আমরা জানি যে পবনপুত্র হনুমান আজীবন ব্রহ্মচর্য পালন করেছেন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল যে তিনি একজন ব্রহ্মচারী হওয়া সত্ত্বেও তার নাকি পুত্র ছিল! এমন কথাই প্রচলিত রয়েছে প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলগুলোতে প্রচলিত রামায়ণের সংস্করণে। তবে এই তথ্য নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারন বাল্মিকী রামায়ণে হনুমানের কোন পুত্র ছিল বলে সেই রকম কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
কৃত্তিবাসের রচিত রামায়ণ অনুযায়ী, হনুমানের পুত্র ছিল আর তার নাম ছিল মকরধ্বজ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত রামের কাহিনী অনুযায়ী, এখানে হনুমানের পুত্র থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে তবে তার নাম নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। এই মত অনুযায়ী তার নাম ছিল মৎসানু।
কিভাবে জন্ম হয়েছিল পবনপুত্র হনুমানের পুত্রের?
লঙ্কাকাণ্ডের কথা তোমরা সবাই জানি যে কিভাবে হনুমান তার লেজে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল রাবণের স্বর্ণের লঙ্কা। এরপর সে আগুন নেভাতে অনুমান সমুদ্রে যান। সেই সময় প্রচন্ড গরমের কারণে তার শরীর থেকে ঝরে পড়া ঘাম গিয়ে পড়ে সামুদ্রিক প্রাণী মকরের মুখে। এভাবেই মকরের গর্ভে আসে একটি শিশু। এই মকর ধরা পড়ে যায় পাতাল লোকের অধীশ্বর রাবণের পুত্র অহিরাবণের সেনাদের হাতে। এরপর মকরের পেট চিরে ফেলে তারা যার ফলে সেই সময় জন্ম হয় তার গর্ভে থাকা শিশুটির। সেই সময় তার নাম দেওয়া হয় মকরধ্বজ। যখন মকরধ্বজ প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন অহিরাবণ তার সাহস এবং শক্তির প্রমাণ পেয়ে তাকে নিযুক্ত করেন পাতাল লোকের প্রবেশপথের রক্ষক হিসেবে।
পরবর্তীকালে রাবণের স্বর্ণের লঙ্কায় রামচন্দ্র আক্রমণ করলে অহিরাবণ রাম ও লক্ষ্মণকে অপহরণ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে তাদের দুজনকে দেবী মহামায়ার সামনে বলি দেবেন। অন্যদিকে হনুমান রাম ও লক্ষণকে খুঁজতে আসেন পাতাল লোকে। সেই সময় তার সাথে পাতাল লোকের দ্বারে দেখা হয় অর্ধেক বানর অর্ধেক সরীসৃপ মকরধ্বজ -এর। তখন তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেয় যে সে হনুমানের পুত্র মকরধ্বজ। এই কথাটি শুনে হনুমান চমকে ওঠে এবং পরে তিনি ধ্যান করে জানতে পারেন সমস্ত সত্যিটা।
তবে মকরধ্বজ হনুমানকে পাতাল লোকে যেতে বাধা দেন। কারণ মকরধ্বজের শিক্ষক ছিলেন অহিরাবণ, তাই তার দেওয়া দায়িত্ব তিনি পালন করে যাবেন। যার ফলে হনুমান মকরধ্বজকে পরাজিত করে বেঁধে ফেলেন। এরপর সেখান থেকে তিনি রাম এবং লক্ষ্মণকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। ফেরার সময় রাম দেখতে পান মকরধ্বজকে। এরপর রাম হনুমানের কাছ থেকে সমস্ত কিছু জেনে মুক্ত করে দেন তাকে। তার সাথে পাতাললোকের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করেন মকরধ্বজকে।
ক্ষত্রিয় বর্ণের জেঠওয়া ( বা জেথওয়া) বংশের মানুষেরা দাবী করে যে, মকরধ্বজের বংশধর তারা। হনুমানকে তারা তাদের ইষ্টদেবতা” হিসেবে পূজা করে। মকরধ্বজের মন্দির ভারতের গুজরাট এলাকায় আছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও ছড়িয়ে রয়েছে রামায়ণের কাহিনী। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াতেও রামায়ণের আলাদা সংস্করণ রয়েছে। এই সংস্করণ অনুযায়ী, হনুমানের পুত্রের নাম ছিল মাচ্ছানু (Macchanu) বা মৎসানু (Matchanu) – এমনটিই উল্লেখ্য পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন- ছত্রপতি শিবাজী খুব বিচক্ষণ রাজা ছিলেন। কিন্তু তাঁর দুই ছেলে এই গুণ পাননি
