কে ছিলেন এই বুড়িমা! বুড়িমা চকলেট বোম এর অজানা গল্প জানুন - Bangla Hunt

কে ছিলেন এই বুড়িমা! বুড়িমা চকলেট বোম এর অজানা গল্প জানুন

By Bangla Hunt Desk - October 26, 2021

ধার করা দশটা একশো টাকার নোট। তাই দিয়ে নানা রকম বাজি কিনে দোকান সাজিয়ে বসলেন। জমল বিক্রিবাটা। তিন দিনের মাথায় পুলিশ এসে হাজির। বাজি বিক্রির লাইসেন্স আছে? বাজি বিক্রি করতে লাইসেন্স লাগে, জানা ছিল না। বললেন, “এ বারের মতো ছেড়ে দিন।” কাজ হল না। বাজি বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ, গুঁড়িয়ে দিল দোকান। জেদ চেপে গেল। বাজির ব্যবসাই করবেন তিনি। করলেনও। ধীরে ধীরে বাংলার বাজি ব্যবসায় এক নম্বর জায়গাটি পাকা করে ফেললেন অন্নপূর্ণা দেবী। সবার ‘বুড়িমা’।

আরো পড়ুন- রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের লিঙ্ক

সাল ১৯৪৮। সদ্য স্বাধীন হয়েছে ভারত। দেশভাগের যন্ত্রণা কাঁটার মত বিঁধে আছে বহু মানুষের মনে। সেই যন্ত্রণা নিয়েই অন্নপূর্ণা পাড়ি দিলেন গঙ্গারামপুর। স্বামী হারা অন্নপূর্ণার চোখে তখন দুই ছেলে মেয়েকে বড় করে তোলার স্বপ্ন। বিড়ি বাঁধা দিয়ে শুরু হল তাঁর জীবনের নতুন লড়াই। ইতিমধ্যে বেশ কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে বরানগরে চলে এলেন তিনি। বেলুড়ে নশো টাকায় কিনলেন একটি ছোট্ট দোকান।

গল্পের শুরু এখান থেকেই। ছেলেকে দোকানে বসিয়ে চষে ফেলেন উত্তরপাড়া, সালকিয়া, বড়বাজার। কী ব্যবসা করবেন? কিসে লাভ? সরস্বতীপুজোর আগে পিলখানার যোগেন্দ্র পালের কারখানা থেকে ঠেলাভর্তি করে প্রতিমা নিয়ে এলেন। বেলুড়ে কোথাও ঠাকুর তৈরি হত না, ছুটতে হত দূরে। হাতের কাছে প্রতিমা পেয়ে সবাই হামলে পড়ল। দোলের আগে রঙের পসরা নিয়ে বসলেন। সেটাও জমল।

এক দিন দোকানে এক ঝাঁক ছেলেমেয়ে হাজির। “বুড়িমা, লজেন্স দাও!” কী বলল ওরা? দোকানে রাখা আয়নাটা সামনে ধরলেন। চুলে পাক, শরীরে বয়সের ছাপ। আশ্চর্য, বুড়িমা নামটাও কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ল। অন্নপূর্ণা দেবী হয়ে গেলেন ‘বুড়িমা’।

কালীপুজো। বুড়িমার ইচ্ছে দোকানে বাজি তুলবেন। হাতে পয়সা নেই। ধারের টাকায় বাজি কিনলেন, তার পরই সেই ঘটনা। দোকান ভাঙল পুলিশ। এর ক’দিন পরেই এক দুপুরে ছেলেকে চমকে দিলেন, “এই দেখ বাজি বিক্রির লাইসেন্স। আর বাজি তৈরির অনুমতিপত্রও!”

লাইসেন্স তো হল। কিন্তু কে শেখাবে বাজি বানানো? বাঁকড়ায় দেখা আকবর আলির সঙ্গে। হাতে ধরে শেখালেন— কাকে বলে সোরা, ব্যাটরা, গন্ধক কী রকম দেখতে। প্রথম মরশুমেই বাজিমাত। সব বিক্রি হয়ে গেল। আকবরের ফর্মুলাতেই তৈরি হল ‘বুড়ীমার চকলেট বোম’।

বাজি-কারখানার জন্য তালবান্দা, ডানকুনি, শিবকালীতে জায়গা কিনলেন। ডানকুনিতে মাটি খুঁড়তে বেরল বিশাল শিবলিঙ্গ। চকলেট বোমের লোগো হল তা। কারখানার জন্য কিনলেও তালবান্দার জমি বিলিয়ে দিলেন গরিবদের। এক সময় যাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, তিনিই পঞ্চাশটি পরিবারকে বাড়ি বানিয়ে দিলেন। বলতেন, “ব্যবসাটা তুচ্ছ! এসেছি মানুষকে ভালবাসতে।”

১৬/১ পিয়ারীমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বিরাট বাড়ির সর্বত্র বুড়িমা। তাঁর শেষ দিনটা আজও চোখে ভাসে নাতি সুমন দাসের। লোকে ভর্তি বাড়ি, থমথমে। এরই মধ্যে বাইরে কারা ‘বুড়ীমার চকলেট বোম’ ফাটাচ্ছে। শোকের সময় চ্যাংড়ামো! উত্তর এল, ‘‘চ্যাংড়ামো নয়, জয়ধ্বনি। যে চকলেট বোম বানিয়ে গোটা বাজির বাজার জিতে নিয়েছেন, সেটা ফাটিয়েই বুড়িমাকে শ্রদ্ধা জানালাম!”

সব খবর পড়তে আমাদের WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হোনএখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


প্রাসঙ্গিক খবর