ‘আইন বাতিলের সিদ্ধান্তের পর আর আলোচনার কী থাকতে পারে? প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের প্রতি বেনজির সহমর্মিতার মনোভাব দেখিয়েছেন’ কিন্তু বিরোধীরা এই যুক্তি মানতে নারাজ। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী এবং রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, আমাদের সম্মিলিত বিরোধীদের দাবি, এমএসপি গ্যারান্টি আইন আনতে হবে। সরকার কেন সেই বিষয়ে আজই ঘোষণা করল না? তাহলে কি সরকার এমএসপি আইন আনতে নারাজ? তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, সরকার আর সংসদীয় রীতিনীতির তোয়াক্কা করছে না। প্রতি ক্ষেত্রেই অগণতান্ত্রিক আচরণ চলছে।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন


প্রাসঙ্গিক খবর