করোনার কোপ, এ বছর আড়ম্ভর শুন্য পতিরামের জমিদার ঘোষেদের শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজো - Bangla Hunt

করোনার কোপ, এ বছর আড়ম্ভর শুন্য পতিরামের জমিদার ঘোষেদের শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজো

By Bangla Hunt Desk - October 15, 2020

বালুরঘাট ; উৎসব, আড়ম্বর আগে নাকি মানুষের জীবন? পুজোর দিন দশেক আগেও বারবার ঘুরে ফিরে উঠে আসছিল প্রশ্ন টা। তাই নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনুন, এমনটা চায় না দক্ষিন দিনাজপুর জেলার পতিরামের শতাব্দি প্রাচীন জমিদার ঘোষেদের দুর্গা পুজোর বর্তমান প্রজন্ম সত্তোর উর্ধো ঘোষ দম্পতি।

সেদিকে তাকিয়েই একরাশ বিষন্নতা নিয়ে চলে আসা রীতি ভেঙ্গে আগে ভাগেই সতর্ক হয়ে দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। করোনা আবহে এবার প্রতিমা নয়, এবার নিয়মরক্ষার্থে হবে ঘটপুজো। তাই প্রতি শরৎতে আগমনীর সুরে জমজমাট হয়ে ওঠা পতিরামের জমিদার ঘোষেদের দুর্গাপুজোয় এবার করোনার ছায়ায় কেমন যেন বিশাদে ভরা। নেপথ্য কারণ অবশ্যই রাজ্যের সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ।

বাড়ির লোকজন তো বটেই, এমনকি এই তল্লাটের আট থেকে আশিও অঞ্জলি দিতে এই মণ্ডপেই ভিড় জমান। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী- পুজোর তিনদিন ভোগ খাওয়ার জন্য মণ্ডপের সামনে হুড়োহুড়ি তো রয়েছেই। এছাড়াও রয়েছে মায়ের যাওয়ার বেলায় মহিলাদের সিদুর খেলা জমিদার বাড়ির পুজোর আলাদা একটা যেন ইউ এস পি। কিন্তু করোনা বদলে দিয়েছে সব কিছু।প্রত্যেকবারের মত মুর্তি তুলে পুজো হলে মানুষকে মন্ডপ চত্বরে ঢুকতে বাধা দেওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও করোনা র দরুন বাড়িতে আসছে না কেউ। তাই একরাশ বিষন্নতা নিয়েও করোনা আবহে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেছেন মুর্তি নয় ঘটেই সারবেন এবারের পুজো প্রবীন ঘোষ দম্পতি সাগর ঘোষ ও কল্পনা ঘোষ। তবে শুধু মুর্তিই থাকছে না তবে ষোড়ষী আচারের নিয়ম মেনেই সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমীর দিন গুলোতে পুজো হবে।তাতে কোন খামতি রাখতে চান না তারা।

ছয় পুরুষ পূর্বে। বর্তমানে ঘোষ বাড়ীর গৃহকর্তা পেশায় এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত সাগর কুমার ঘোষ বংশের প্রথা মেনে প্রতিবছরই দুর্গাপূজার আয়োজন করে চলেছেন। আনুমানিক ২৫০ শতাধিক বছর পূর্বে শুরু হওয়া এই দুর্গাপূজায় প্রথম দিকের বছর গুলিতে পতিরাম এলাকার এই জমিদার বাড়ীতে দেবী দুর্গা পূজিত হত টিনের চালা ঘরে। সেই সময় ঘোষ বাড়ীর পূর্ব পুরুষদের ছিল ধান, চালের ব্যবসা। এবং পতিরাম এলাকার আত্রাই নদীপথে সেই ধান চাল রপ্তানি হত তত্‍কালীন পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে। সেকালে দুর্গাপূজার সপ্তমী থেকে নবমী তিন দিন ধরে মঙ্গলচন্ডীর গানের আসর যাত্রা বসত জমিদার বাড়ীর মন্দির চত্বরে। প্রথম দিকে পতিরামের এই জমিদার বাড়ীর দুর্গাপূজায় বলি দেওয়ার প্রথা প্রচলিত থাকলেও দিন বদলের সাথে সাথে সেই প্রথা এখন অতীত। পূজার বিষেসতো এখানে অন্ন ভোগ হয় না ফল মিষ্টি ভোগে পুজো হয় বর্তমানে দেবী এখানে নিয়ম মেনে পূজিত হন। তবে পূজা উপলক্ষ্যে এখন ঘোষ বাড়ীর দালান চত্বরে বসে না মঙ্গলচন্ডী গানের আসর।কুলদেবতা হওয়ার কারনে পঞ্চমীর দিন ঘোষ বাড়ীতে নারায়ণ পূজা দেওয়ার রীতি এবং ষষ্ঠীর দিন বেলগাছতলায় দেবীর বোধন হয় এখানে। অন্নভোগ দেওয়ার প্রচলন নেই, তাই ফল-মূল-লুচি-পায়েস প্রভৃতি ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয় ঘোষ বাড়ীর দুর্গাকে।দশমীতে নৌক পুজো দেওয়ার ও একটা রীতি চলে এসেছে জমিদার ঘোষেদের পুজোয়।

সময়ের ভারে জমিদারির তেজ ধুয়ে মুছে গেলেও আজও শতাব্দি প্রাচীন লাল বাড়ির গায়ে চুঁইয়ে পড়ে আভিজাত্যের অহংকার। সেই অহংকারের টুপিতে অলংকারের পালক রয়েছে জমিদার তকমা থাকা সত্বেও একদিকে স্বদেশি আন্দোলন অন্যদিকে শান্তিনিকেতনে পড়তে গিয়ে স্বয়ং রবিন্দ্রনাথের সংষ্পর্ষে এসে মনটাকে এলোমেলো করে দিলেও পারিবারিক দুর্গোৎসবকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন খামতি রাখেন নি ২৫০ বছরের প্রাচীন পতিরামের জমিদার ঘোষেদের বর্তমানে দায়িত্বে থাকা সাগর ঘোষ ।

তবে দিন বদলের সাথে সাথে জমিদার ঘোষ বাড়ীর দুর্গাপূজার রীতিতে কিছু পরিবর্তন ঘটলেও সেকালের সাবেকি আনার ছোয়া গতবছর অবদ্ধি বজায় ছিল বর্তমান ঘোষ বাড়ীর দুর্গা পূজায়।কিন্তু এতদিনের চলে আসা রীতিতে বাধ সাধল সেই করোনা। তাই আগে ভাগে সতর্কতা অবলম্বন বলে তারা জানান।

জমিদার বাড়ির পুজো চালিয়ে আসা ঘোষ দম্পতি জানান
রাজ্যে করোনার আবহের মাঝে আনন্দ-উৎসব করতেও কোথায় যেন সংকোচ হয়। তাই ভেবেছি এবারটা নাহয় ঘট পুজোই হল।মন তো ভীষণই খারাপ। কিন্তু করোনা আবহে এটাই মনে হয় সঠিক সিদ্ধান্ত। তাদের আরও দাবি এবারটা নাহয় ঘট পুজোই হল। পুজোর জন্য সামনে তো সব বছরগুলোই পড়ে রয়েছে। তখন আবার মেতে উঠব।উৎসবের মরশুমে সংক্রমণ রুখতে এই ছোট্ট পদক্ষেপও যদি কাজে দেয়, সেটাই হবে পুজোর সবচেয়ে বড় উপহার।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন


প্রাসঙ্গিক খবর