১৯৭১ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধ হয় তার ফলেই পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে আজকের বাংলাদেশ গঠন হয়। তেরো দিনের এই যুদ্ধে পাকিস্তানের প্রায় ৯৩,০০০ সেনা আত্মসমর্পন করে। তবে এই যুদ্ধ জয়ের পিছনে এমন এক পরিকল্পনা ছিল যা এর আগে কোনওদিন করা হয়নি। এমন এক মিশন যা পৃথিবীর তাবড় তাবড় গোয়েন্দা সংস্থা গুলো ভাবতেও পারেনি তা সে আমেরিকার সিআইএ হোক কিংবা ভারতের পরম বন্ধু ইসরায়েলের মোসাদই হোক। এমনই এক অসাধারন পরিকল্পনা সম্ভব করেছিলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র এবং ইনটেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি, যার ফলস্বরূপ লজ্জাজনক আত্মসমর্পনের মাধ্যমে পাকিস্তান পরাজিত হয় এবং বাংলাদেশ তৈরি হয়।
১৯৫০ এর দশকে জম্মু কাশ্মীরে একটি রাজনৈতিক দল তৈরি হয় যার নাম জম্মু কাশ্মীর প্লেবিসাইট ফ্রন্ট।
এই দলের লক্ষ্য ছিল এটা ঠিক করা যে জম্মু কাশ্মীরের কাশ্মীর ভারতের অংশ হবে নাকী পাকিস্তানের অংশ হবে অথবা স্বাধীন একটি দেশ হিসাবে থাকবে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিল মির্জা আফজাই বেগ। এই সংগঠনের সাথে কিছুদিন পর এক ব্যাক্তি যুক্ত হয় যার নাম মকবুল ভাট। কিছুদিনের মধ্যেই সংগঠনের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে সে। কিন্তু ধীরে ধীরে অপরাধ মূলক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়তে থাকে সে। যার কারনে জম্মু কাশ্মীর পুলিশ তাকে খুঁজতে শুরু করে। পুলিশের থেকে বাঁচতে মকবুল ভাট ১৯৫৮ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান পালিয়ে যায়। পাকিস্তানে গিয়ে পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দুতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে মকবুল। ততদিনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সাথে রীতিমতো যোগাযোগ শুরু হয়ে গিয়েছিল তার। মকবুল ভাট পাকিস্তানেই একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরি করে ১৯৬৫ সালে যার নাম ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট বা এনএলএফ। এই সংগঠনের কাজ ছিল কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাস তৈরি করা এবং কাশ্মীরকে ভারত থেকে আলাদা করে পাকিস্তানে যুক্ত করা। এই সংগঠনের পেছনে ছিল আইএসআই।
আরো পড়ুন- “মানুষের মাংস খাওয়া কী ঠিক হবে?” এটা কোনও প্রশ্ন নয় বরং প্রশ্ন হলো “কোন লাশের মাংস খাবো?”
১৯৬৬ সালে এনএলএফ জম্মু কাশ্মীরে এক সিআইডি অফিসার অমর চাঁদকে হত্যা করে যার পরেই জম্মু কাশ্মীর পুলিশ মকবুল ভাট সহ এনএলএফের বহু সদস্যকে গ্রেফতার করে। শ্রীনগর আদালতে মকবুল ভাটকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৬৮ সালে ফাঁসির আগেই মকবুল ভাট জেল থেকে পালিয়ে যায়। এই বছরই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী র বা রিসার্চ এন্ড অ্যানলিসিস উইং তৈরি করেন এবং এর প্রধান হিসাবে নিযোগ করা হয় রামেশ্বর নাথ কাওকে। জেল থেকে পালিয়ে গিয়ে মকবুল ভাট শ্রীনগরেই আত্মগোপন করে আইএসআই এর সাথে গোপনে যোগাযোগ করতে থাকে।
১৯৬৯ সালে মকবুলের সাথে পরিচয় হয় ১৭-১৮ বছরের দুজন ছেলে হাসিম কুরেশি ও আশরাফ কুরেশি। জম্মু ও কাশ্মীরের ধনী ব্যাবসায়ী পরিবারের এই দুই ছেলেকে এনএলএফের সদস্য করে মকবুল। এর একবছর পর অর্থাৎ ১৯৭০ সালে মকবুল ভারতের জেলে বন্দী থাকা ৩৬ জন এনএলএফ সন্ত্রাসীকে মুক্তি পাওয়ানোর জন্য এবং কাশ্মীর সমস্যাকে আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনার জন্য একটি ঘাতক পরিকল্পনা তৈরি করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতের একটি বিমান হাইজ্যাক করা হবে এবং সেই বিমানকে লাহোরে আনা হবে। বিমানের যাত্রীদের বন্ধক বানিয়ে ভারত সরকারকে বাধ্য করা হবে