১৯৮৬ সালের কোন এক সন্ধ্যায় লন্ডনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মোর্দেকায় নামে এক যুবক। আকর্ষনীয় চেহারা ও ব্যাক্তিত্বের অধিকারী এই যুবকের কাছে তখন সদ্য পাওয়া এক লাখ ডলার রয়েছে। সানডে টাইমস এই ব্যাক্তিটিকে বিশেষ কিছু গোপন তথ্য দেওয়ার কারনে তাকে এই একলাখ ডলার দিয়েছে। হঠাৎ মোর্দেকাই এর চোখ পড়ে এক অসাধারন সুন্দরী যুবতীর উপর। প্রথম দেখাতেই সেই তরুনীর প্রেমে পড়ে যায় মোর্দেকাই। সেই তরুনীর সাথে পরিচয় করবার উদ্দেশ্যে মোর্দেকাই সেই তরুনীর পরিচয় জিজ্ঞেস করে। উত্তরে সেই তরুনী জানায় তার নাম সিন্ডি এবং সে ইসরায়েলের বাসিন্দা। ইসরায়েল নামটা শুনেই মোর্দেকাই এর পায়ের নীচে থেকে যেন মাটি সরে যায়, মোর্দেকাই জানে সে যে তথ্য সানডে টাইমস ও ব্রিটিশ সরকারকে দিয়েছে সেই কথা ইসরায়েল জানতে পারলে তাকে ছেড়ে দেবেনা।
খানিকটা ভয়েই মোর্দেকাই সিন্ডিকে জিজ্ঞেস করে সে কী মোসাদের সাথে জড়িত। জবাবে সিন্ডি জানায় সে কোনওদিন মোসাদের নামই শোনেনি। সাথে সাথে যেন সব ভয় কেটে যায় মোর্দেকাই এর এবং সে সিন্ডির সাথে পরিচয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন- টাকিলার পূর্বপুরুষ! প্রাচীনকালে ব্যবহৃত নয়টি অদ্ভুত পানীয়
চারিদিকে শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত ইসরায়েল দেশটি তৈরি হবার পর থেকেই একের পর এক আক্রমন সহ্য করে আসছে। আরব দেশ গুলো বারবার যৌথভাবে আক্রমন করেছে দেশটিতে। কিন্তু তা সত্বেও ইসরায়েল বারবার শত্রুদের পরাজিত করেছে এবং নিজেদের মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী দেশ হিসাবে উপস্থাপিত করেছে। ইসরায়েলের এই সাফল্যের পেছনে ছিল তার অসাধারন মেধা, উন্নত প্রযুক্তি এবং তাদের শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
১৯৮০ এর দশকে ইসরায়েল ডিমোনা নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টার প্রজেক্টে কাজ করছিলো। এই প্রজেক্ট এতটাই গোপনীয় ছিল যে এই প্রজেক্টে কাজ করা ব্যাক্তিদের কঠোর ভাবে পরীক্ষা করে এখানে নিয়োগ করা হতো। ইসরায়েলের আভ্যন্তরীন গোয়েন্দা সংস্থা সাবাক নিজে প্রত্যেক কর্মচারীকে পরীক্ষা করতো। এই প্রজেক্টেই কাজ করত মোর্দেকাই। মরোক্কন বংশোদ্ভূত এই ব্যাক্তিটির ইচ্ছে ছিল ইসরায়েল বায়ুসেনাতে যোগ দেবার কিন্তু সেখানে পরীক্ষায় ব্যার্থ হয়ে সে বাধ্য হয়ে ইসরায়েল সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।
১৯৮২ সালে লেবানন যুদ্ধের পর থেকে মোর্দেকাই ইসরায়েল বিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। সে কিছু আরব দেশের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। ইহুদী বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন রাকার সাথে ঘনিষ্ঠতা হয় তার, এমনকী রাকার সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতেও থাকতে শুরু করে। ফিলিস্তিন কর্মসূচিকে সমর্থন করার পাশাপাশি ইসরায়েল বিরোধী বক্তৃতা দিতেও শুরু করে মোর্দেকাই কিন্তু তা সত্বেও ইসরায়েলের এত গোপনীয় প্রজেক্টে কাজ পেয়েছিল সে এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার।
মোর্দেকাই ব্যাক্তিগত জীবনে খুবই অস্থির মানসিকতার ব্যাক্তি ছিল। প্রথমে সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শুরু করে, পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে দর্শন নিয়ে পড়া শুরু করে। কিছুদিন পর আবার দর্শন ছেড়ে দিয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়া শুরু করে। পরে আবারও অর্থনীতি ছেড়ে দিয়ে দর্শনে ফিরে আসে সে। এরকম ব্যাক্তি কী করে সাবাকের নজর এড়িয়ে যায় এটা খুবই আশ্চর্যের। ডিমোনা প্রজেক্টে ইন্সটিটিউট ২ এ কাজ করতো মোর্দেকাই। ইনস্টিটিউট ২ ডিমোনা প্রজেক্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ ছিল। এই প্রজেক্টে কাজ করা ২৭০০ কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ১৫০ জনই ইন্সটিটিউট ২ এ কাজ করবার সুযোগ পেয়েছিল। বাইরে থেকে দেখে ইনস্টিটিউট ২ কে মনে হতো একটি দুতলা বাড়ি কিন্তু আসলে এটির তলায় ছয়তলা ভবন ছিল। যার প্রথমে ভাগে পাইপ ছিল, দ্বিতীয় ভাগে কন্ট্রোল রুম, তৃতীয় ভাগে ইউরেনিয়াম রড, চতুর্থ ভাগে উৎপাদন এলাকা, পঞ্চম ভাগে ধাতব অঞ্চল এবং ষষ্ঠ ভাগে তেজস্ক্রিয় অবশেষ নিষ্কাশনের বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। একদিন মোর্দেকাই ক্যামেরা নিয়ে গোপনে প্রবেশ করে ডিমোনা প্রজেক্টে প্রবেশ করে এবং সমস্ত গোপন এলকার যাবতীয় ছবি তোলে। ১৯৮৫ সালে আট বছর এই প্রজেক্টে কাজ করার পর তাকে ডিমোনা প্রজেক্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে রাজনৈতিক কারনে বের করে দেওয়া হয়নি তাকে বরং এই প্রজেক্টে বাজেট কমানোর কারনে মোর্দেকাই সহ বেশ কয়েকজনকে এই প্রজেক্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে তাকে আটমাসের অগ্রীম মাইনে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত তা সত্বেও এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে মোর্দেকাই ঠিক করে ইসরায়েল ছেড়ে চিরকালের মতো বিদেশে চলে যাবে।
মোর্দেকাই প্রথমে গ্রীস যায়, সেখান থেকে থাইল্যান্ড, রাশিয়া এবং নেপাল হয়ে অস্ট্রেলিয়া যায়। সিডনিতে কয়েকমাস কাজ করার পর মোর্দেকাই পৌঁছায় সিডনির সেন্ট জর্জ গীর্জায়। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় জন ম্যাকনাইটের। উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয় এবং ১৭ আগস্ট, ১৯৮৬ মোর্দেকাই খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করে। সে তার নাম পরিবর্তন করে রাখে জন ক্রশম্যান রাখে।
একদিন এক সামাজিক সভায় সে ইসরায়েল ডিমোনা প্রজেক্ট সম্পর্কে আলোচনা করে এবং তার সাথে থাকা সমস্ত ছবি সবাইকে দেখায়। কিন্তু তার কথা সবাই বুঝতে না পারলেও একজন ব্যাক্তি ঠিকই বুঝতে পারে, তার নাম অস্কার গুরেরো। কলম্বিয়ান সাংবাদিক অস্কার গুরেরো এই ছবি গুলোর গুরুত্ব জানতো, সে পরিচয় করে মোর্দেকাই এর সাথে এবং তাকে ছবি গুলোর গুরুত্ব বোঝায়। মোর্দেকাই ঠিক করে এসব ছবি কোন সংবাদ মাধ্যমে বিক্রি করে মোটা অর্থ উপার্জন করবে সে। কিন্ত সে এটাও জানতো যদি এই ছবি প্রকাশিত হয় তাহলে সে চিরকালের জন্য ইসরায়েলে ফিরতে পারবে না এবং তাকে দেশদ্রোহী ঘোষনা করা হবে। কিন্তু অর্থের লোভে সে প্রথমে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদ মাধ্যমে ও আমেরিকান সংবাদ মাধ্যমে যায় এগুলো প্রকাশের জন্য কিন্ত দুজায়গা থেকেই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এই ছবি গুলোর সত্যতার কারন দেখিয়ে। এরপর মোর্দেকাই ও অস্কার গুরেরো লন্ডনে পৌঁছায় এবং সেখানে সানডে টাইমস তাদের সবকথা শোনার পর তারা মোর্দেকাইকে এক লাখ ডলার দিতে রাজি হয়ে যায় এই তথ্যের জন্য। এদিকে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম কাজ করা এক ব্যাক্তি মোর্দেকাই এর সেখানে ছবি বিক্রি করতে আসার এই তথ্য ইসরায়েল দূতাবাসে জানায়। সেখানে থেকে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আভিবে মোসাদের অফিসে এই খবর যায়। সাথে সাথে মোসাদও অবাক হয়ে যায় এত গুরুত্বপূর্ন প্রজেক্টের তথ্য বাইরে এল কীভাবে সেকারনে।
