টাকিলার পূর্বপুরুষ! প্রাচীনকালে ব্যবহৃত নয়টি অদ্ভুত পানীয় - Bangla Hunt

টাকিলার পূর্বপুরুষ! প্রাচীনকালে ব্যবহৃত নয়টি অদ্ভুত পানীয়

By Bangla Hunt Desk - May 29, 2023

সভ্যতা আসার সাথে সাথে নেশা নামক জিনিসটার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছিল মানুষ। নেশা বললে যে শুধুমাত্র পানিও নেশা তাই নয়, বিভিন্ন খেলাধুলা বা কোন কর্মের প্রতি বেশি আগ্রহকেও‌ নেশা বলা হয়। কিন্তু নেশার নাম উল্লেখ হলেই পানিয়র কথায় সকলের মাথায় আসে। বর্তমানে কত ধরনের কত নামের পানীয় আছে যার নেশার দ্রব্য হিসাবে বিক্রি হয়। তবে প্রাচীনকালেও কিছু কম ছিল না এই নেশার দ্রব্য। এই প্রতিবেদনে প্রাচীনকালে ব্যবহৃত নয়টি নেশার পানীয়র বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

I) পুলক :- দুধের মতো ধবধবে সাদা এই পানিওটি মেক্সিকোর ইতিহাসে জনপ্রিয় অ্যালকোহল হিসেবে পরিচিত। পুলক নামের এই পানীয়টি টাকিলার পূর্বপুরুষ হিসেবে কাজ করে এবং এটা ম্যাগুয়ের রস পাতানোর গাজন হিসাবে তৈরি করা হয় যেটি বর্তমানে অ্যাগেভ নামে পরিচিত।

এই পানিয়র স্বাদ অনেকটা টক খামেরির মতো এবং এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক রয়েছে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভালো। এই পানির বয়স আনুমানিক ২ হাজার বছরেরও বেশি। এটা শুধুমাত্র অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ই নয়, একে ঘিরে রয়েছে এক গুচ্ছ পৌরাণিক কাহিনী। পৌরাণিক কথা অনুযায়ী হারিয়ে যাওয়া ঐশ্বরিক স্বর্গে তৈরি করা হয়েছিল এই পানীয় এবং এর সঙ্গে ম্যাগুয়ের দেবী ‘মায়াহুয়েল’-এর যোগসুত্র রয়েছে। উদ্ভিদের মাধ্যমে অ্যাগুয়ামিল সংগ্রহ করা মূলত তার রক্ত বলে মনে করা হতো।

আরো পড়ুন- পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে বিপত্তি! ভোগের গরম ডাল পড়ে গুরুতর জখম হলেন ২ জন

II)সোমা :- প্রাচীন ভারতের বৈদিক সংস্কৃতিতে বহুল ব্যবহৃত হতো সোমা নামের পানীয়টি। এই তরল পানীয়টির পেছনেও রয়েছে যথেষ্ট কাহিনী। পুরান মতে উল্লেখ করা রয়েছে যে সোমা ছিলেন একজন দেবতা। যাকে চাঁদের সঙ্গে বাধা এবং নিরাময়কারী দেবতা হিসাবে মনে করা হতো। গাছের ডালের তরল নিংড়ে ফেটে দুধ এবং জলের মিশ্রণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল ঋগ্বেদে সোমা। বৈদিক অর্থ অনুযায়ী সোমা কথার মানে হলো নির্যাস, পাতন এবং ছিটিয়ে দেওয়া। সোমা পানীয়টি পান করলে যে হ্যালুসিনেশন হতো সেটি প্রমাণ সাপেক্ষ।

III) শেদেহ:- প্রাচীন মিশরের রহস্যময় পানীয় শেদেহ আজও চর্চিত। কারণ পূর্বে মনে করা হতো এই পানীয়টি তৈরি করা হয়েছিল ডালিম ফল থেকে কিন্তু বর্তমানে নানান তর্ক বিতর্কের পর মনে করা হয় এটি লাল আঙ্গুর থেকে তৈরি করা হয়েছে। মিশরের ফারাওদের অতি পছন্দের ছিল এই তরলটি।‌ প্রাচীন মিশরের রাজা তুতেনখামেনের মৃত্যুর পর তাকে যে সমাধি দেওয়া হয়েছিল সেখানেও এই তরলের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল।

IV) কনডিটাম:- রোমানে মসাদার ওয়াইন হিসেবে পরিচিত ছিল কনডিটাম। এই শব্দের অর্থ করলে এর মানে দাঁড়ায় যে মসলাযুক্ত ও মধু দ্বারা তৈরি একটি পানীয়। রোমানে এই পানীয় যতটা জনপ্রিয় ছিল তার থেকে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল বাইজেনটাইন যুগ ও তারপরে। এই পানীয়র জনপ্রিয়তার কারণ ছিল এর ভেতরে দেওয়া মশলা। মূলত এখানে মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হতো, ভেজানো খেজুর, খেজুরের বীজ, জাফরান, লবঙ্গ, গোলমরিচ সহ একাধিক দ্রব্য। ভ্রমণকারী ও পর্যটকদের জন্য এই তরল ছিল অতি জনপ্রিয়।

