প্রকৃতি এতটা রহস্যময় যে মানুষের সাধ্য নেই তাকে সম্পূর্ন বোঝার। প্রতিনিয়ত কত যে রহস্যময় ঘটনা ঘটে চলেছে তার কারন অনুসন্ধান করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। প্রকৃতি যেমন মানুষকে জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় উপকরন দেয় ঠিক এখানে পদে পদে মৃত্যুও অপেক্ষা করে রয়েছে। কত রকমের বিষাক্ত জীব, হিংস্র পশু থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিনিয়তই কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। হয়ত প্রকৃতির রহস্য কোনওদিনও সম্পূর্ন ভাবে ব্যাখা করতে পারবে না মানুষ। যেমন রাশিয়ার একদল পর্বতারোহীর সাথে যা হয়েছে তা আজও ব্যাখা করা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনা ডিয়াটলোভ পাস রহস্য নামে পরিচিত। রাশিয়ার তীব্র ঠান্ডায় জঙ্গলে এই পর্বতারোহী দলের সাথে ঠিক কী হয়েছিল তা আজও রহস্যময়।
আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে সেখানে ঠিক কী হয়েছিল তা আজও অধরা।
সালটা ১৯৫৯, রাশিয়ার উরাল পলিটেকনিক কলেজের দশজন বিদ্যার্থী ঠিক করে কোথাও ভ্রমনে যাবে। তারা ওরাল পর্বতে অভিযান করবে ঠিক করে। ২৫০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত ওরাল পর্বত এশিয়াকে ইউরোপ থেকে আলাদা করে। এই পুরো দলের নেতা ছিল ইগর ডিয়াটলোভ নামে ২৩ বছর বয়সী যুবক যে নিজেকে পর্বতারোহনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ বলে দাবি করতো। রাশিয়ার ভয়ানক ঠান্ডায় সে এর আগেও বহুবার পর্বতারোহন করেছিল যার কারনে সবাই তাকে ভরসা করতো। দলের বাকী সদস্যরাও পর্বতারোহনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ছিল তারা গ্রেড ২ বিভাগের ছিল। এই অভিযান সম্পন্ন হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার তাদের গ্রেড ৩ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করতো যা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে সবচেয়ে অভিজ্ঞ শ্রেনীর সম্মান বলা হত। ৩০০ কিলোমিটার পর্বতারোহন করলে তাকে গ্রেড ৩ শ্রেনীর সম্মান দেওয়া হত। প্রথমে দশজন সদস্যের একটি দল অভিযানে যাবে ঠিক করেছিল যাতে আটজন পুরুষ ও দুই জন মহিলা ছিল কিন্ত শারীরিক সমস্যার কারনে পরে একজন না যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৫৯ সালের ৮ জানুয়ারি সেভারডলোভস্ক শহরের কর্তৃপক্ষ এই দলকে উরাল পর্বত অভিযানের ছাড়পত্র দেয়। এই দলের লক্ষ্য ছিল উত্তর উরাল পর্বতের অন্তর্গত ওটোরটেন পর্বতে অভিযান করা। পুরো তিন সপ্তাহ লাগবে এই পুরো অভিযান সম্পন্ন হতে, এরকমই ঠিক ছিল। ২৫ জানুয়ারি সেই দলটি ট্রেনে করে ইভদিলে এসে পৌঁছায়। এখান থেকে গাড়িতে করে ভিজহাই যায় তারা। ওটোরটেন পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ভিজহাই শেষ জনপদ। ভিজহাই এর পরবর্তী এলাকাকে রাশিয়াতে মৃত্যু উপত্যকা বলা হত কারন এরপরে আর কোন জনবসতি নেই৷ মাঝে মাঝে কিছু যাযাবর মানুষ থাকে এখানে, যাদের সাথে সভ্য সমাজের কোন সম্পর্ক ছিলনা। ২৭ জানুয়ারি সকালে তারা অভিযান শুরু করে কিন্তু ২৮ জানুয়ারি ইওরি ইওডিন নামে একজন সদস্য শারীরিক সমস্যার কারনে ভিজহাইএ ফিরে যায়। ৩১ জানুয়ারি দলটি ওটোরটেন পর্বতের একদম নীচে একটি জঙ্গলে এসে উপস্থিত হয়, এখান থেকেই পর্বতে ওঠার অভিযান শুরু হয়। পরের দিন তারা অভিযান শুরু করে কিন্তু তীব্র তুষার ঝড় ও খারাপ আবহওয়ার কারনে তারা পথ হারিয়ে ফেলে এবং পর্বতের অন্যপ্রান্ত খোলাত শাখহালের দিকে চলে যায় খানিকটা। রাশিয়ান ভাষায় খোলাত শখহালের অর্থ মৃত পর্বত। যখন তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে ততক্ষনে তারা অন্তত দেড় কিলোমিটার এগিয়ে চলে এসেছিল। সেখানেই রাত্রিবাস করবে ঠিক করে। ইগর ডিয়াটলোভ কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এসেছিল পুরো তিন সপ্তাহের মধ্যেই মিশন শেষ হবে এবং তারা পর্বত থেকে ভিজহাই এ ফিরে এসে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে টেলিগ্রাম করবে। কিন্ত তিন সপ্তাহের বেশী অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরও কোন টেলিগ্রাম আসেনি। বাধ্য হয়ে সমস্ত সদস্যর বাড়ির লোকজন ২০ ফেব্রুয়ারী পুলিশকে জানায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে উদ্ধারকার্য শুরু করে। ২৬ ফেব্রুয়ারী একটি হেলিকপ্টার খোলাত শাখায়েলে সেই দলটির তাঁবু খুজে পায়। তাঁবুটি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত ছিল এবং বরফে প্রায় ঢেকেছিল। তাঁবুটা ভিতর থেকে কেউ যেন কেটে দিয়েছিল। তাঁবুতে নয় জোড়া জুতো এবং সেই দলটির ব্যাবহারযোগ্য সব জিনিস রাখা ছিল। অনুসন্ধান কারী দল এটা দেখে অবাক হয়ে যায় যে এই তীব্র ঠান্ডায় জুতো গুলো রাখা কেন? যার অর্থ সেই দলের সদস্যরা খালি পড়ে অথবা মোজা পড়ে অভিযানে গেছে যা এই তীব্র ঠান্ডায় অসম্ভব। আরও অদ্ভুত ব্যাপার দেখা যায় যে সেই দলটির পায়ের ছাপ ক্রমশ নীচের দিকে জঙ্গলের দিকে গেছে অর্থাৎ তারা পর্বতারোহন না করে কোনও অজানা কারনে যেন জঙ্গলের দিকে গেছে। মোটামুটি পাঁচশো মিটার পর তাদের পায়ের ছাপ বরফে ঢাকা পড়ে গেছে। উরাল পর্বতে মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কোন সুস্থ মানুষ খালি পায়ে যাবেনা, এর অর্থ একটাই যে এমন কিছু হয়েছিল যে সেই দলটি তাঁবু ছেড়ে জুতো পড়বারও সময় পায়নি দৌড়ে নীচে নেমে গেছে। উদ্ধারকারী দল যখন পায়ের ছাপ অনুসরন করে জঙ্গলের কাছে পৌঁছায় তারা দেখে দুটো প্রায় নগ্ন মৃতদেহ পড়ে আছে। এই দুজন ওই পর্বতারোহী দলেরই সদস্য ছিল। ওই দুই ব্যাক্তির পা এবং হাত জ্বলে গিয়েছিল এবং একজনের মুখে তারই একটি কাটা আঙুল ছিল। তাদের শরীরে পোষাক গেল কোথায় এটাও অবাক করার মত বিষয়। এরপর তিনমাস ধরে অনুসন্ধান চালানোর পর বাকী সদস্যদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রথম পাঁচজনের মৃতদেহ পাবার পর উদ্ধারকারী দলের মনে হয়েছিল এরা বোধহয় হাইোথার্মিয়ার কারনে মারা গেছে কারন অতিরিক্ত ঠান্ডায় হাইপোথার্মিয়া হয় মানুষের। কিন্তু শেষ চারজনের মৃতদেহ পাবার পর এই ধারনা বদলাতে বাধ্য হয় সবাই কারন শেষ চারজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মাথার খুলি ভেঙে গিয়েছিল, শরীরের ভিতর হাড় ভেঙে গিয়েছিল। কারও দুটি চোখই ছিলনা, কারও জিভ, ভ্রু, ঠোঁটের অংশ কিছুই ছিলনা। তাদের শীরর এমনভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল দেখে মনে হচ্ছিল কোন বড় গাড়ি দুর্ঘটনা হয়োছে। তাদের পোষাক পর্যন্ত অদ্ভুত রকমের হয়ে গিয়েছিল। যদি ঠান্ডার কারনেই তারা মারা গিয়ে থাকে তাহলে তাদের অনেকের শরীরে পোষাক নেই কেন, শরীরে এত আঘাত কেন!! এসবই ভাবছিল উদ্ধারকারী দল। সোভিয়েত ইউনিয়ন পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রথমে সন্দেহ করা হয় স্থানীয় মানসি উপজাতির যাযাবর মানুষেররা বোধহয় তাদের হত্যা করেছে কিন্তু মানসিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা নির্দোষ প্রমানিত হয়। মে মাসে এই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় বলা হয় প্রাকৃতিক কারনে তাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের তদন্ত ফাইল গোপন জায়গায় রাখা হয়। রহস্যময় ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু গুজব সবসময় ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও তাই হয়। একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে ওটোরটেন পর্বতে থাকা বিগ ফুট বা ইয়েতি এদের হত্যা করেছে। কিন্তু এই সম্ভবনা বাতিল করে দেওয়া হয় কারন যদি ইয়েতিই এই কাজ করত তাহলে তার পায়ের ছাপ পাওয়া যেত কিন্তু এখানে শুধুমাত্র ওই নয়জনেরই পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। আরও একটি খবর প্রচলিত হয়যে এদের এলিয়েন হত্যা করেছে কারন সেসময় আকাশে উজ্জ্বল আলো দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এই সম্ভবনাও বাতিল হয়ে যায় কারন আকাশে যে উজ্জ্বল আলোর কথা বলা হচ্ছিল তা আসে মেরুজ্যোতি বা আরোরা যা উত্তর মেরু সহ এই অঞ্চলে দেখা যায়। সেসময় আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল, দুই দেশই অনেক গোপন প্রজেক্টে কাজ করছিল। এখানে নয় ব্যাক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নেরই কোন গোপন প্রজেক্টের শিকার হয়েছে বলেও কথা ওঠে। কেউ কেউ দাবি করে এই নয় ব্যাক্তি তেজস্ক্রিয়তা ও প্যারাসুট মাইনের শিকার হয়েছে। কিন্তু এই সব তথ্যও বাতিল হয়ে যায় কারন তেজস্ক্রিয়তায় গোটা শরীর জ্বলে যাওয়ার কথা। সেসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন প্যারাসুটের করে বোম্ব ফেলে পরীক্ষা করছিলো। কিন্তু যদি মাইন ফেটে থাকে তাহলে মৃতদেহ টুকরো টুকরো হয়ে যাবার কথা। কিন্তু মৃতদেহ গুলো মোটামুটি অক্ষতই ছিল, শুধু শরীরে পোষাক ছিলনা তেমন। তাদের শরীরে বাইরে থেকে আঘাতের কোন চিহ্ন ছিলনা বরং শরীরের ভিতর অনেক হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে এই ঘটনার বন্ধ হয়ে যাওয়া ফাইল পুনরায় খোলা হয় এবং আবার তদন্ত শুরু হয়। তাদের শরীরে পোষাক না থাকার কারন হিসাবে বলা হয় অতিরিক্ত ঠান্ডার কারনে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় এর কারন প্যারাডক্সিয়াল আনড্রেসিং রোগ। যার কারনে কোন মানুষ তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও প্রচুর গরম অনুভব করে এবং সে তার পোষাক খুলে ফেলে দেয়।
২০২০ সালে রাশিয়ার সরকার জানায় ডিয়াটলোভ পাসের ঘটনা ঘটে তুষার ধসের কারনে। কিন্তু রাশিয়ান সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনেক দেশই বাতিল করে দিয়েছে কারন তুষার ধ্বসে কারও মৃত্যু হলে সে পোষাক খোলবার সময় পাবে না এবং তুষার ধ্বস হলে মৃতদেহ গুলো বরফের তলায় থাকতো এবং তাদের তাঁবুও বরফে ঢাকা থাকত। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে উদ্ধারকারী দল তাঁবু ও মৃতদেহ খুজে পেয়েছিল সেখানে হালকা বরফ ছিল শুধুমাত্র। তুষারধ্বসে আসা বরফ দুই সপ্তাহে গলে যাবে না!! সবথেকে বড় কথা ১৯৫৯ সালের আগে থেকে এখনও অবধি ওই অঞ্চলে তুষারধ্বসের কোনও প্রমান পাওয়া যায় নি। ডিয়াটলোভ পাসে আসলে কী ঘটেছিল তা হয়ত রহস্যময় ঘটনা হিসাবেই থেকে যাবে।
Dilip Ghosh: আজ বিয়ের পিড়িতে দিলীপ ঘোষ! কিভাবে ফুটল বিয়ের ফুল?
‘Bangladesh Should Be Broken Apart,’ Says Tripura’s ‘King’ in Response to Yunus’ Comments
পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানের বলিউড প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাল মহারাষ্ট্র!
Taslima Nasrin: ‘Islam is not my religion…’—A Definitive Statement on Eid
Heatwave Alert: West Bengal, 16 Other States Brace for Extended Heatwave Days from April to June
Former Pakistani Prime Minister Imran Khan Nominated for the Nobel Peace Prize
কল্যাণীতে দুঃসাহসিক ছিনতাই! কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা লুঠ
Durga Puja 2024: অভিনব উদ্যোগ! মহালয়ার দিন অঙ্কন প্রতিযোগিতা করল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাব
কাঁচরাপাড়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মাল চুরি, মুল পান্ডা সুমন রায় গ্রেফতার
Durga Puja 2024: খুঁটি পুজো দিয়ে শুরু হল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের এ বছরের পুজো