তাদের দাবি মানতে, এটাই পরিকল্পনা ছিল মকবুল ও আইএসআই এর। এই পুরো মিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় হাসিম ও আশরাফকে। এর জন্য তাদের রীতিমতো প্রশিক্ষন দেওয়া হয় পাকিস্তানে। এরপর তাদের পিস্তল ও হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়ে শ্রীনগরে পাঠানো হয়। কিন্তু এই দুজন বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে যায় এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা সমস্ত পরিকল্পনা জানিয়ে দেয়। ফলে আইএসআই এর পরিকল্পনা ব্যার্থ হয়ে যায়।
এদিকে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও পরিবর্তন হয়। পাকিস্তানের জেনারেল ইয়াইয়া খানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারন নির্বাচন হয় যাতে পূর্ব পাকিস্তানের মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ দল ১৬৭ আসনে জয়লাভ করে। সেসময় পাকিস্তানের লোকসভায় ৩১৩ টি আসন ছিল। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল জুলফিকার আলি ভুট্টো যে ১২২ এর মতোন আসন পেয়েছিল। র তার এজেন্টদের মাধ্যমে খবর পায় মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখছে যার কারনে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ক্রমাগত পাকিস্তানি সেনাদের পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হচ্ছে এবং পাকিস্তান মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করছে। এই খবর পেয়েই আর এন কাও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে একটি জরুরি বৈঠক করেন, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের কিংবদন্তি ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ। বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনী পাঠানোর কথাও ওঠে কিন্তু স্যাম মানেকশ জানান ভারত এই মহূর্তে যুদ্ধের জন্য প্রস্তত নয় অন্তত ছয় মাস লাগবে প্রস্তত হতে। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ক্রমাগত বিমানে করে পাকিস্তান সেনা ও হাতিয়ার পাঠাতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানে।
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারতের আকাশসীমা হয়েই বিমান মাত্র দুই ঘন্টায় পূর্ব পাকিস্তানে পৌঁছাত। ভারত বারনও করতে পারতো না কারন পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মাঝে ভারত ছিল সেতুর মতোন তাই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভারতকে তার আকাশ সীমা কোন কারন ছাড়া বন্ধ করতে পারতোনা। ভারত বুঝতে পারে যদি আকাশ সীমা অবিলম্বে বন্ধ না করা হয় তাহলে পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে পুরো কব্জা করে ফেলবে যাতে বিপদ বাড়বে ভারতের। র একটা পরিকল্পনা তৈরি করে। হাসিম ও আশরাফ কুরেশিকে তৈরি করে র এই পরিকল্পনার জন্য। হাসিম ও আশরাফ বিএসএফের হাতে গ্রেফতার হয়েছে তা জনত না আইএসআই, এটারই সুযোগ নেয় র। হাসিম ও আশরাফকে পাকিস্তান যে বিমান হাইজ্যাকের জন্য ভারতে পাঠিয়েছিল সেই মতোই পরিকল্পনা তৈরি করে র।
হাসিম ও আশরাফকে নকল বন্দুক ও গ্রেনেড দেওয়া হয়। বহুদিন ধরে অবসরে যাওয়া একটি বিমান গঙ্গাকে তৈরি করা হয় কিছুদিনের মধ্যে। এই বিমানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ত্রিশ জন সদস্য যাত্রী সেজে বসে, হাসিম ও আশরাফকে নির্দেশ দেওয়া হয় এই বিমান হাইজ্যাক করে লাহোরে নিয়ে যাওয়ার। ১৯৭১ সালের ৩০ জানুয়ারি র এর পরিকল্পনা অনুযায়ী হাসিম ও আশরাফ এই বিমান হাইজ্যাক করে লাহোরে নিয়ে যায়৷ আইএসআই খুশি হয়, পাকিস্তানের বড় মন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টো নিজে এসে হাসিম ও আশরাফকে অভ্যত্থনা জানায়, পাকিস্তানে এই দুজনকে রীতিমতো রাজকীয় সম্মান দেওয়া হয়। এরপর পাকিস্তান ভারতের কাছে জানায় এনএলএফের ৩৬ জন সদস্যকে ছেড়ে দেবার জন্য কিন্তু ভারত পরিকল্পনা অনুযায়ী এই দাবী প্রত্যাখান করে তার যাত্রীদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেবার কথা বলে।