V)ফ্যালারিয়ান ওয়াইন :- বর্তমানে মাউন্ট ম্যাসিকো থেকে পাওয়া আঙ্গুর থেকে তৈরি করা হতো ফ্যালারিয়ান ওয়াইন। এই সাদা ওয়াইন অতি জনপ্রিয় ছিল রোমানিদের কাছে। এই ওয়াইন ছিল মূলত তিন ধরনের শুষ্ক, মিষ্টি এবং হালকা। আঙ্গুর তৈরি সিজন ছাড়া এই ওয়াইন তৈরি করা যেত কারণ রোমের বাসিন্দারা আঙ্গুর সংগ্রহ করে সেগুলো শুকিয়ে রাখত। কারণ তারা মনে করত আমিও শুকিয়ে গেলে তার স্বাদ পানীয়তে বহুগুণ বেড়ে যাবে। এই পানীয় এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে রোমের সম্রাট জুলিয়াস সিজার নিজের আনন্দ উদযাপন করার সময় এই ওয়াইন ব্যবহার করতেন। এছাড়াও বহু মানুষ নকল ওয়াইন তৈরি করে ফ্যালারিয়ান ওয়াইন বলে চালিয়ে দিতো।

VI)মিশরীয় বিয়ার :- আনুমানিক ৫০০০ বছর পূর্বে মিশরীয় শ্রমিকরা তাদের নিজেদের জন্য এক ধরনের বিয়ার তৈরি করেছিলেন। খামির দিয়ে বার্লি গাজন করে সেটা ছেকে নিলেই তৈরি হয়ে যেত বিয়ার। কিন্তু কালের ক্রমে যখন মিশরের আধিপত্য চলে গিয়েছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের হাতে, তখন বিশেষ কিছু ধর্মের কারণে তারা এই বিয়ার প্রচলনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। সে কারণে কিছুটা সময়ের জন্য বিয়ার প্রচলন বন্ধ হলেও আজ পর্যন্ত এই বিয়ার জনপ্রিয় রয়েছে মিশরে। বর্তমানে যদি মিশরে নজর দেওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে যে, ১০০ ভাগের মধ্যে ৫৪ শতাংশ মিশরীয় বিয়ারের প্রচলন রয়েছে।

VII)কাইকেয়ন :- প্রাচীন গ্রীসে তৈরি হয়েছিল কাইকেয়ন নামক পানীয়টি। এই তরল ওয়াইন কি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলেও বিশেষ করে অনুমান করেন যে পনির, বার্লি ও ওয়াইনের অদ্ভুত এক মিশ্রণ ছিল এই তরল। এই সাইকেডেলিক পানীয়টি সে সময় জাদুকর পানীয় হিসেবে পরিচিত ছিল। এছাড়াও এই ওয়াইনের সঙ্গে কিছু ধর্মীয় বাণী যুক্ত ছিল। মনে করা হতো এই ওয়াইন পান করার মাধ্যমে দেবী ডিমিটার এবং এলিউসিসের কৃপা দৃষ্টি বর্ষণ হবে। সেই কারণে কোন অনুষ্ঠান হলে সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী এবং অনুষ্ঠানের পালনকারীরা এই ওয়াইন পান করতেন দেবীর দর্শন পাবার আশায়।

VIII)রেটসিনা :- সাদা ও লাল ওয়াইন রেড সিনা প্রচলিত ছিল গ্রীকে। তবে যারা এই ওয়াইন খেয়েছেন তারা মনে করতেন এর টার্পেনটাইন স্বাদ ছিল মূলত অ্যালকোহলে উপস্থিতও ফাইন এবং রজনের কারণে। বহু আগে তৈরি হয়েছিল তখন পাইন রেজিনে এটিকে সংগ্রহ করে রাখা হতো। কিন্তু রোমানীয়রা পরবর্তীকালে ৩য় শতাব্দীতে এই ওয়াইনকে বোতলে সংরক্ষণ করতেন। রেটসিনা ওয়াইনের বয়স আজ থেকে আনুমানিক ৩ কিংবা ৪ হাজার বছর হলেও আজও রোমানে এই ওয়াইনের জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি।

IX)পসকা :- প্রাচীন রোমের সবচেয়ে সহজলভ্য পানীয় ছিল পসকা। জল, ভিনেগার, লবন ও কিছু ভেষজের মিশ্রণে পানীয় তৈরি করা হতো এবং সেটি তৃষ্ণা নিবরনের জন্য ছিল খুবই উপযুক্ত। সেই সময়কার যুগে এই পানীয় উচ্চ ব্যক্তিরা তুচ্ছ মনে করলেও দাস ও শ্রমিকদের কাছে ছিল তৃষ্ণা নিবারণের অন্য উপকরণ। তখন পানীয়টি বানানো খুব সহজ হলেও আজ তার উৎস অজানা। তবে মনে করা হয় এই পানীয়র নাম পসকা দেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল এটির ল্যাটিন শব্দ পোটর যার অর্থ পান করা বা গ্রীক শব্দ ইপোক্সিস যার অর্থ তৃষ্ণা থেকে উদ্ভুত।

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


প্রাসঙ্গিক খবর