চলে গেলেন ফুটবলের রাজা পেলে - Bangla Hunt

চলে গেলেন ফুটবলের রাজা পেলে

By Bangla Hunt Desk - December 30, 2022

চলে গেলেন ফুটবলের রাজা পেলে

৮২ বছর বয়সে মারা গেলেন পেলে!

জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ, মরিবার হলো তার সাধ।’

চলে যাওয়ার সময় বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা কি ঈশ্বর পেলেকে দিয়েছিলেন? হয়তো। নইলে তাঁর মৃত্যুটা তো বিশ্বকাপের সময়ই অনেকে ঘোষণা করে দিয়েছিল। কিন্তু ফুটবলের রাজা হয়তো বিশ্বকাপের আনন্দটা ম্লান করতে চাননি বলেই রয়ে গেলেন।

বিশ্বকাপ দিয়েই যে তাঁর বৈশ্বিক মঞ্চে উত্থান, বিশ্বকাপের কারণেই তিনি অনন্য, বিশ্বকাপ এলে তাঁর মতো খুশি মনে হয় না এ পৃথিবীতে আর কেউ হতেন। সে জন্যই কি এ পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার জন্যও বিশ্বকাপের সময়টাকে এড়িয়ে গেলেন এই কিংবদন্তি।

বিশ্বকাপ শেষ হলো, কিছু দিন পরই ৮২ বছর বয়সে আজ চলে গেলেন পেলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো। পরে তাঁর অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকেও জানানো হয় এ খবর।

পেলের সংক্ষিপ্ত জীবনী

১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের মিনাস গ্রেইয়াসে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন অ্যারিন্টোস দ্য নাসিমেন্টো এডসন বা পেলে। বাবার কাছেই ফুটবলের হাতেখড়ি। সেইসময় দারিদ্র এতটাই প্রবল যে একটা বল কেনার সামর্থ্য ছিল না। কাপড় এবং কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে ফুটবল চর্চা চলত বাবা এবং ছেলের। পরিবারের প্রয়োজনে চায়ের দোকানেও কাজ করতে হয়েছে ভবিষ্যতের ফুটবল সম্রাটকে।

এভাবেই খেলতে খেলতে ১৫ বছর বয়সে সাওপাওলোর স্যান্টোস ক্লাবে সুযোগ পান। আর এখান থেকেই উত্থানের উড়ান।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে জায়গা করে নেন তিনি। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপে আবির্ভাব। যেন এলেন দেখলেন এবং জয় করলেন। গ্যারিঞ্চা এবং তাঁর জুটি বিশ্বফুটবলকে নাড়িয়ে দেয়। ১৯৫৮ সালেই প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব দেখান। আয়োজক সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারায় ব্রাজিল। ফাইনালে দুটো গোল করেছিলেন পেলে। চারবছর পরে ফের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। এবার জয়ের ভরকেন্দ্রে পেলে। ফাইনালে চেকস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে পেলের ব্রাজিল। ফাইনালে খোল না করলেও পেলের ক্রীড়াশৈলি মুগ্ধ করে। তবে এই বিশ্বকাপটি গ্যারিঞ্চার বিশ্বকাপ নামেই পরিচিত। ১৯৬৬ সালে ইংল্যাণ্ডের মাটিতে পেলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কড়া ট্যাকেলে খেলতেই পারেননি পেলে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাকে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়।

চারটে বিশ্বকাপ খেলেছেন পেলে। তারমধ্যে ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে পরাজিত করে তিনবার জুলেরিমে কাপ বা বিশ্বকাপ জিতে ট্রফিটি নিয়ে দেশে চলে যায় তারা। ছয়টি ম্যাচে ২৩টি গোল করেছিল ব্রাজিল।
১৯৫৭ থেকে ১৯৭০ সাল অবধি ব্রাজিলের জার্সিতে খেলেছেন। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের সম্মান পেয়েছিলেন। দেশের জার্সিতে ৭৭ টি ম্যাচে ৯২টি গোল রয়েছে। ক্লাব এবং দেশের জার্সিতে মোট ১০০০ গোল রয়েছে তাঁর।

সাওপাওলো ছেড়ে ১৯৭৭ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কসমস ক্লাবে খেলতে আসেন। সেই বছরই তিনি সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় খেলতে আসেন। মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপ ছাড়াও কোপা লিবারদাস,নর্থ আমেরিকান সকার লিগ,ইন্তারন্যাশানাল কাপ জয় ছাড়াও একাধিক ট্রফি জয়েরষনায়ক পেলে। ২০০০ সালে ফিফার বিচারে শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের সম্মান পেয়েছেন। তবে সম্মান পুরস্কারের পেলের ফুটবলের প্রতি অবদানের মাপ করা যাবে না। তার মৃত্যু ফুটবলের সবচেয়ে বড় শুভেচ্ছা দূতের দৌড় থেমে যাওয়ার গল্প।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন


প্রাসঙ্গিক খবর