কুটনৈতিক চাপে পড়ে পাকিস্তান পাঞ্জাব সীমান্ত দিয়ে ওই ত্রিশ জনকে ভারতে পৌঁছে দেয়। এদিকে হাসিম ৩১ জানুয়ারি ভারতীয় বিমানটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ফলে ভারত সুযোগ পেয়ে যায় এবং ৪ ফেব্রুয়ারী ভারত ঘোষনা করে পাকিস্তানের জন্য তারা আকাশ সীমা বন্ধ করছে। ফলে সমস্যায় পড়ে পাকিস্তান।
ভারতীয় আকাশ সীমা হয়ে পাকিস্তান মাত্র দুই ঘন্টায় পূর্ব পাকিস্তানসে সেনা ও অস্ত্র পাঠাচ্ছিল কিন্তু ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারনে পাকিস্তান বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা হয়ে ঘুরে পূর্ব পাকিস্তানে বিমান পাঠাতে। এতে দুই ঘন্টার জায়গায় নয় ঘন্টা সময় লাগতে শুরু করে এবং খরচ ও চার পাঁচ গুন বেড়ে যায়, ফলে বিমান পাঠানের সংখ্যা বাধ্য হয়ে কমিয়ে দেয় পাকিস্তান। এতে জেনারেল স্যাম মানেকশ যে ছয়মাস সময় চেয়েছিল তাও পেয়ে যায়। ছয়মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী পুরো যুদ্ধের জন্য প্রস্তত হয়ে যায়। ভারত ট্যাঙ্ক ও সেনাবাহিনী পাঠায় পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানের মুজিবুর রহমানের অনুগামী বা স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থক মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষন দেয় র। ফলে যখন যুদ্ধ শুরু হয় মাত্র তেরো দিনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামনে আত্মসমর্পন করে পুরে পাকিস্তান সেনা এবং বাংলাদেশের জন্ম হয়। র এর অসাধারন পরিকল্পনায় রীতিমতো বোকা হয়ে যায় আইএসআই। পরে পাকিস্তান রীতিমতো তদন্ত করে একবছর ধরে এই পুরে ঘটনার। তদন্তে পাকিস্তান বুঝতে পারে গঙ্গা বিমানের হাইজ্যাকিং পুরো র এর পরিকল্পনা এবং হাসিম ও আশরাফ কুরেশি ভারতের এজেন্ট। ফলে হাসিম ও আশরাফকে গ্রেফতার করা হয় এবং সাত বছরের জন্য জেল হয় তাদের। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে হাসিম লন্ডন চলে যায়। মে, ১৯৭৬ সালে মকবুল ভাটকে আবারও গ্রেফতার করা হয় জম্মু কাশ্মীরে। মকবুল ভাট গ্রেফতার হতেই জম্মু কাশ্মীরে এনএলএফের মেরুদন্ড ভেঙে যায়, তবে মকবুল ভাটকে ছাড়ানের জন্য বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন অনেক চেষ্টাই করেছিল কিন্তু শেষপর্যন্ত ১৯৮৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী দিল্লির তিহাড় জেলে মকবুল ভাটের ফাঁসি হয়।
Dilip Ghosh: আজ বিয়ের পিড়িতে দিলীপ ঘোষ! কিভাবে ফুটল বিয়ের ফুল?
‘Bangladesh Should Be Broken Apart,’ Says Tripura’s ‘King’ in Response to Yunus’ Comments
পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানের বলিউড প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাল মহারাষ্ট্র!
Taslima Nasrin: ‘Islam is not my religion…’—A Definitive Statement on Eid
Heatwave Alert: West Bengal, 16 Other States Brace for Extended Heatwave Days from April to June
Former Pakistani Prime Minister Imran Khan Nominated for the Nobel Peace Prize
কল্যাণীতে দুঃসাহসিক ছিনতাই! কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা লুঠ
Durga Puja 2024: অভিনব উদ্যোগ! মহালয়ার দিন অঙ্কন প্রতিযোগিতা করল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাব
কাঁচরাপাড়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মাল চুরি, মুল পান্ডা সুমন রায় গ্রেফতার
Durga Puja 2024: খুঁটি পুজো দিয়ে শুরু হল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের এ বছরের পুজো