দেশের মাটিতে গড়ে উঠছিল একের পর এক গুপ্ত সমিতি এবং বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাদের কার্যকলাপও। দিন দিন সক্রিয় হয়ে উঠছিল গুপ্ত সমিতি গুলি। গুপ্ত সমিতি গুলির সক্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বোমা। বোমা তৈরির শিক্ষা সশস্ত্র আন্দোলনকে একটি অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল। এরপর থেকেই ইতিহাসের পাতায় উঠে এসেছে একের পর এক বোমা মামলা, বিশেষ করে আলিপুর বোমা মামলা, মুজফ্ফারপুর বোমা মামলা ইত্যাদি। যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই বোমা তৈরি করা এবং বিপ্লবীদের সেই বোমা তৈরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিপ্লবীরা কলকাতা শহরের বেশ কিছু গুপ্ত আখড়াকে বানিয়ে ফেলেছিলেন বোমা তৈরির কারখানা এবং সেই বোমা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল সমগ্র বাংলা জুড়ে।
আরো পড়ুন- বটুকেশ্বর দত্ত! দেশের জন্য মাত্র ১৮ বছর বয়সে কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতে জীবন অতিবাহিত করেছিলেন
বিপ্লবীদের কাছ থেকে বোমা তৈরি প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন অনেকে। সব মিলিয়ে এই বাংলার মাটি পরিণত হয়েছিল বোমা কারখানার ক্ষেত্র ভূমি হিসাবে। দক্ষিণেশ্বরে এইরকমই একটি বোমা তৈরীর আখড়া আবিষ্কারকে কেন্দ্র করে ইতিহাসের পাতায় উঠে এসেছিল আরেকটি মামলা যা দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলা নামে খ্যাত।
ব্রিটিশ পুলিশ ১৯২৫ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধান পান দক্ষিণেশ্বর এবং শোভাবাজারের বিপ্লবীদের দুটি গুপ্ত আস্তানার। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মোট এগারোজন বিপ্লবীকে। এই এগারোজন বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা হয়েছিল মামলা যা দক্ষিণেশ্বর বোমা নামে পরিচিত। ব্রিটিশ সরকারের এই মামলায় অভিযুক্ত করা বিপ্লবীদের তালিকায় নাম ছিল হরিনারায়ণ চন্দ্র, বীরেন ব্যানার্জি, নিখিলবন্ধু ব্যানার্জি, রাজেন লাহিড়ি, ধ্রুবেশ চ্যাটার্জি, রাখাল চন্দ্র দে, অনন্তহরি মিত্র, দেবীপ্রসাদ চ্যাটার্জি, শিবরাম চ্যাটার্জি, প্রমোদরঞ্জন চৌধুরি এবং অনন্ত চক্রবর্তী প্রমুখ বিপ্লবী। দীর্ঘ দুমাস ধরে চলেছিল এই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। অবশেষে ৯ জানুয়ারি ১৯২৬ সালে এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়। এই মামলায় বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে লড়েছিলেন এ.সি মুখার্জি, হর্ষনাথ ব্যানার্জি, সি.সি বিশ্বাস, এ.কে মুখার্জি এবং হেমন্ত কুমার রায়চৌধুরি ও এনাদের বিপক্ষে দাড়িয়েছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল বি.এল মিত্র, পাবলিক প্রসিকিউটর এন.এন ব্যানার্জি এবং গুণেন সেন।
অগ্নিযুগের বাংলায় দিকে দিকে দেখা দিয়েছিল বোমা বিস্ফোরণের জোয়ার। বিপ্লবীদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল বোমা তৈরির কৌশল। এই শিক্ষায় পরবর্তীকালে জন্ম দিয়েছিল একের পর এক ব্রিটিশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের। এই বাংলার মাটি পরিণত হয়েছিল বোমা কারখানার ক্ষেত্র ভূমি হিসাবে। বিপ্লবীদের গুপ্ত আখড়ায় গড়ে উঠেছিল বোমা তৈরির কারখানা। যার ফলে তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশদের কাছে বাংলার মাটি যেন ল্যাণ্ড-মাইনে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। বোমা তৈরি কারখানার পাশাপাশি দিকে দিকে গড়ে উঠছিল বহু গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি। এইরকমই নতুন একটি গুপ্ত বিপ্লবী দল গড়ে উঠেছিল যাদের সাথে যোগাযোগ ছিল মূলত হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মি এবং অনুশীলন সমিতির ও সবার উর্ধ্বে ছিল একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, যেখানে যোগ দিতেন বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধি এবং স্থানীয় বিপ্লবীরা। এক গুপ্তচর মারফত পুলিশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ১৯২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ এই দলের প্রথম আলোচনাসভা শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে বসার খবর।
