Bangla Hunt Digital

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো

রাহুল চক্রবর্তীঃ আমি জীবনে প্রথমবারের জন্য আজ চন্দননগরের ঠাকুর দেখতে গেছিলাম। কল্যাণী তে থাকি, এত কাছেই এত বড় উৎসব তাও কোনবার‌ই যাওয়া হয়ে ওঠেনা। স্কুটি নিয়ে ঘুরেছি গোটা শহরটা। চোখধাঁধানো মায়ের মূর্তি, ডাকের সাজের নিপুণ কারুকার্য আর চমকৎকার সব প্যান্ডেল এক কথায় অভূতপূর্ব। দিনের বেলায় যাওয়ায় আলোর শহরের আলোর খেলা যদিও দেখতে পাইনি। সত্যি বলতে প্রথমবার এই উৎসবের স্বাদ পেয়ে এখন‌ও একটা ঘোরের মধ্যে আছি এবং বলাই বাহুল্য যে আগামী দিনে কোনবছর‌ই যে আর মিস করতে চাইবো না, সেটাও সত্যি।

এবার কয়েকটা বিষয় নিয়ে না বললেই নয় তাই বলতেই হচ্ছে। আমার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা এই সুন্দর ঐতিহ্যশালী শহরের সকলকে। এই উৎসব আর শহরের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেল এক ঝটকায়।

১. এত বড় বড় পুজো এত মানুষ সারা বাংলা থেকে আসছেন, অথচ কোন রাস্তা ব্লক নেই, ঘুরিয়ে দেওয়া নেই। পুলিশ অসম্ভব সক্রিয়।

২. কোন পুজোর কৃত্রিম ভীড় তৈরীর প্রক্রিয়া নেই। আমাদের এখানকার মত দরজায় তিনটি পর্দা লাগিয়ে, রাস্তায় বাঁশ আটকে মানুষকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে বিভ্রান্ত করবার প্রচেষ্টা নেই। সবাই ঠাকুর দেখছে, ছবি তুলছে কেউ বলেও না, ‘তাড়াতাড়ি করুন’, এগিয়ে চলুন ইত্যাদি।

৩. এত কাছাকাছি এত বড়-বড় পুজো কিন্তু মাইকের চোটে কান ঝালাপালা অবস্থা নয়। ট্রাফিক স্লো কিন্তু জানজট নেই। এবং প্রাচীন শহর হ‌ওয়ায় রাস্তা তেমন চ‌ওড়া নয়। যথেষ্ট মানুষের সমাগম তাও রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া, ঘুরিয়ে দেওয়া এসব করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার কোনরকম প্রয়াস নেই।

৪. চ্যাংড়া ছেলের দলের মাতব্বরী, চ্যাংড়ামি, অসভ্যের মতো বাইক চালানো নেই। গোটা পঞ্চাশেক পুজো ঘুরলাম কোথাও কর্মকর্তাদের হেকুপণা, স্বেচ্ছাসেবকদের মাতব্বরী চোখে পড়েনি। সর্বোপরি কোন পুজোর রাজনীতিকরণ নেই।

৫. গোটা শহরের সব ধরণের মানুষের কাছ থেকে অমায়িক ব্যাবহার পেয়েছি। টোটো দাদা থেকে পাড়ার মোড়ের বয়স্ক কাকু যার কাছে যতবার ঠিকানা বা বড় পুজোর খোঁজ চেয়েছি হাসি মুখে সময় নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এমন ভাবে কথা বলেছেন যেন বাড়ীতে কুটুম এসেছে পুজো দেখতে। সত্যিই আপ্লুত।

৬. আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হলো, যত বড় পুজোই হোক বা ছোট। থিম হোক কি সাবেকি প্যান্ডেল, প্রতিমা বা পুজোর আচারের মধ্যে কোন থিমের প্রবেশ নেই। ঐতিহ্যশালী মায়ের রূপ, দূরন্ত কারুকার্য করা ডাকের সাজে মায়ের মূর্তিগুলি সাবেকি সনাতনী ঐতিহ্য রক্ষা করছে।

সব মিলিয়ে আমি এমন উৎসবে শামিল হতে পেরে আপ্লুত, আনন্দিত। এ যেন এক প্রাণের উৎসব। আগামী বছরের অপেক্ষায় র‌ইলাম।

Related Post