রামায়ণের এই সংস্করণের কাহিনী অনুযায়ী, যখন হনুমান বানর সেনা নিয়ে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য পাথর দিয়ে সেতু বানাচ্ছিলেন সেই সময় তাদের সেই পাথর যেন কে বা কারা সরিয়ে ফেলছে। এই খবরটি জানার পর হনুমান সমুদ্রে ঝাপ দেন এবং দেখতে পান যে এই পাথরগুলো মৎস্যকন্যারা সরিয়ে দিচ্ছে। খোঁজ নেওয়ার পর তিনি জানতে পারেন যে এই মৎস্য কন্যাদের প্রধান হচ্ছে সুবর্ণমৎস যিনি আসলে রাবণের কন্যা। থাইল্যান্ডের সংস্করণ অনুযায়ী, রাবণের নাম থোতসাকান (Thotsakan), যা সংস্কৃত শব্দ “দশকণ্ঠ” থেকে অনুপ্রাণিত। সুবর্ণমৎসকে যতবার হনুমান ধরার চেষ্টা করছে ততবারই সে পালিয়ে যাচ্ছে, তাকে কিছুতেই ধরতে পারছে না হনুমান। বানর বাহিনী যতবার সেতু বানানোর চেষ্টা করছে ততবারই তিনি তার দলবল নিয়ে সব নষ্ট করে আবার পালিয়ে যায়।
হনুমান সুবর্ণমৎস এর সাথে এমন লুকোচুরি খেলতে খেলতে ধীরে ধীরে তার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করেন। এরপর সুবর্ণমৎসকে তিনি তার এই ভালো লাগার কথা প্রকাশ করেন। তখন সুবর্ণমৎস বলেন যে, তার পিতা রাজ্য রক্ষার্থে সে বার বার নষ্ট করে দিচ্ছে সমুদ্র পথে সেতু বানানোর চেষ্টাকে।
তখন হনুমান সুবর্ণমৎসকে বলেন সীতাহরণ থেকে শুরু করে সমস্ত গল্প। সমস্ত কিছু শোনার পর সুবর্ণমৎস সিদ্ধান্ত নেয় যে সেতু বানানোতে তিনি আর বাধা দিবেন না। আর ততক্ষণে সেও হনুমানকে ভালোবেসে ফেলেছে। পরবর্তীতে একটি ছেলে সন্তান হয় তাদের যার নাম ছিল মাচ্ছানু বা মৎসানু।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও প্রচলিত রয়েছে অহিরাবণ, রাম ও লক্ষ্মণ অপহরণ করা এবং তাদেরকে সেখান থেকে হনুমানের উদ্ধার করার কাহিনী। তবে এই কাহিনীটিতে একটু ভিন্নতা রয়েছে। হনুমান রাম-লক্ষ্মণকে খুঁজতে গিয়ে একটি সরোবর পান। সেই সরোবরের রক্ষক ছিল মৎসানু। এরপর হনুমান এবং মৎসানুর সাথে লড়াই করবার এক পর্যায়ে দৈববাণী হয় যে, মৎসানু হল হনুমানের পুত্র। সেই সময় মৎসানু জানায় যে, অহিরাবণের কাছে সুবর্ণমৎস রেখে চলে যায়। তাই তিনি হল তার পালক পিতা। এই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে সে অহিরাবণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে রাজি নয়। তবে তখন হনুমানকে মৎসানু একটি ধাঁধাঁ বলে, সেই ধাঁধাঁ সমাধান করতে গিয়ে হনুমান বুঝতে পারে যে, এই সরোবরে থাকা পদ্মফুলের মধ্য দিয়ে যেতে হয় পাতাললোক।
একাধিক তথ্য ভিত্তিক লেখা, এই নিয়ে প্রচুর মতামত রয়েছে।
গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হল এক নাবালিকার
Dilip Ghosh: আজ বিয়ের পিড়িতে দিলীপ ঘোষ! কিভাবে ফুটল বিয়ের ফুল?
‘Bangladesh Should Be Broken Apart,’ Says Tripura’s ‘King’ in Response to Yunus’ Comments
পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানের বলিউড প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাল মহারাষ্ট্র!
Taslima Nasrin: ‘Islam is not my religion…’—A Definitive Statement on Eid
Heatwave Alert: West Bengal, 16 Other States Brace for Extended Heatwave Days from April to June
Former Pakistani Prime Minister Imran Khan Nominated for the Nobel Peace Prize
কল্যাণীতে দুঃসাহসিক ছিনতাই! কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা লুঠ
Durga Puja 2024: অভিনব উদ্যোগ! মহালয়ার দিন অঙ্কন প্রতিযোগিতা করল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাব
কাঁচরাপাড়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মাল চুরি, মুল পান্ডা সুমন রায় গ্রেফতার