আশিফুল ইসলাম জিন্নাহঃ মানব সভ্যতা বিস্তারের সাথে ভাষার বিস্তরণের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মধ্য এশিয়া থেকে আর্যদের একটি শাখা ইউরোপে প্রবেশ করে। এদের ভাষাকে বলা হয় ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার উপশাখা হলো ইন্দো-ইরানীয় ভাষা। আর্যভাষা ইন্দো-ইরানীয় ভাষার একটি শাখা। ধর্মগ্রন্থ বেদের ভাষা বলে একে বৈদিক আর্যভাষাও বলা হয়। ভারতবর্ষের আর্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় আনার্য ভাষাগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়। অনার্য ভাষাগুলোর কিছু শব্দ শুধু টিকে থাকে। কালের পরিক্রমায় আর্য ভাষায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিখ্যাত ব্যাকরণবিদ পাণিনি ও ভাষ্যকার পতঞ্জলি এর সংস্কার করেন। তাই এর নাম হয় সংস্কৃত। সংস্কৃত প্রাচীন পৃথিবীর সেরা ভাষাগুলোর একটি। সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়েছে রামায়ণ ও মহাভারতের মত মহাকাব্য। কবি কালিদাস, বিজ্ঞানী আর্যভট্ট এবং বরাহ মিহিরের রচনার ভাষা ছিল সংস্কৃত।
আরো পড়ুন- পৃথিবীর এমন একটি জায়গা, যেটি ৬ মাস এক দেশে, ৬ মাস অন্য দেশে! বদলে যায় আইনও
সংস্কৃত ভাষার যে রূপটি ছিল সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, তা এক সময় শিথিল ও সরল হয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ ধারণ করে। কালক্রমে এগুলোকেই বলা হয় প্রাকৃত ভাষা। এ ভাষাগুলোর প্রকৃতি বা মূল সংস্কৃত, তাই এদের বলা হয় প্রাকৃত ভাষা। অথবা প্রকৃতি অর্থ সাধারণ জনগণ অর্থাৎ প্রাকৃত অর্থ প্রাকৃতজনের ভাষা। প্রাকৃতভাষার শেষ স্তর হচ্ছে অপভ্রংশ। এরকম একটি অপভ্রংশ হচ্ছে শৌরসেনী অপভ্রংশ। মুসলিমরা ভারতে আসার সময় দিল্লি ও তার আশেপাশে যে ভাষা প্রচলিত ছিল তার নাম খাড়িবুলি, যেটি ছিল শৌরসেনী অপভ্রংশের স্থানীয় রূপ।
প্রাচীন ভারতে দুটি লিপির ইতিহাস পাওয়া যায়। একটি ব্রাহ্মী লিপি, অন্যাটি খরোষ্ঠী লিপি। ব্রাহ্মী লেখা হতো বাম থেকে ডানদিকে আর খরোষ্ঠী ডান থেকে বামে। ব্রাহ্মী লিপি থেকেই ভারতের অধিকাংশ লিপি বিকাশিত হয়। এরকম একটি লিপি দেবনাগরি লিপি(উৎপত্তি আনুমানিক একাদশ শতক)। হিন্দি ভাষা লেখা হয় দেবনাগরি লিপিতে। তবে হিন্দি ঠিক কবে থেকে দেবনিাগরি লিপিতে লেখা শুরু হয় তা গবেষণার দাবি রাখে। হিন্দি কবি মালিক মুহম্মাদ জয়সী তাঁর ‘পদুমাবৎ’ কাব্য (যার উপর ভিত্তি করে আলোচিত হিন্দি ছবি পদ্মাবতী নির্মিত হয়েছে) লিখেছিলেন ফারসি হরফে (ব্রিটানিকা)। তবে ফারসি প্রভাবিত আরবি হরফে লিখিত হিন্দুস্তানি সরকারি ভাষা হলেও সাধারণ মাসুষের মধ্যে দেবনাগরি লিপিতে লিখিত হিন্দি অধিক জনপ্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হয়।