১৯২৫ সালে সংগঠিত হওয়া নয় দশজনের এই আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে হাওড়া জেলার দায়িত্ব দেওয়া হবে বীরেন ব্যানার্জিকে এবং হুগলি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হবে চৈতন্য দেব চ্যাটার্জিকে এবং তাঁদের সকলের একটি করে ছদ্মনাম দেওয়া হয়, যেমন – বীরেন ব্যানার্জির ছদ্মনাম দেওয়া হয়েছিল অশোক এবং হরিনারায়ণ চন্দ্রের ছদ্মনাম দেওয়া হয়েছিল দাদা যিনি বোমা তৈরির দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি ঠিক করা হয়েছিল যে সমগ্র বাংলায় বোমা সরবরাহ করা এবং সমস্ত জেলা-শাখাগুলি থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে পাঠানো হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় কমিটি অস্ত্র, বারুদ, গুলি ইত্যাদি এই সমস্ত জেলা-শাখাগুলিকে সরবরাহ করবে।
১৯২৪ সালে পুলিশের গ্রেপ্তারের থেকে নিজেদের বাঁচাতে এই দলের সালকিয়া শাখার বিপিন গাঙ্গুলি এবং নগেন সেন আশ্রয় নিয়েছিলেন ডোমজুড়ের বিজন ব্যানার্জির বাড়িতে। এই আস্তানার সন্ধান পুলিশ পেয়ে যাওয়ায় সেটিকে বদল করে কলকাতার ৪ নং শোভাবাজার স্ট্রিটের একটি বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন বিজন ব্যানার্জি, বীরেন ব্যানার্জি আর সুধাংশু চৌধুরি এবং তাঁদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন হরিনারায়ণ চন্দ্র, অনন্তহরি মিত্র এবং প্রমোদ চৌধুরি।
১৯২৫ সালে বরানগরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেছিলেন বীরেন ব্যানার্জি সহ বেশ কিছু বিপ্লবী। কিন্তু সেই আস্তানার খবরও পেয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ। যার ফলে পুনরায় বদলে ফেলতে হয়েছিল তাদের আস্তানা। অবশেষে দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলের বাচস্পতিপাড়ায় আরেকটি নতুন আস্তানা গড়ে তুলেছিলেন বিপ্লবীরা। সেই সময় বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল দক্ষিণেশ্বর এবং শোভাবাজার এই দুটি অঞ্চলের বাড়ি দুটি। কলকাতার এই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন বিপ্লবী পাঁচু দাঁ, বীরেন ব্যানার্জি, চৈতন্যদেব চ্যাটার্জি, অনন্তহরি মিত্র এবং নিখিল ব্যানার্জি। এই কমিটির সাথে সমস্ত চিঠিপত্র আদানপ্রদান করার দায়িত্ব ছিল সালকিয়া শাখার সন্তোষ গাঙ্গুলির উপর এবং অর্থনৈতিক দিকটি দেখভাল করতেন বঙ্কিম মুখার্জি। তবে পুলিশ কীভাবে দক্ষিণেশ্বরের এই গুপ্ত আস্তানা উদ্ধার করেছিল সেই নিয়ে নানা মতামত রয়েছে।
খুব শীঘ্রই দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত করা হবে
Dilip Ghosh: আজ বিয়ের পিড়িতে দিলীপ ঘোষ! কিভাবে ফুটল বিয়ের ফুল?
‘Bangladesh Should Be Broken Apart,’ Says Tripura’s ‘King’ in Response to Yunus’ Comments
পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানের বলিউড প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাল মহারাষ্ট্র!
Taslima Nasrin: ‘Islam is not my religion…’—A Definitive Statement on Eid
Heatwave Alert: West Bengal, 16 Other States Brace for Extended Heatwave Days from April to June
Former Pakistani Prime Minister Imran Khan Nominated for the Nobel Peace Prize
কল্যাণীতে দুঃসাহসিক ছিনতাই! কাঁচরাপাড়ার ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা লুঠ
Durga Puja 2024: অভিনব উদ্যোগ! মহালয়ার দিন অঙ্কন প্রতিযোগিতা করল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাব
কাঁচরাপাড়ায় ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মাল চুরি, মুল পান্ডা সুমন রায় গ্রেফতার
Durga Puja 2024: খুঁটি পুজো দিয়ে শুরু হল কাঁচরাপাড়া আমরা সবাই ক্লাবের এ বছরের পুজো