সানডে টাইমস মোর্দেকাইকে শুধু একলাখ ডলারই দেয়নি বরং এই ছবিগুলো থেকে আয় হওয়া অর্থের ৪০ শতাংশ এবং ভবিষ্যতে এই তথ্যের উপর লেখা বইয়ের লভ্যাংশের ২৫ শতাংশও তাকে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। মোর্দেকাইয়ের এই ঘটনায় বিখ্যাত সিনেমা নির্মান সংস্থা ২০ সেঞ্চুরি ফক্স একটি সিনেমাও তৈরি করবে ঠিক করেছিল। মোর্দেকাইকে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দিয়ে শক্ত নিরাপত্তার মধ্যে রেখেছিল সানডে টাইমস। কারন তারা জনতো মোসাদ আসবেই মোর্দেকাইকে ধরতে৷ কিছুদিন পর লন্ডনে এক সন্ধ্যায় তার সাথে পরিচয় হয় সিন্ডির সাথে। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এরপর প্রত্যেকদিনই উভয়ে দেখা করতে থাকে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, পাবে। ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন সিন্ডি মোর্দেকাইকে প্রস্তাব দেয় রোমে ঘুরতে যাবার, সেখানে তার বোনের বাড়ি। কোনরকম সন্দেহ ছাড়াই মোর্দেকাই রাজি হয়ে যায় যা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। এই সিন্ডি আসলে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট ছিল। মোসাদ অস্ট্রেলিয়াতে তাদের এজেন্টের মাধ্যমে জানতে পারে মোর্দেকাই লন্ডনে গেছে। কিন্তু লন্ডনে অপারেশন করা সম্ভব ছিলনা মোসাদের পক্ষে সেজন্য মোসাদ সিন্ডির মাধ্যমে মোর্দেকাইকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে তাকে রোম নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে কারন ইটালিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার সাথে মোসাদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। প্রেমের মোহে পড়ে কোন সন্দেহ না করেই মোর্দেকাই ১৯৮৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রোম চলে যায় সিন্ডির সাথে।
রোমের নির্দিষ্ট বাড়িতে প্রবেশ করার পরই মোর্দেকাইকে আগে থেকেই লুকিয়ে থাকা মোসাদ এজেন্টরা অজ্ঞান করে ফেলে। পরে থাকে একটি গাড়িতে করে ইটালির একটি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি স্পিড বোটে করে তাকে গভীর সমুদ্রে থাকা ইসরায়েল নৌবাহিনীর জাহাজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ইসরায়েল নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো পথে মোর্দেকাইকে অজ্ঞানই রাখা হয়েছিল। ইসরায়েল পৌছাঁতেই তাকে গ্রেফতার করে সাবাক। চোখ খোলার পর মোর্দেকাই দেখতে পায় তার সামনে বসে আছে বেশ কিছু মোসাদ এজেন্ট। মোর্দেকাই বুঝতেই পারেনি সে রোম থেকে ইসরায়েল কীভাবে চলে এসেছে। সে আরও অবাক হয়ে যায় এটা শুনে যে সিন্ডি মোসাদ এজেন্ট যার আসল নাম চেরিল বেনতোফ। কড়া জিজ্ঞাসাবাদের পর মোর্দেকাইকে জেলে বন্দী করা হয়।
এদিকে সানডে টাইমস ইসরায়েল প্রজেক্ট ডিমোনা সম্পর্কে সমস্ত তথ্য প্রকাশ করে দেয়। সানডে টাইমস মোর্দেকাইকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু ব্যার্থ হয়। চল্লিশ দিন পর ইসরায়েল সানডে টাইমসকে জানায় মোর্দেকাই তাদের হেফাজতে আছে। দেশদ্রোহীতার অপরাধে আঠারো বছরের কারাদন্ড হয় মোর্দেকাই এর। এভাবেই মোসাদ তার সমস্ত শত্রুদের খুঁজে খুঁজে বের করে। যার কারনে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা বলা হয়।
Dilip Ghosh: আজ বিয়ের পিড়িতে দিলীপ ঘোষ! কিভাবে ফুটল বিয়ের ফুল?
‘Bangladesh Should Be Broken Apart,’ Says Tripura’s ‘King’ in Response to Yunus’ Comments
পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানের বলিউড প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাল মহারাষ্ট্র!
Taslima Nasrin: ‘Islam is not my religion…’—A Definitive Statement on Eid
Heatwave Alert: West Bengal, 16 Other States Brace for Extended Heatwave Days from April to June
Former Pakistani Prime Minister Imran Khan Nominated for the Nobel Peace Prize
কল্যাণীতে দুঃসাহসিক ছিনতাই! কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা লুঠ
Durga Puja 2024: অভিনব উদ্যোগ! মহালয়ার দিন অঙ্কন প্রতিযোগিতা করল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাব
কাঁচরাপাড়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মাল চুরি, মুল পান্ডা সুমন রায় গ্রেফতার
Durga Puja 2024: খুঁটি পুজো দিয়ে শুরু হল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের এ বছরের পুজো